দুই সপ্তাহ আগে ক্যাপিটল ভবনে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবে পাঁচজন নিহতের পর প্রেসিডেন্টের অভিষেক নির্বিঘ্ন করতে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিনটি ওয়াশিংটনবাসীর জন্য নিয়ে আসে ভিন্ন সুর।
স্থানীয় সময় বুধবার সকাল ১১টা ৪৮ মিনিটে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে নেওয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
প্রেসিডেন্টের অভিষেক উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সোয়া ১২টা নাগাদ ওয়াশিংটনের রিগান ন্যাশনাল বিমানবন্দরে সব বাণিজ্যিক ফ্লাইট বন্ধ রাখে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিট্রেশন। এছাড়া পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সব ফ্লাইটও ওয়াশিংটনের আকাশের ৩০ মাইলের বাইরে রাখা হয়।
সকাল থেকে রাইফেল কাঁধে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের দেখা যায় ক্যাপিটল ভবন ঘিরে তৈরি করা নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে। শহরজুড়ে ছিল সশস্ত্র সৈন্যদের টহল।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ওয়াশিংটনের রাস্তাগুলো হয়ে ওঠে জনশূন্য।
তিনি রয়টার্সকে বলেন, “সত্যিকারে এটা দেখাটা খুবই কষ্টের, পুরো শহরই অচল হয়ে আছে।”
জো বাইডেনের অভিষেকের এই দিনকে অন্য কোনো দিনের সঙ্গে মেলাতে পারছেন না বিবিসির সাংবাদিক ক্যাটি কে।
তিনি বলেন, “নাইন-ইলেভেনে আমি ওয়াশিংটনে ছিলাম, ২০০১ সালে যখন এখানে হামলা হয়েছিল। কিন্তু আমি কখনও এই শহরকে এ রকম লকডাউনে দেখি নাই। রাস্তায় সামরিক যান, গলির কোণায় সশস্ত্র সৈন্যদের পাহারা।”
শান্তির প্রক্রিয়াকে নিরাপদ করতে যুদ্ধের অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি আমার শহরকে চিনছি না এবং এটা দেখা বেদনাদায়ক।”
তাদের উপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্টদের নাম ঘোষণা করা হয়। অন্যান্য সময় এই অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রেসিডেন্টরা উপস্থিত থাকলেও এবার ছিলেন না ডনাল্ড ট্রাম্প।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফাদার লিও ও’ডোনোভানের প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় শপথের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন লেডি গাগা।
প্রথমে শপথ নেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। এরপর পরিবেশনা নিয়ে আসেন জেনিফার লোপেজ।
শপথ নিয়ে উদ্বোধনী ভাষণে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন ৭৮ বছর বয়সী জো বাইডেন।
তিনি বলেন, “এটা আমেরিকার দিন। এটা গণতন্ত্রের দিন। ইতিহাস এবং আশার একটি দিন।
“আমরা আবারও গণতন্ত্রের মূল্য অনুধাবন করতে পেরেছি। গণতন্ত্র ভঙ্গুর এবং এই মুহূর্ত থেকে আমার বন্ধুরা, গণতন্ত্র সর্বত্র বিরাজমান। এখন থেকে পবিত্র এই ভূমিতে, যেখানে কয়েক দিন আগে ক্যাপিটলে তাণ্ডব হয়েছে যেখানে এক জাতি হিসেবে আমাদের আবার একত্রিত হতে হবে।”
বাইডেনের ভাষণ শেষে আমান্ডা গোরমানের কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে শেষ হয় অভিষেকের আনুষ্ঠানিকতা।