এমন অভিষেক আগে দেখেনি কেউ

লাখো দর্শকের অভিনন্দনে সিক্ত হয়ে যেখানে প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেক ঘটে, সেখানে এবার লাখ লাখ পতাকা সজ্জিত ন্যাশনাল মল আর নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা শহরে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন জো বাইডেন।  

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2021, 07:56 PM
Updated : 20 Jan 2021, 08:08 PM

দুই সপ্তাহ আগে ক্যাপিটল ভবনে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবে পাঁচজন নিহতের পর প্রেসিডেন্টের অভিষেক নির্বিঘ্ন করতে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিনটি ওয়াশিংটনবাসীর জন্য নিয়ে আসে ভিন্ন সুর।

স্থানীয় সময় বুধবার সকাল ১১টা ৪৮ মিনিটে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে নেওয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।    

প্রেসিডেন্টের অভিষেক সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলের সামনে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা। ছবি- রয়টার্স

২৫ হাজারের বেশি সৈন্যের সমাবেশ ঘটিয়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয় ওয়াশিংটন ডিসিতে। পাশের ভার্জিনিয়া স্টেটের সঙ্গে যাতায়াতের প্রবেশদ্বার হিসেবে থাকা সেতুগুলোর পাশাপাশি শহরতলীর মেট্রো স্টেশনগুলোও বন্ধ করে অনেকটা অবরুদ্ধ নগরীতে পরিণত করা হয় রাজধানীকে।

প্রেসিডেন্টের অভিষেক উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সোয়া ১২টা নাগাদ ওয়াশিংটনের রিগান ন্যাশনাল বিমানবন্দরে সব বাণিজ্যিক ফ্লাইট বন্ধ রাখে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিট্রেশন। এছাড়া পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সব ফ্লাইটও ওয়াশিংটনের আকাশের ৩০ মাইলের বাইরে রাখা হয়।

সকাল থেকে রাইফেল কাঁধে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের দেখা যায় ক্যাপিটল ভবন ঘিরে তৈরি করা নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে। শহরজুড়ে ছিল সশস্ত্র সৈন্যদের টহল।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ওয়াশিংটনের রাস্তাগুলো হয়ে ওঠে জনশূন্য।

রাজধানীর এই অবস্থা নিয়ে হতাশা জানিয়েছেন সাবেক রিপাবলিকান সেনেটর জেফ ফ্ল্যাক।

তিনি রয়টার্সকে বলেন, “সত্যিকারে এটা দেখাটা খুবই কষ্টের, পুরো শহরই অচল হয়ে আছে।”

জো বাইডেনের অভিষেকের এই দিনকে অন্য কোনো দিনের সঙ্গে মেলাতে পারছেন না বিবিসির সাংবাদিক ক্যাটি কে।

তিনি বলেন, “নাইন-ইলেভেনে আমি ওয়াশিংটনে ছিলাম, ২০০১ সালে যখন এখানে হামলা হয়েছিল। কিন্তু আমি কখনও এই শহরকে এ রকম লকডাউনে দেখি নাই। রাস্তায় সামরিক যান, গলির কোণায় সশস্ত্র সৈন্যদের পাহারা।”

শান্তির প্রক্রিয়াকে নিরাপদ করতে যুদ্ধের অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি আমার শহরকে চিনছি না এবং এটা দেখা বেদনাদায়ক।”

স্ত্রী মেলানিয়াকে নিয়ে হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প।

বুধবার সকালে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যখন শেষ বারের মতো হোয়াইট ছেড়ে যান তাকে বহনকারী হেলিকপ্টার ন্যাশনাল মলে সজ্জিত লাখো পতাকার উপর দিয়ে উড়ে যায়। অতীতের সব অভিষেকের সময় সারা দেশের মানুষ এই মলে জড়ো হয়ে অনুষ্ঠান দেখছিলেন, সেখানে এবার জনশূন্য ময়দানে যুক্তরাষ্ট্রের সবগুলো স্টেট ও অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বকারী পতাকা রাখে প্রেসিডেন্টের অভিষেক কমিটি।

স্ত্রী জিল বাইডেনের হাতে ধরে শপথের মঞ্চে উঠছেন জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স

এই অবস্থার মধ্যে ক্যাপিটলের পূর্ব পাশ দিয়ে অভিষেকস্থলে প্রবেশ করেন জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস। অভিষেকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদের স্বাগত জানান।

তাদের উপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্টদের নাম ঘোষণা করা হয়। অন্যান্য সময় এই অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রেসিডেন্টরা উপস্থিত থাকলেও এবার ছিলেন না ডনাল্ড ট্রাম্প।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফাদার লিও ও’ডোনোভানের প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় শপথের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন লেডি গাগা।

প্রথমে শপথ নেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। এরপর পরিবেশনা নিয়ে আসেন জেনিফার লোপেজ।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন জো বাইডেন।

এরপর বাইডেন ও তার পরিবারের সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন বাইডেন।

শপথ নিয়ে উদ্বোধনী ভাষণে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন ৭৮ বছর বয়সী জো বাইডেন।

তিনি বলেন, “এটা আমেরিকার দিন। এটা গণতন্ত্রের দিন। ইতিহাস এবং আশার একটি দিন।

“আমরা আবারও গণতন্ত্রের মূল্য অনুধাবন করতে পেরেছি। গণতন্ত্র ভঙ্গুর এবং এই মুহূর্ত থেকে আমার বন্ধুরা, গণতন্ত্র সর্বত্র বিরাজমান। এখন থেকে পবিত্র এই ভূমিতে, যেখানে কয়েক দিন আগে ক্যাপিটলে তাণ্ডব হয়েছে যেখানে এক জাতি হিসেবে আমাদের আবার একত্রিত হতে হবে।”

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে লেডি গাগা।

ঐক্য ছাড়া শান্তি আসবে না, ঐক্যই সামনে অগ্রসর হওয়ায় ‍পথ- সে কথা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন প্রবীন এই রাজনীতিক।

বাইডেনের ভাষণ শেষে আমান্ডা গোরমানের কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে শেষ হয় অভিষেকের আনুষ্ঠানিকতা।