সশস্ত্র বিক্ষোভের শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সতর্কতা

জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেক সামনে রেখে সহিংস বিক্ষোভের শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের সবগুলো ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2021, 06:49 PM
Updated : 16 Jan 2021, 07:47 PM

আগামী বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের আগে রোববার দেশজুড়ে সশস্ত্র প্রতিবাদ হতে পারে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠান সামনে রেখে সারা দেশ থেকে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠানো হচ্ছে। গত ৬ জানুয়ারি ট্রাম্প সমর্থকদের ক্যাপিটল ভবনে হামলার মতো প্রাণঘাতী ঘটনার পুনারাবৃত্তি রোধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

হোয়াইট হাউসের সামনে তৈরি করা নিরাপত্তা বেষ্টনীর সামনে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা।ছবি- রয়টার্স

ওই দিন নির্বাচনে বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে যৌথ অধিবেশন চলার মধ্যে ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালান ট্রাম্পের কয়েকশ সমর্থক। আগ্রাসী বিক্ষোভকারীদের তাণ্ডবে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা, কয়েক ঘণ্টার জন্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ক্যাপিটল ভবন। পরে লাঠিপেটা ও কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করে পুলিশ ভবন থেকে বিক্ষোভকারীদের সরালে পুনরায় অধিবেশন শুরু হয়।

ওই ঘটনায় একজন পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজন নিহত হন। এর জেরে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহে উসকানি’ দেওয়ার অভিযোগ এনে তাকে অভিশংসিত করে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় দফায় প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হন ট্রাম্প।

এখন বাইডেনের অভিষেক সামনে রেখে ট্রাম্প সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের সব রাজ্যের রাজধানীতে সশস্ত্র মিছিল নিয়ে নামতে পারে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-এফবিআই।

ক্যাপিটল ভবন প্রাঙ্গণে তৈরি করা এই মঞ্চে ২০ জানুয়ারি অভিষেক হবে জো বাইডেনের। ছবি- নিউ ইয়র্ক টাইমস

এই প্রেক্ষাপটে ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল মল বন্ধ রাখা হয়েছে। রাজধানীর সড়কগুলোতে ব্যারিকেড বসিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে বাইডেনের টিম যু্ক্তরাষ্ট্রবাসীকে কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে রাজধানীতে না আসার আহ্বান জানিয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসির মেয়রসহ স্থানীয় কর্মকর্তারা জনগণকে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠান দূর থেকে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন।

অনলাইনে ট্রাম্পপন্থি ও কট্টর ডানপন্থি নেটওয়ার্কগুলোর করা পোস্টে ১৭ জানুয়ারি সশস্ত্র বিক্ষোভ এবং অভিষেকের দিন ২০ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসি অভিমুখে যাত্রার ডাক দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ওই সব কর্মসূচির ডাক পুলিশের ফাঁদ হতে পারে এবং কঠোর নিরাপত্তার বিষয়টি উল্লেখ করে কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী অনুসারীদের এগুলোতে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছে।

তবে ওই পোস্টকে গুরুত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলোতে পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

জো বাইডেনের অভিষেক সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলের সামনের এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা তৈরিতে ব্যস্ত ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা। ছবি- রয়টার্স

মেরিল্যান্ড, নিউ মেক্সিকো ও উটাহ রাজ্যের গভর্নররা জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।

ক্যালিফোর্নিয়া, পেনসিলভেইনিয়া, মিশিগান, ভার্জিনিয়া, ওয়াশিংটন ও উইসকনসিনসহ অনেক রাজ্যে পরিস্থিতি মোকাবেলায় ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের মোতায়েন করছে। টেক্সাস শনিবার থেকে বাইডেনের অভিষেক পর পর্যন্ত রাজ্য ক্যাপিটল বন্ধ রাখছে।

টেক্সাসের জননিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ‘সহিংস উগ্রপন্থিরা’ ঢুকে যেতে পারে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন।

ভার্জিনিয়ার গভর্নর রালফ নরথাম বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “মনে খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে আপনি যদি এখানে আসার বা ওয়াশিংটনে যাওয়ার চিন্তা করেন তাহলে এখনই তা বাদ দিয়ে ঘরে ফেরেন। আপনাকে এখানে স্বাগত জানানো হবে না এবং আপনাকে আমাদের দেশের রাজধানীতেও স্বাগত জানানো হবে না। আপনি যদি এখানে চলেই আসেন এবং আপনার কাজ করেন, তাহলে তা মোকাবেলায় ভার্জিনিয়া প্রস্তুত।”

প্রেসিডেন্টের অভিষেক সামনে রেখে হোয়াইট হাউজের আশপাশের নিরাপত্তা বলয়ের ‘গ্রিন জোনের’ মধ্যে খালি রাস্তায় টহল দিচ্ছেন ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা। ছবি- রয়টার্স

বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের সময় যে সব রাজ্যে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান শিবিরে বৈরীতা দেখা গেছে সেগুলোতে সহিংসতার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। সেগুলোর একটি মিশিগান কর্তৃপক্ষ এরইমধ্যে রাজ্য ক্যাপিটল ঘিরে ছয় ফুট নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করেছে।

রাজ্যের পুলিশের পরিচালক জো গ্যাস্পার শুক্রবার বলেছেন, অন্তত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ এই ভবন ঘিরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে।