ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলায় ‘স্তম্ভিত বিশ্ব’

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে ডনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় হতবাক হয়ে পড়ার কথা জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Jan 2021, 08:25 AM
Updated : 7 Jan 2021, 08:42 AM

বুধবার ওই হামলার সময় মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতির প্রক্রিয়া চলছিল।

ভোটের ফল পাল্টে দিতে কংগ্রেস সদস্যদের উপর চাপ সৃষ্টি করতেই এদিন ট্রাম্প সমর্থকরা ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালায় বলে মনে করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হামলাকারীরা বুধবার বেশ কয়েক ঘণ্টা কংগ্রেস ভবন দখলে রেখেছিল; সেসময় অধিবেশন স্থগিত হয়ে যায় এবং পুলিশ আইনপ্রণেতাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়।

পরে পুলিশ ক্যাপিটল হিলকে ট্রাম্প সমর্থকদের দখলমুক্ত করতে গেলে সংঘর্ষ বেধে যায়। শেষ খবর পর্যন্ত এতে অন্তত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

জাতিসংঘ

এ ঘটনায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘দুঃখ পেয়েছেন’ বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র।

“এ ধরনের পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নেতারা তাদের সমর্থকদের সহিংসতা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করাতে ভূমিকা রাখবেন,” বিবৃতিতে বলেছেন জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক।

চীন

বুধবার ক্যাপিটল ভবনে এ তুলকালামের আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে ট্রাম্প সমর্থকদের ‘বিশাল বিক্ষোভের’ ডাক ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কারফিউ ঘোষণার প্রেক্ষিতে চীন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে শহরটিতে থাকা চীনা নাগরিকদেরকে তাদের নিরাপত্তা সতর্কতা জোরদারের পরামর্শ দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে নজিরবিহীন হামলা ও সংঘর্ষ এবং এতে একাধিক প্রাণহানি নিয়ে এখন পর্যন্ত বেইজিং বা এর শীর্ষ নেতাদের কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

ভারত

যুক্তরাষ্ট্রের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিয়মমাফিক ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

“ওয়াশিংটন ডিসিতে দাঙ্গা ও সহিংসতার খবর দেখে খারাপ লাগছে। বেআইনি প্রতিবাদের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অচল করতে দেওয়া যাবে না,” টুইটারে এমনটাই বলেছেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এ শীর্ষ নেতা। 

জাপান

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয় হওয়ায় ট্রাম্পের রাজনৈতিক স্টাইল নিয়ে কথা বলতে চায় না বলে জানিয়েছে জাপান।

“যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র এ কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠেছে, প্রশান্তি ও সম্পীতি ফিরে এসেছে এবং শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে- এমনটা দেখব বলেই আশা করছি আমরা,” সাংবাদিকদের এমনটাই বলেছেন জাপানের মুখ্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব কাতসুনোবো কাতো।

ফ্রান্স

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ টুইটারে ইংরেজিতে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, “ওয়াশিংটন ডিসিতে আজ যা হয়েছে, তা মোটেও যুক্তরাষ্ট্রের মতো নয়। আমরা আমাদের গণতন্ত্রের শক্তিতে বিশ্বাসী; আমরা যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের শক্তিতেও বিশ্বাসী।”

যুক্তরাজ্য

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন টুইটারে মার্কিন কংগ্রেস ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা. দাঙ্গা ও হতাহতের ঘটনাকে ‘কলঙ্কজনক’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সারা দুনিয়ায় গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেয়, একারণেই সেখানে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মমাফিক ক্ষমতা হস্তান্তর খুবই জরুরি।

জার্মানি

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নভেম্বরের ভোটের ফল মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, গণতন্ত্রের শত্রুরা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে হওয়া সহিংসতার চিত্র দেখে উল্লসিত।

উসকানিমূলক কথাবার্তার কারণেই এই সহিংসতা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

“শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প ও তার সমর্থকদের উচিত মার্কিন ভোটারদের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া এবং গণতন্ত্রকে পদাঘাত বন্ধ করা,” বলেছেন মাস।

রাশিয়া

ক্যাপিটলে সহিংসতা ও দাঙ্গা নিয়ে ওয়াশিংটনকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি মস্কো।

ইউক্রেইনের রাজধানী কিয়েভের ময়দানে ২০১৪ সালে হওয়া বিক্ষোভের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে জাতিসংঘে রাশিয়ার উপ রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পোলিয়ানস্কি টুইটারে এক পোস্টে লিখেছেন, “ওয়াশিংটন ডিসি থেকে অনেকটা ময়দান-স্টাইল বিক্ষোভের ছবি পাওয়া যাচ্ছে।”

কিয়েভের ওই বিক্ষোভের ধাক্কায় দেশটির রাশিয়া সমর্থিত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন।

“আমার কয়েকজন বন্ধু আমাকে জিজ্ঞেস করছে, ওয়াশিংটনের এ বিক্ষোভে কেউ কি ভিক্টোরিয়া নুলান্ডের মতো বিক্ষোভকারীদের ক্র্যাকার্স বিতরণ করছে?” একই টুইটে ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নুলান্ডের ইউক্রেইন সফরের কথাও মনে করিয়ে দেন পোলিয়ানস্কি। সেবারের সফরে নুলান্ড বিক্ষোভকারীদের খাবার দিতে চেয়েছিলেন।

নেটো

নেটোর মহাসচিব ইয়ান স্টল্টেনবার্গ ওয়াশিংটনের সহিংস বিক্ষোভের চিত্রকে ‘অতিশয় বেদনাদায়ক দৃশ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলের প্রতি সবার শ্রদ্ধা জানানো উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন তিনি।

স্পেন

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ টুইটারে বলেছেন, “ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল হিল থেকে আসা খবর উদ্বেগের সঙ্গে অনুসরণ করছি আমি। আমি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের শক্তিতে আস্থা রাখি। আশা করছি নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই উত্তেজনাকর সময় কাটিয়ে উঠে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন।”

আয়ারল্যান্ড

ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এসেছে আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সায়মন কোভনির মুখ থেকে।

“ওয়াশিংটনে যে দৃশ্য দেখা গেছে তা হচ্ছে গণতন্ত্রের উপর ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ও তার সমর্থকদর সুপরিকল্পিত আক্রমণ। তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল। বিশ্ব দেখছে। শান্তি পুনরুদ্ধার করা যাবে বলেই আমরা আশা করছি,” বলেছেন তিনি।

তুরস্ক

তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ওয়াশিংটনে হওয়া সহিংসতায় উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি সবাইকে শান্ত হতে ও কাণ্ডজ্ঞান কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছে। বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তুরস্কের নাগরিকদের ভিড় ও বিক্ষোভস্থলগুলো এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতাদের চেয়ারম্যান শার্ল মিশেল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে সহিংসতায় হতবাক হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে টুইটারে লিখেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস হচ্ছে গণতন্ত্রের মন্দির। যুক্তরাষ্ট্রে জো বাইডেনের হাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।” 

ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডে লাইয়েন বলেছেন, “আমি যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তির উপর আস্থাশীল, যার মূল হচ্ছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর। জো বাইডেন নির্বাচনে জিতেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছি আমি।”

কানাডা

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ওয়াশিংটনের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী বলেই মনে করি আমি, শিগগিরই সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে বলে আশা করছি।”

সুইডেন

সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্তিয়েফান লোফভেন ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনাকে ‘গণতন্ত্রের উপর আঘাত’ বলে অভিহিত করেছেন।

“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও কংগ্রেসের অনেক সদস্যকেই এখন যা হচ্ছে তার দায়ভার নিতে হবে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অবশ্যই সম্মান করা উচিত,” টুইটে বলেছেন তিনি।

নরওয়ে

নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী আর্না সোলবার্গ লিখেছেন, “মার্কিন গণতন্ত্রের উপর এ আঘাত মেনে নেওয়া যায় না। এটা থামানোর দায়িত্ব প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। ভীতিকর সব ছবি। এ ঘটনা যে যুক্তরাষ্ট্রে হচ্ছে তা অবিশ্বাস্য।”

ফিনল্যান্ড

ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা ম্যারিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিল ভবনে হামলার ঘটনা খুবই গুরুতর এবং উদ্বেগজনক বিষয়। সব সময়ের জন্য গণতন্ত্রকে কেন দৃঢ় ও শক্তিশালীভাবে রক্ষা করা দরকার তার গুরুত্বও দেখাচ্ছে এই ঘটনা।”

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ওয়াশিংটনের ঘটনাকে ‘পীড়াদায়ক’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন।

“আমরা এই সহিংসতার নিন্দা জানাচ্ছি এবং আমেরিকান গণতন্ত্রের অসাধারণ চর্চার অংশ হিসেবে নির্বাচিত নতুন প্রশাসনের হাতে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের দিকে তাকিয়ে আছি,” টুইটারে এমনটাই বলেছেন মরিসন।

নিউ জিল্যান্ড

নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আডুর্ন বলেছেন, “গণতন্ত্র- এতে জনগণের ভোট দেওয়ার অধিকার, তাদের কথা শোনার এবং সেই সিদ্ধান্তের শান্তিপূর্ণ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে তা একদল দুর্বৃত্তের কারণে অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে না। কোনো সন্দেহ নেই, গণতন্ত্রই শক্তিশালী হিসেবে আবির্ভূত হবে।”

ভেনেজুয়েলা

ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোর্হে আরিয়েজা টুইটে বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরে ঘটা সহিংস ঘটনায় ভেনেজুয়েলা তার উদ্বেগ জানাচ্ছে। সেখানকার রাজনৈতিক মেরুকরণের নিন্দা জানাচ্ছে এবং আশা করছে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ স্থিতিশীল ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নতুন এক পথ উন্মোচন করবে।”

আর্জেন্টিনা

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে হামলা, ভাংচুরের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবের্তো ফের্নান্দেজ।

“সেখানে জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর হবে বলে আস্থাশীল আমরা। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আমাদের জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করছি,” টুইটারে দেওয়া পোস্টে এমনটাই বলেছেন তিনি।