যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলা

ডনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের আগ্রাসী বিক্ষোভের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবন অবরুদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ, যেখানে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে নির্বাচনে জো বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতির প্রক্রিয়া চলছিল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2021, 08:42 PM
Updated : 7 Jan 2021, 04:25 AM

বুধবার কংগ্রেস অধিবেশনের বিরোধিতা করে ওয়াশিংটনে জড়ো হন কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক, যাদের মধ্যে উগ্রপন্থি বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যরাও রয়েছেন। সেই সমাবেশে বক্তব্যে নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজয় মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প।

রয়টার্স জানায়, এই সমাবেশের অল্প একটু দূরে গিয়ে কয়েকশ ট্রাম্প সমর্থক ক্যাপিটল ভবনে নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। এক পর্যায়ে কংগ্রেসের অধিবেশন চলার মধ্যেই পুলিশের বাধা ভেঙে ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়েন তারা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদুনে গ্যাস ও পেপার স্প্রে ব্যবহার করে পুলিশ।

সংঘর্ষের মধ্যে প্রতিনিধি পরিষদের (হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস) সদস্যদের পাহারা দিয়ে অধিবেশন কক্ষ থেকে বের করে পুলিশ। ট্রাম্প সমর্থক কয়েকজন আইনপ্রণেতার নির্বাচনের ফল বাতিলের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলার মধ্যেই সেখানে এই গোলযোগের সৃষ্টি হয়।
 
এই পরিস্থিতিতে সেনেট অধিবেশনও মুলতবি করা হয়। যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকেও পাহারা দিয়ে অধিবেশন কক্ষ থেকে বের করে পুলিশ।
 
এ সময় পুলিশ অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত আইনপ্রণেতাদের তাদের আসনের নিচ থেকে গ্যাস মাস্ক বের করে পরার পরামর্শ দেয়।

মিশিগানের কংগ্রেস সদস্য হ্যালি স্টিভেন্স টুইটে লিখেছেন, “আমি আমার অফিসের এক জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছি। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে, এটা আমাকে লিখতে হচ্ছে।”

বিক্ষুব্ধদের মধ্য থেকে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশের চেষ্টা করা হলে সামনের দিকে অবস্থানরত পুলিশ কর্মকর্তারা বন্দুক তাক করেন।

ছবি: রয়টার্স

এই পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বোয়ার্স সন্ধ্যা ৬টা থেকে শহরজুড়ে কার্ফ্যু জারি করেছেন।

রয়টার্স লিখেছে, হোয়াইট হাউজের কাছে সমবেত কয়েক হাজার সমর্থকের উদ্দেশে ট্রাম্প বক্তব্য দেওয়ার পর এই গোলযোগ দেখা দেয়। বক্তব্যে পুরনো অভিযোগ ব্যাপক জালিয়াতির মাধ্যমে তার কাছ থেকে নির্বাচন ‘চুরি করে নেওয়া হয়েছে’ বলে অভিযোগ করেন ট্রাম্প।

ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয় দলের নির্বাচন কর্মকর্তা ও নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা সবাই ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে তেমন কোনো জালিয়াতি না হওয়ার কথা বলেছেন। ওই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে ৭০ লাখের বেশি পপুলার ভোট পেয়েছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের নির্ধারক ইলেকটোরাল ভোটের হিসাবে ট্রাম্পের ২৩২টির বিপরীতে বাইডেনের পক্ষে আসে ৩০৬টি। এরপর দেশের বিভিন্ন স্টেটে নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে আদালতে গিয়ে বিফল হয় ট্রাম্প শিবির।

যেসব স্টেটে ট্রাম্প অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন সেই সব স্টেটের নির্বাচনের ফল বাতিলের জন্য তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্সকে চাপ দিচ্ছেন, যদিও তার এই ক্ষমতা নেই।

কংগ্রেসে স্বীকৃতির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এক্ষেত্রে কিছু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা অ্যারিজোনাসহ কয়েকটি স্টেটের ফল বাতিলের প্রস্তাব তুললে তা কয়েক ঘণ্টার আলোচনার রসদ জোগাত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ক্যাপিটল ভবন অবরুদ্ধ করার পর সেখান থেকে কেউ বের হতে পারছিলেন না বলে সিএনএনের এক কর্মী জানিয়েছেন। এদিকে ভবনের বাইরে ট্রাম্প সমর্থকরা স্লোগান দিচ্ছিলেন।

এক টুইটে সমর্থকদের ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প।