বিবিসি জানায়, ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্রাকার’ গ্রুপের পার্যালোচনা এ আশার আলো জাগিয়েছে। গ্রুপটি চীন ও অন্যান্য দেশের কাছ থেকে জলবায়ু সংক্রান্ত নতুন প্রতিশ্রুতিকে বিবেচনায় নিয়েছে।
তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদল হওয়ায় নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে কী পরিকল্পনা নেন তাও এখন দেখার অপেক্ষায় বিশ্ব।
দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টিকে ‘ভুয়া’ বলে বর্ণনা করে যুক্তরাষ্ট্রকে এ চুক্তি থেকে বের করে নিয়েছিলেন। বাইডেন তার নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও এ চুক্তিতে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
‘ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকার’ গ্রুপের পর্যবেক্ষণে বলছে, ওইসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হলে এ শতাব্দী শেষে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে রাখা সম্ভব হবে।
এর আগে এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছিল, এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে গিয়ে বিশ্বজুড়ে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ডেকে আনতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা একদিকে যেমন আশার আলো দেখাচ্ছেন, তেমনি প্রকাশ করেছেন উদ্বেগ। তাদের উদ্বেগের কারণ, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী আশাবাদের সঙ্গে স্বল্প মেয়াদের পরিকল্পনার অমিল।
গত এক দশকের বেশি সময় ধরে ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকার’ ওই চুক্তির আওতায় কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশ তাদের দেওয়া নানা প্রতিশ্রুতি কতটুকু পালন করছে তার উপর নজরদারি করছে।
২০০৯ সালে কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলন ব্যর্থ হওয়ার পর এই গ্রুপটি বলেছিল, এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্বের তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে।
কিন্তু জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের (ইউএনএফসিসিসি)২৩ বছরের সাধনার পর গত ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসে প্রায় দুইশ দেশ কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে বিশ্ব উষ্ণায়ন বৃদ্ধি রোধে চুক্তিতে উপনীত হতে সক্ষম হয়। যা প্যারিস জলবায়ু চুক্তি নামে পরিচিত।
এ চু্ক্তির ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ধীরে হলেও জৈব জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে আসছে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণের অন্যতম প্রধান কারণ এই জৈব জ্বালানি।
দেশুগুলোর জৈব জ্বালানির ব্যবহার হ্রাসের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এ বছর সেপ্টেম্বরে ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকার’ গ্রুপের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২১০০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকবে।
এখন নতুন পর্যালোচনায় তারা বলেছেন, ২১০০ সালে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে বেঁধে রাখা সম্ভব।
যেসব পরিবর্তন এসেছে:
গত তিন মাসে জলবায়ু বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত এসেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এক ভাষণে বলেছেন, ২০৬০ সাল নাগাদ তার দেশে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনবে।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করা দুই দেশের একটি চীন। চীন যদি তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করে তবে শুধু তার প্রভাবেই এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ০ দশমিক ২ থেকে ০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যাবে।
জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া ২০৫০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং কানাডও এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।