সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা ফ্লিনকে ‘ক্ষমা’ করে দিলেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইকে মিথ্যা বলার দায় স্বীকার করে নেওয়া সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2020, 05:02 AM
Updated : 26 Nov 2020, 05:45 AM

এর মাধ্যমে ‘নির্দোষ’ একজন মানুষের পেছনে ডেমোক্র্যাটদের অন্তহীন তাড়ার চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটল বলে মন্তব্য করেছে হোয়াইট হাউস।

ট্রাম্প বলেছেন, ফ্লিনকে ক্ষমা করার বিষয়টি ছিল ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত এবং শেষ পর্যন্ত তা করতে পেরে তিনি নিজেকে ‘সম্মানিত’ মনে করছেন।

বিবিসি জানিয়েছে, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের তদন্তে ট্রাম্পের যে ক’জন সাবেক উপদেষ্টা বিভিন্ন দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন ফ্লিন ছিলেন তাদের একজন।

২০১৭ সালে তিনি রুশ দূতের সঙ্গে যোগাযোগ বিষয়ে এফবিআইকে মিথ্যা বলার অভিযোগ স্বীকার করে নেন। অবশ্য পরে তিনি ওই স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারেরও চেষ্টা করেন।

বুধবার হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, ফ্লিন ২০১৬ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার সমন্বিত চেষ্টায় নিয়োজিত দল অনুগত সরকারি কর্মকর্তাদের ষড়যন্ত্রের শিকার।

ট্রাম্পের ক্ষমা ঘোষণার পর টুইটারে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় ফ্লিন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকার একটি ইমোজি ও বাইবেলের একটি চরণ পোস্ট করেন।

জেরেমিয়াহ ১:১৯ চরণটিতে বলা হয়েছে, “‘তারা তোমার বিরুদ্ধে লড়বে, কিন্তু তোমাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না। কেননা, আমি তোমাদের সঙ্গে রয়েছি, এবং তোমাদের উদ্ধার করবো,’ঘোষণা করেছেন ঈশ্বর।”

ফ্লিন সমর্থকদের ধারণা, ট্রাম্প প্রশাসনের বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার লক্ষ্যে ওবামা প্রশাসন যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আশ্রয় নিয়েছিল সাবেক এ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারই শিকার।

দীর্ঘদিন ধরে ডেমোক্র্যাট সমর্থক হিসেবে পরিচিতি থাকলেও অবসরপ্রাপ্ত এ তিন তারকা লেফটেনেন্ট জেনারেল ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছিলেন।

তার পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প শুরুতেই যে ক’জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেন ফ্লিন ছিলেন তাদের একজন।

যদিও হোয়াইট হাউসে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে তার মেয়াদ ছিল মাত্র ২৩ দিনের।

ট্রাম্প ক্ষমতা নেওয়ার আগেই ফ্লিন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত মস্কোর রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে রাশিয়ার উপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা করেছিলেন এবং এ বিষয়ে ভাইস প্রেসিডেন্টকে ভুল তথ্য দিয়েছেন- এমনটা জানার পর রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট তাকে বরখাস্ত করেন।

২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের ২২ মাসের তদন্ত গত বছর শেষ হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে ট্রাম্প বা তার সহযোগীরা ক্রেমলিনের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলে যে অভিযোগ বিরোধীরা করে আসছে, তদন্তে এর সপক্ষে কোনো তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায়নি। 

রিপাবলিকানরা ফ্লিনকে ক্ষমা করে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

“জেনারেল ফ্লিন কোনো রুশ এজেন্ট নন। তিনি ছিলেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি তদন্ত ও বিচারের শিকার,” বলেছেন সাউথ ক্যারোলাইনার সেনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম।

প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যালঘু অংশের নেতা রিপাবলিকান সাংসদ কেভিন ম্যাককার্থি টুইটে লিখেছেন, “জেনারেল ফ্লিনের সঙ্গে যা হয়েছে, তা জাতীর জন্য অমর্যাদাকর। নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলকে ধারণ করার জন্য কোনো মার্কিনিকেই এভাবে নিশানা বানানো উচিত নয়।”

ডেমোক্র্যাটদের প্রতিক্রিয়া একেবারেই বিপরীত।

“দুঃখজনকভাবে এই ক্ষমা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ব্যর্থ হওয়ার পরও ট্রাম্প যে কার্যালয়ে তার শেষ দিনগুলোকে কাজে লাগিয়ে আইনের শাসনকে খর্ব করার পরিকল্পনা করছেন তার প্রমাণ,” বলেছেন প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি।