৩৯ আফগানকে হত্যা করেছে অস্ট্রেলীয় সেনারা: তদন্ত প্রতিবেদন

আফগান যুদ্ধের সময় অস্ট্রেলিয়ার সেনাদের নিরীহ মানুষ এবং বন্দি মিলিয়ে ৩৯ জনকে হত্যার ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ পাওয়া গেছে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2020, 02:59 PM
Updated : 19 Nov 2020, 02:59 PM

চার বছরের তদন্ত শেষে অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্স ফোর্স (এডিএফ) এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এডিএফ বলছে, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বন্দি, কৃষক ও বেসামরিক নাগরিকদেরকে হত্যার ঘটনায় বিশেষ বাহিনীর ১৯ জন বর্তমান ও সাবেক সেনার বিরুদ্ধে পুলিশী তদন্ত হওয়া উচিত।

বৃহস্পতিবার এডিএফ এর প্রধান জেনারেল অ্যাংগাস ক্যাম্পবেল প্রতিবেদনে বলেন, “আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিতে প্রস্তুত অস্ট্রেলিয়ার বিশেষ বাহিনীর কিছু সদস্যের মধ্যে একধরনের ‘বিকৃত যোদ্ধা সংস্কৃতি’, ‘রক্ত পিপাসা’ এবং ‘তিক্ত প্রতিযোগিতার’ মনোভাব ছিল; যার ফলই হচ্ছে ওই হত্যাকাণ্ড।”

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “পৃথক ২৩ টি ঘটনায় অস্ট্রেলীয় বিশেষ বাহিনীর ২৫ সেনা সরাসরি কিংবা পরোক্ষোভাবে বেআইনি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল।” আরও ৩৬ টি ঘটনার ফেডারেল পুলিশী তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

বিবিসি জানায়, তদন্তের নেতৃত্বে ছিলেন মেজর জেনারেল জাস্টিস পল ব্রেরেটন। তিনি ৪০০’র বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এতে যে তথ্যপ্রমাণ বেরিয়ে এসেছে তাতে দেখা গেছে, ‘ব্লাডিং’, বা রক্তপাতের অনুশীলনে প্রথম হত্যার রেকর্ড রাখতে বন্দিদের গুলি করে মারতে অধীনস্ত সেনাদের আদেশ দিতেন ঊর্ধ্বতনরা।

এরপর অপরাধ ঢাকতে মৃতদেহের পাশে অস্ত্রসহ অন্যান্য জিনিস পুঁতে দেওয়া হত। দুটি ভিন্ন ঘটনায় সেনাদের নৃশংস আচরণ যুদ্ধাপরাধের সামিল বলেই মনে করা হচ্ছে। এডিএফ এর প্রধান ক্যাম্পবেল বলেছেন, স্পেশাল এয়ার সার্ভিস রেজিমেন্টের সেনাদেরও আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রমাণ আছে।

অস্ট্রেলীয় সেনাদের হাতে নিহত ৩৯ আফগানের কেউই যোদ্ধা ছিলেন না বলে জানিয়েছে সিএনএন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন গত সপ্তাহেই এ প্রতিবেদন দেশটির বিশেষ বাহিনী সম্পর্কে অস্ট্রেলীয়দের জন্য কঠিন এবং কঠোর বার্তা নিয়ে আসছে বলে সতর্ক করেছিলেন।

আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির কার্যালয় জানিয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্য নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ফোন করে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আফগানিস্তানের মানবাধিকার কমিশন এ প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে বলেছে, সেনাদের অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিবেদনে যথেষ্ট প্রমাণ দেওয়া হয়নি।

আফগানিস্তানে ২০০২ সালে তালেবান শাসনের পতনের পর থেকেই মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের অংশ হিসাবে ছিল অস্ট্রেলীয় সেনা। প্রাথমিকভাবে আফগান সেনাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়াই আন্তর্জাতিক বাহিনীর কাজ থাকলেও পরে তারা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনেক বেশি জড়িয়ে পড়তে শুরু করে।