ওবামার রাজনৈতিক কেরিয়ারের স্মৃতি নিয়ে লেখা বইয়ের এই প্রথম খণ্ড মঙ্গলবার প্রকাশ পেয়েছে। বিবিসি জানায়, এই খণ্ডে ২০১০ সালে নভেম্বরের ভারত সফর নিয়ে ওবামা প্রায় ১৪০০ শব্দের একটি অধ্যায় লিখেছেন।
ওই সময় ভারতের ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস পার্টি। এই দলের প্রধান সোনিয়া গান্ধীসহ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং কে নিয়ে ওবামা তার মুগ্ধতার কথা অকপটে বর্ণনা করেছেন এ অধ্যায়ে।
আর এর আগে, ওবামার এই স্মৃতিকথায় উঠে এসেছে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীকে নিয়েও কিছু মন্তব্য। আর তা নিয়ে ভারতে সমালোচনাও হয়েছে।
কংগ্রেস নেতাদের নিয়ে স্মৃতিকথায় যা বলেছেন ওবামা:
ভারতের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে খুবই সশ্রদ্ধ এবং দরাজ প্রসংশা করেছেন ওবামা। তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন, মনমোহনই নতুন ভারতীয় অর্থনীতির প্রধান কারিগর।
ওবামার কথায়, মনমোহন সিং একজন জ্ঞানী, চিন্তাশীল এবং অসম্ভব সৎ রাজনীতিবিদ। তিনি টেকনোক্রেট হলেও সততা এবং দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের কারণে জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছিলেন।
তাছাড়া, মনমোহনের আমলে ২৬/১১’র মুম্বাই হামলা পরবর্তী ভারতে পাকিস্তানবিরোধী যে মনোভাব জেগে উঠেছিল তাও তিনি দাবিয়ে দিয়েছিলেন।
পাশাপাশি মুসলিম-বিদ্বেষ মাথা চাড়া দিতে থাকায় সে সময়কার প্রধান বিরোধীদল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রভাবশালী হয়ে উঠতে থাকা নিয়েও মনমোহন উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন ওবামা।
ভারতীয় কংগ্রেস পার্টির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সোনিয়া গান্ধীকে নিয়ে বারাক ওবামা বলেছেন, তিনি খুবই আকর্ষণীয় এবং দৃঢ়চেতা এক নারী।
ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত এই নারীর রীতিমতো ভারতের ঐতিহ্যবাহী পোশাক শাড়িতে গৃহবধূ বনে যাওয়া থেকে পরবর্তীতে স্বামী রাজিব গান্ধীর মৃত্যুশোক কাটিয়ে জাতীয় রাজনীতির নেতৃস্থানীয় অবস্থানে উঠে আসার প্রশংসা করেছেন ওবামা।
এক সময়কার ক্ষমতাসীন দলের প্রধান থেকেও প্রধানমন্ত্রীত্ব না নিয়ে আড়ালে থেকে সোনিয়ার যথাযথ দিক নির্দেশনা দেওয়া এবং তার শান্ত, সৌম্য, ভদ্রচিত রূপ নিয়ে মুগ্ধতাও প্রকাশ পেয়েছে ওবামার লেখায়।
পাশাপাশি, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সম্মানে মনমোহনের বাড়িতে আয়োজিত এক নৈশভোজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে ওবামা লিখেছেন, সোনিয়া গান্ধী কথা বলার চেয়ে কথা শুনেন বেশি এবং দলীয় সংগঠন মজবুত করার জন্য মনমোহনের বুদ্ধিকে সোনিয়া গুরুত্ব দিয়েছেন বলে তার কাছে মনে হয়েছে।
ছেলে রাহুল গান্ধী যাতে সৎ এবং দক্ষ মনমোহনের কাছ থেকে রাজনীতির পাঠ নেন, সেটি নিশ্চিত করাই সোনিয়ার লক্ষ্য ছিল বলে সে সময় মনে হয়েছিল ওবামার।
রাহুল গান্ধীকে একজন চৌকস, পরিপাটি আর সুদর্শন যুবক বলে প্রশংসা করে ওবামা লিখেছেন, এই সৌন্দর্য্য তার মায়ের কাছ থেকেই পাওয়া। কিন্তু একইসঙ্গে রাহুলকে নার্ভাস, অপরিণত একজন তরুণ কিংবা অপটু ছাত্র হিসেবে উল্লেখ করেন ওবামা।
তার কথায়, রাহুল যেন এমন একজন ছাত্র- যে অনেক পড়াশোনা করেছে, শিক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেও আগ্রহী। কিন্তু নির্দিষ্ট বিষয়টিতে তার ‘দক্ষতা অর্জন’ কিংবা যে পারদর্শীতা বা আগ্রহ থাকা উচিত, তার কমতি রয়েছে।
রাহুলকে নিয়ে ওবামার এই মন্তব্য তার স্মৃতিকথার আগাম পর্যালোচনায় প্রকাশ করেছিল ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকা। আর তাতেই ভারতে এ মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
কংগ্রেস পার্টির বেশ কিছু সমর্থক এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওবামার মন্তব্যে রীতিমত অসন্তোষ প্রকাশ করেন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। “আমাদের নেতার মূল্যায়ন করার আগে দু'বার চিন্তা করুন” বলেন তিনি।
অধীর ছাড়াও ওবামার মন্তব্যের নিন্দা করেছেন কংগ্রেসের একাধিক নেতা। পার্টির এক নেতা প্রতিবাদে ওবামাকে টুইটারে ‘আনফেলো’ও করেছেন।
ভারতের ভবিষ্যৎ:
ভারতের সেই সময়কার অগ্রযাত্রার পাশাপাশি নানা সমস্যাও বিরাজমান থাকার কথা ওবামা তার লেখনীতে উল্লেখ করেছেন।
আবার ভারত সফরের ওই সময়ে মনমোহনের বাড়ি থেকে নৈশভোজের পর বেরিয়েও ওবামা চিন্তা করেছিলেন, এই নেতার প্রধানমন্ত্রীত্ব শেষের পর ভারতের ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে তা নিয়েও।
দেশ পরিচালনার দায়িত্ব সফলভাবে রাহুলের হাতে স্থানান্তর হবে কিনা, তার মায়ের স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা এবং কংগ্রেস পার্টির প্রভাব টিকে থাকবে কিনা—এমন নানা প্রশ্ন জেগেছিল তার মনে।
আর এসব নিয়ে কোনও না কোনওভাবে কিছুটা সন্দিহান থাকার কথাও ওবামা তার লেখায় জানিয়েছেন।
শেষমেশ ২০১৪ সালে ওবামা তার সব প্রশ্নেরই উত্তর পেয়ে গিয়েছিলেন, যখন বিশাল জয় নিয়ে ভারতের ক্ষমতায় আসেন বিজেপি’র নরেন্দ্র মোদী।
মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ২০১৫ সালেই ফের ওবামা ভারত সফর করেছিলেন। তবে তিনি তার স্মৃতিকথার প্রথম খণ্ডে মোদীকে নিয়ে কিছু লেখেননি।
প্রথম খণ্ডটি শেষ হয়েছে, ২০১১ সালে আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর স্মৃতিচারণ দিয়ে। মোদীকে নিয়ে ওবামার স্মৃতিচারণ খুব সম্ভবত রয়েছে বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ডে, বলছে বিবিসি।