মার্কিনিরা চরম বিভক্ত: ওবামা

যুক্তরাষ্ট্রে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন উভয়ই সাত কোটির বেশি ভোট পেয়েছেন। এতে দেশের জনগণের মধ্যে চরম বিভক্তির প্রকাশ ঘটেছে বলে মনে করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2020, 05:01 PM
Updated : 16 Nov 2020, 05:01 PM

‘সিবিএস সানডে মর্নিং’ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওবামা বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে এখনও গভীর বিভেদ রয়ে গেছে। সংবাদমাধ্যমে দুই পক্ষের নীতি ও কৌশলকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে মনে হয়েছে দুইটি বিকল্প শক্তি এবং ভোটাররাও তাদের সেভাবেই গ্রহণ করেছে। এটার সুদূরপ্রসারি প্রভাব রয়েছে।”

ভোটারদের মধ্যে এই বিভেদ নিয়ে উদ্বিগ্ন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওবামা বলেন, ‘‘হ্যাঁ, এমনটা হলে আমাদের গণতান্ত্রিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। যদি আমাদের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করতে হয় তবে সেটা খুব কঠিন হবে।”

অনেকে মনে করেন, ওবামা নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পক্ষে বেশ সক্রিয়ভাবে প্রচার চালিয়েছেন। এজন্য তাকে সমালোচিতও হতে হয়েছে। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টরা সরাসরি কোনও প্রার্থীর পক্ষ নেন না বা প্রচার চালান না।

ওবামা অবশ্য ওই অভিযোগ খণ্ডন করে বলেছেন, ‘‘নির্বাচনের ফল আমার পছন্দের ভিত্তিতে হয়নি। বরং আমার মনে হয় এবারের নির্বাচনে আমরা এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম যেখানে অসাধারণ প্রভাব রাখতে পারে এমন কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম এবং সুনির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক মূল্যবোধ মারাত্মকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছিল।

যেটা আমার উপরও প্রভাব ফেলেছে। একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে জনগণকে আমি একটা সাধারণ কথা জানাতে চেয়েছি, বলতে চেয়েছে, এটা স্বাভাবিক নয়।” 

সিবিসি’কে দেওয়া আরেকটি সাক্ষাৎকারে ওবামা প্রমাণহীন ‘ভোট চুরির’ অভিযোগ তুলে ট্রাম্পের পরাজয় স্বীকার না করার একগুঁয়েমিতে রিপাবলিকানদের সমর্থন দেওয়ার সমালোচনা করেন।

রোববার তার ওই সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচার করা হয়। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘যদি আমাদের নিজেদের সন্তানরাও হেরে যাওয়ার পর এ ধরনের আচরণ করে আমরা তা কখনও মেনে নেব ‍না, তাই না? আমি বলতে চাইছি, যদি আমার মেয়েরা এ ধরনের কোনও প্রতিযোগিতায় নামে...তারপর হেরে গিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে অন্যপক্ষ জালিয়াতি করেছে বলে অভিযোগ তোলে, যে অভিযোগের আবার কোনও প্রমাণও নেই, তবে আমরা তাকে তিরস্কারই করব।”

তাছাড়া, নিয়মানুযায়ী একজন প্রেসিডেন্ট সারা জীবনের জন্য নয় বরং অস্থায়ী সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করেন।

‘‘এবং যখন মেয়াদ শেষ হয়ে যায় তখন নিজের মান-অভিমান, নিজের স্বার্থ এবং নিজের হাতাশাকে পেছনে ফেলে দেশকে সামনে এগিয়ে দেওয়া তার প্রথম দায়িত্ব।

‘‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আমি বলতে চাই, যদি আপনি এই খেলার শেষ পর্যায়ে এসে দেশকে সবার আগে রাখা একজন হিসেব স্মরণীয় হয়ে থাকতে চান তবে এটাই করুন।”

শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর কতটা জরুরি এমন প্রশ্নের জবাবে ওবামা বলেন, ‘‘এটা একটি অস্থায়ী পদ। আর আমরা কেউই নিয়মের বাইরে নই, আমরা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নই। এটাই আমাদের গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র।”

নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য কোনও পরামর্শ আছে কিনা জানতে চাইলে ওবামা মজা করে বলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের আমার পরামর্শের প্রয়োজন নেই। তবে আমি কথা দিচ্ছি তাকে আমি আমার সাধ্যমত সাহায্য করব।”

হাসতে হাসতে ওবামা আরও বলেন, ‘‘তবে আমার হঠাৎ করে হোয়াইট হাউজের স্টাফ হওয়ার বা এরকম কোনো কিছু করার পরিকল্পনা নেই...তহালে মিশেল আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।”

ট্রাম্পের বাক্যবাণ থেকে ওবামাও রক্ষা পাননি। তবে সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নেননি জানিয়ে সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘তিনি এমন অনেক কিছুই বলেছেন, সেগুলো আমি গুরুত্ব দেইনি বা ব্যক্তিগত আক্রমণ বলে মনে করিনি। তবে আমার মনে হয়েছে, সেগুলো বেশ বিরক্তিকর ও বিপজ্জনক হতে পারত।”