প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: মিশিগানের ‘মৃত ভোটাররা’ এখনো জীবিত
নিউজডেস্ক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 14 Nov 2020 11:54 PM BdST Updated: 14 Nov 2020 11:54 PM BdST
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া মিশিগানের ‘মৃত ভোটারের’ তালিকায় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রবার্তো গার্সিয়ার নামও আছে। যিনি দিব্যি বেঁচে আছেন। ছবি: বিবিসি
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া মিশিগানের ‘মৃত ভোটারের’ তালিকা। ছবি: বিবিসি
প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চললো যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট হয়েছে, কিন্তু ফলাফল নিয়ে জটিলতা শেষ হয়নি। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এখনো পরাজয় স্বীকার করেননি বরং ভোটে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। তার সমর্থকদের দাবি এবারের নির্বাচনে অনেক ‘মৃত’ ভোটারের ভোট গণনা হয়েছে। তারা একটি তালিকাও প্রকাশ করেছে। ওই তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিরা কি আসলেই মৃত?
মিশিগান অঙ্গরাজ্যের এমন একটি তালিকা ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে বিবিসি। ওই তালিকায় প্রায় ১০ হাজার নাম আছে।
ট্রাম্পের একদল সমর্থক প্রথম টুইটারে ওই তালিকা পোস্ট করে। পরে সামাজিক যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমেও ওই তালিকা ভাইরাল হয়। রিপালিকান পার্টির কয়েকজন আইনপ্রণেতাও ওই তালিকা পোস্ট করেছেন।
তালিকায় নামের সঙ্গে জিপ কোড, ব্যালট পেপার কবে গ্রহণ করা হয়েছে সেই তারিখ, পুরো জন্মতারিখ ও পুরো মৃত্যুর তারিখ উল্লেখ করা আছে। তালিকায় কারো কারো মৃত্যু এমনকি ৫০ বছর আগে হয়েছে বলেও দেখানো হয়েছে।
বিবিসি জানায়, মিশিগান রাজ্যে একটি অনলাইন তথ্যভাণ্ডার আছে। যেখানে কারো নাম, জিপ কোড, জন্ম মাস ও বছর দিয়ে ‘সার্চ’ দিলে এ বছর তারা ‘অ্যাবসেন্টি ব্যালটে’ ভোট দিয়েছেন কিনা তা জানতে পারা যায়। যে কেউ ওই তথ্যভাণ্ডারে ঢুকতে পারেন।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে মৃতদের রেকর্ড রাখার জন্য বেশ কয়েক ওয়েবসাইটের তথ্যভাণ্ডার আছে।
কিন্তু সার্চ দিয়ে সবসময় যে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় তা কিন্তু নয়। কারণ, প্রায় ৩৩ কোটি মানুষের বিশাল দেশ যুক্তরাষ্ট্রে একই নামে একই সালে এমনকি একই মাসে জন্ম নেওয়া একাধিক মানুষ রয়েছে। সেখানে বেশকিছু ‘কমন’ নামও রয়েছে। ফলে একই নামের এক ব্যক্তি হয়তো ১৯৪০ সালের জানুয়ারিতে মিশিগানে এবং আরেক জন যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোথাও জন্ম নিয়েছেন। তাদের কেউ একজন হয়তো এখন মৃত। সেক্ষেত্রে তথ্যভাণ্ডার ভুল তথ্য দেখাতে পারে।
মিশিগানের ‘মৃত’ ভোটারদের ওই তালিকাটি যাচাই করতে বিবিসি প্রথমে এলোমেলো ভাবে ৩০টি নাম বেছে নেয়। তারপর তালিকায় থাকা সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তিকে যোগ করে মোট ৩১ জনের সম্পর্কে খোঁজ খবর শুরু করে।
বিবিসি অনুসন্ধানী দল ওই ৩১ নামের মধ্যে ১১ জনের সঙ্গে সরাসরি বা তাদের পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী বা তাদের সেবাকর্মীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছে যে তারা জীবিত!
বাকিদের মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যুর কোনো তথ্য কোথাও নেই। বরং তাদের জীবত থাকা পরিষ্কার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আর বাকি তিন জন সত্যিই মারা গেছেন।
বিবিসির অনুসন্ধানে যা মিলেছে:
বিবিসির দলটি প্রথমে মিশিগানের অনলাইন তথ্যভাণ্ডার ঘেঁটে দেখে নেয় তাদের বাছাই করা ৩১ জন ডাকযোগে হাতে পাওয়া ব্যাটল পেপার ফেরত পাঠিয়েছেন কিনা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া মিশিগানের ‘মৃত ভোটারের’ তালিকা। ছবি: বিবিসি
পরে তারা একই নামে মিশিগানে কেউ আছে কিনা সেটার খোঁজ শুরু করেন। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তারা বুঝতে পারেন তারা আসলে দুই দল লোক নিয়ে কাজ করছেন। যাদের একটি দল মিশিগানে থাকেন এবং ভোট দিয়েছেন। একই নামের আরেকটি দল যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোথাও মারা গেছেন।
তাদের একজন মৃতের তালিকায় নাম থাকা মিশিগানের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রবার্তো গার্সিয়া। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিতভাবেই বেঁচে আছি এবং নিশ্চিতভাবেই বাইডেনকে ভোট দিয়েছি। ট্রাম্পকে ভোট দিতে হলে আমাকে হয়তো মরতে হবে।”
১০০ বছরের আরেক নারীর সন্ধানও পাওয়া গেছে, যিনি এখন মিশিগানের একটি নাসিংহোমে থাকেন। অথচ, তালিকায় ১৯৮২ সালে তিনি মারা গেছেন বলে দেখানো হয়েছে।
ফোনে ৭২ বছরের মারিয়া আরেদন্দো বলেন, ‘‘আমার বয়স হয়েছে। কিন্তু আমি জীবিত আছি এবং দিব্যি শ্বাস নিচ্ছি। মানসিকভাবেও আমি ভালো আছি এবং আমি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী।”
তিনি জানান, তিনি জো বাইডেনকে ভোট দিয়েছেন এবং নিজের নাম ‘মৃত ভোটারদের তালিকায় দেখে খুব অবাক হয়েছেন’।
তবে সবার ক্ষেত্রেই বিষয়টা এরকম ছিল না। তালিকায় নাম থাকা আরেক শতবর্ষী নারী যাকে ১৯৭৭ সালে মারা গেছেন বলে দেখানো হয়েছে তিনি কিন্তু জীবিত থেকেই ডাকযোগে ভোট দিয়েছিলেন। গত সেপ্টেম্বরে তিনি ডাকযোগে ভোট দেন। কিন্তু ৩ নভেম্বর ভোটের দিনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি মারা যান বলে জানান তার প্রতিবেশীরা।
মিশিগান রাজ্যের নিয়মানুযায়ী, কোনো ভোটার যদি ডাকযোগে আগাম ভোট দেওয়ার পর ভোটের দিনের আগে মারা যান তবে তার ভোট বাতিল হবে না। তবে ওই নারীর ভোট গণনা করা হয়েছে কিনা বিবিসি দল সেটা নিশ্চিত হতে পারেনি।
আর যাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা যায়নি তাদের দৈনন্দিন কাজকর্মের খোঁজ খবরের মাধ্যমে তাদের জীবিত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানায় বিবিসি।
৩১ জনের ওই তালিকায় আরো দুই পুরুষকে পাওয়া গেছে যাদের নাম নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডারে একই আছে কিন্তু পোস্টকোড ও জন্মসাল ঠিক করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে উভয়ের বেলাতেই দেখা যায়, ভোটের তথ্যভাণ্ডারে তাদের মৃত বাবাদের নাম যা ছিল তাদেরও একই নাম এবং ঠিকানা নিবন্ধন করা আছে।
তাদের দুইজনের বেলাতেই তাদের নয় বরং তাদের মৃত বাবার নামে ব্যালটপেপার পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় একজন নির্বাচনী কর্মকর্তা বলেন, ‘‘তাদের দুইজনের মধ্যে একজন ডাকযোগে ভোট দিয়েছেন এবং সেটি গণনা করা হয়েছে। মৃত বাবার ভোট দিলেও ওই ব্যক্তি নিজের নামে আলাদা ভোট দিয়েছেন তেমন কোনো প্রমাণ নেই।”
অনুসন্ধানের ফলাফলের ভিত্তিতে যা বলা যায়:
ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তুলতে ট্রাম্প সমর্থকরা ১০ হাজার ‘মৃত’ মানুষের যে তালিকা প্রকাশ করেছে বিবিসির অনুসন্ধানে তার ত্রুটি স্পষ্টভাবেই খুঁজে পাওয়া গেছে। তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিরা মারা গেছেন তাতে কোনো ভুল নেই। কিন্তু তাদের বেশিভাগই মিশিগানে নয় অন্য কোথাও মারা গেছেন, সেটা বলাই যায়।
বিবিসির দল এলোমেলো ভাবে যে ৩১ জনকে বেছে নিয়েছে তাদের সবার বেলাতেই বিষয়টি এমন হয়েছে।
আইন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জাস্টিন লেভিট বলেন, ‘‘মিশিগান যত বড় রাজ্য, যদি শুধু নাম ও জন্মসাল ধরে সেখানে ওই তালিকা করা হয় তবে নিশ্চিতভাবেই তাতে ভুল আছে।”
এটাকে পরিসংখ্যানের ভাষায় ‘দ্য বার্থডে প্রবলেম’ বলা হয়। একটি শ্রেণীকক্ষে দুইজন শিক্ষার্থীর একই জন্মতারিখ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই যদি মিশিগানের লাখ লাখ ভোটারের তথ্য নিয়ে পুরো যুক্তরাষ্ট্রের মৃতের তথ্যভাণ্ডারে খোঁজ করা হয় তবে নাম ও জন্মসাল মিলবেই। বিশেষ যখন কোন মাসের কোন তারিখে জন্ম হয়েছে সেটা উল্লেখ না থাকে।
‘‘এটা পরিসংখ্যানের খুব সাধারণ বিষয়,” বলেন অধ্যাপক লেভিট।
-
শ্রীলঙ্কা: জরুরি সেবা ছাড়া সর্বত্র জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ
-
যুক্তরাষ্ট্রে মেক্সিকো সীমান্তে ট্রাকের ভেতরে ৪৬ লাশ
-
ফেইসবুকে বাঙালি শিক্ষার্থী, বেতন পৌনে ২ কোটি রুপি
-
টেক্সাসে ৪৬ লাশ: তাপদহের মধ্যেও ট্রাকটিতে কোনো পানি ছিল না
-
জর্ডানে ক্লোরিন গ্যাস ছড়িয়ে ১২ জনের মৃত্যু, অসুস্থ ২৫১
-
ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের জোয়ার এশিয়াজুড়ে
-
চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের পাল্টা প্রকল্প আনছে জি-৭
-
ইউক্রেইনের ব্যস্ত শপিং সেন্টারে রুশ হামলা
-
শ্রীলঙ্কা: জরুরি সেবা ছাড়া সর্বত্র জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ
-
ফেইসবুকে বাঙালি শিক্ষার্থী, বেতন পৌনে ২ কোটি রুপি
-
জর্ডানে ক্লোরিন গ্যাস ছড়িয়ে ১২ জনের মৃত্যু, অসুস্থ ২৫১
-
টেক্সাসে ৪৬ লাশ: তাপদহের মধ্যেও ট্রাকটিতে কোনো পানি ছিল না
-
যুক্তরাষ্ট্রে মেক্সিকো সীমান্তে ট্রাকের ভেতরে ৪৬ লাশ
-
ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের জোয়ার এশিয়াজুড়ে
সর্বাধিক পঠিত
- শারীরিক সম্পর্কও যখন ক্লান্তিকর
- হজে গিয়ে ভিক্ষা, বাংলাদেশি গ্রেপ্তার
- হজে গিয়ে গ্রেপ্তার: ‘বোমায় হাত হারিয়ে ডাকাতি ছেড়ে আন্তর্জাতিক ভিক্ষুক’
- পদ্মা সেতুতে দুর্ঘটনা এবং পুলিশের ছিটমহলের গল্প
- সাঁতরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কী কথা বললেন তরুণী?
- যুক্তরাষ্ট্রে মেক্সিকো সীমান্তে ট্রাকের ভেতরে ৪৬ লাশ
- বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের টোল ১ জুলাই থেকে
- পদ্মা সেতু পেরিয়ে উল্টাল ট্রাক, আহত ৪
- পদ্মা সেতুর নাট শুধু হাত দিয়ে খোলার কথা নয়: সিআইডি
- পুলিশের সামনে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা: চলছে প্রতিবাদ