হোয়াইট হাউজের অন্দরে ঘাপটি মেরে আছেন তিনি। এক সপ্তাহ আগে নির্বাচনে কারচুপির ভিত্তিহীন অভিযোগ করার পর থেকে ক্যামেরার সামনে তিনি আর কিছু বলছেন না।
উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। কিন্তু তা দেশে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া জরুরি জনস্বাস্থ্যর বিষয় নিয়ে নয়, বরং নির্বাচনে জয় পাওয়া নিয়ে। যে নির্বাচনে তিনি এরই মধ্যে হেরে গেছেন।
দেশের অভ্যন্তরীন পরিস্থিতির দিকে না তাকিয়ে পেন্টাগনের শীর্ষ পদে রদবদল ঘটানোর সময় তিনি ঠিকই বের করে নিয়েছেন। সরকারি কাজের যে স্বল্প কয়েকটি দিন ট্রাম্প কাটিয়েছেন, তা কার্যত নিউজ কভারেজ দেখে আর ভোট জালিয়াতি নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য টুইট করেই পার করেছেন।
সব মিলিয়ে ট্রাম্প থেকে শুরু করে তার পরিবার এমনকী উপদেষ্টারা পর্যন্ত উঠেপড়ে লেগে আছেন একটি গুরুদায়িত্ব- প্রেসিডেন্সি- বাঁচাতে। যে দায়িত্ব অর্থবহভাবে পালনের আগ্রহ কার্যত ট্রাম্পের আছে বলে মনে হচ্ছে না।
নির্বাচনের আগে হোয়াইট হাউসের চিফ অফ স্টাফ মার্ক মেডৌস সিএনএন এর ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়নে’ বলেছিলেন, মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না বরং তারা এর প্রতিকারের পথে এগুবেন।
আর এখন নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজকে মহামারীর ব্যাপারে আগের চেয়েও আরও বেশি উদাসীন মনে হচ্ছে। সিএনএন বলছে, নির্বাচনের সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মহামারী পরিস্থিতি বিস্ফোরক হয়ে উঠেছে।
বুধবারেই দেশটিতে ১ ৪০,৫০০ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১,১০০’র বেশি মানুষ। প্রায় ৬৫,০০০ রোগী হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছে; যে কোনও সময়ের চেয়ে রোগীর এই সংখ্যা বেশি।
সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে তাতে চিকিৎসকরা উদ্বিগ্ন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কায় আছেন তারা।
এই ধারা চলতে থাকলে জানুয়ারিতে ট্রাম্প মেয়াদ শেষের আগে দেশকে স্বাস্থ্যর দিক থেকে এক ভয়ঙ্কর খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে যাবেন এবং তখন বাইডেনের জন্য এই বিপর্যয় দিন দিনই আরও খারাপের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।
মহামারীর ব্যাপারে কেবল ট্রাম্পই উদাসীন তাই নয়, হোয়াইট হাউজের করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের প্রধান মাইক পেন্সও কয়েক সপ্তাহ ধরে কোনও ব্রিফিং দেননি। ফলে বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার আগে বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়া নিয়ে একরকম অন্ধকারে আছে আমেরিকানরা। নেতৃত্ব থেকে ট্রাম্পের সরে থাকাটা বিশেষ করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
এমোরি ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের নির্বাহী এসোসিয়েট ডিন কার্লোস ডেল রিও বলেছেন, “আমরা নেতৃত্বে শূন্যতার মধ্যে আছি।”
অন্যদিকে, সিএনএন এর চিকিৎসা বিষয়ক বিশ্লেষক ড. ইয়াসমিন বলেন, “শুরু থেকেই আমাদের যা দরকার ছিল এখনও সেটাই আমাদের প্রয়োজন: আর তা হচ্ছে মহামারীর মোকাবেলায় জোরাল পদক্ষেপ। কিন্তু আমরা সেটা দেখতে পাব না বলেই উৎকণ্ঠায় আছি… অন্তত নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ না নেওয়া পর্যন্ত। আর এই সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি তো খারাপ হতেই থাকবে।”