আইনি লড়াই কেবল শুরু: ট্রাম্পের প্রচার শিবির

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের জয়ের দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে আইনি লড়াই কেবল শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2020, 05:13 AM
Updated : 10 Nov 2020, 05:13 AM

“নির্বাচন এখনও শেষ হয়নি। শেষ এখনও অনেক দূরে,” সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই বলেছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কেইলি ম্যাকএনানি।

বিবিসি জানিয়েছে, সংবাদ সম্মেলনে ম্যাকএনানি নির্বাচনে কারচুপির একগাদা অভিযোগ আনলেও জালিয়াতির তেমন কোনো প্রমাণ হাজির করেননি, যা ভোটের এখনকার ফলাফল বদলে দিতে পারে।

ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনই যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন বলে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ভোটে দেখা গেলেও, ট্রাম্প এখনও হার স্বীকার করে নেননি।

শনিবার বিভিন্ন গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ‘সুইং স্টেট’ পেনসিলভেইনিয়াতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জয় পেতে যাচ্ছেন বলে নিশ্চিত করার পর বাইডেনের ইলেকটোরাল ভোট ২৭০ এর সীমা পার হয়।

বারাক ওবামা আমলের সাবেক এই ভাইস প্রেসিডেন্ট এরপর ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করলেও সোমবার ট্রাম্প ফের নির্বাচনের ফল মেনে নিতে আপত্তি জানান।

অকাট্য কোনো প্রমাণ ছাড়াই তিনি টুইটারে দেওয়া পোস্টে বলেন, ৩ নভেম্বরের ভোটে ‘অভাবনীয় ও অবৈধ কর্মকাণ্ড’ হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থার দায়িত্বে থাকা জেনারেল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনও বাইডেনের উপদেষ্টাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছে।

নির্বাচনে কে বিজয়ী হয়েছে তা ‘নিশ্চিত করে বলা না যাওয়ায়’ আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা যাচ্ছে না, বলেছে তারা।

ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করলে বাইডেন প্রশাসনও আইনি লড়াইয়ের কথা বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছে সিবিএস নিউজ।

মার্কিন গণমাধ্যমের বেশ ক’জন হোয়াইট হাউস প্রতিবেদক জানিয়েছেন, নির্বাচন নিয়ে আপত্তি থাকলেও ট্রাম্প জানুয়ারিতেই হোয়াইট হাউস ছাড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি এরই মধ্যে ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়েও কথাবার্তা শুরু করেছেন, জানিয়েছে তারা। 

সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে ম্যাকএনানি পেনসিলভেইনিয়ার ফিলাডেলফিয়াতে রিপাবলিকান নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের কেন্দ্রে পর্যাপ্ত প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন। রাজ্যটির নির্বাচনী কর্মকর্তারা বিপুল সংখ্যক ডেমোক্র্যাটকে তাদের ভুলভাল ব্যালট ঠিক করে নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল বলেও দাবি করেন তিনি।

ফিলাডেলফিয়া এনকোয়ারার জানিয়েছে, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদেরকেই ভোট গণনার টেবিলের ১৩ থেকে ১০০ ফুট দূরে রাখা হয়েছিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে এই দূরত্ব জরুরি ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নির্বাচনী কর্মকর্তারা।

পেনসিলভেইনিয়ার কিছু কিছু এলাকা ভোটারদেরকে ভুলভাল ব্যালট ঠিক করার সুযোগ দিলেও অনেক এলাকায় এ সুযোগ ছিল না বলেও জানিয়েছে এনকোয়ারার।

রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারউইম্যান রনা ম্যাকডেনিয়েল বলেছেন, নির্বাচনের অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে নিজেদের তদন্তে তারা কেবল মিশিগান থেকেই ১৩১টি এফিডেবিট সংগ্রহ করেছেন। 

“যদি অন্য পায়ে জুতোটা পরানো হতো। যদি এই ধরনের সামান্য ব্যবধানই থাকতো আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সবগুলো রাজ্যে এগিয়ে থাকতেন, তাহলে গণমাধ্যমই চিৎকার করে বলতো, ‘এই নির্বাচন শেষ হয়নি’,” বলেছেন তিনি।

পেনসিলভেইনিয়ায় বাইডেনের জয়ের প্রত্যায়নের ক্ষেত্রে রাজ্যটির কর্মকর্তাদের থামাতে জরুরি ভিত্তিতে আদেশ জারি চেয়ে সোমবার পেনসিলভেইনিয়ার ফেডারেল আদালতে একটি মামলা করেছে ট্রাম্পের প্রচার শিবির।

এদিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয়ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে কৌঁসুলিদের অনুমতি দিয়েছে।

এদিকে রিপাবলিকান পার্টির জ্যেষ্ঠ সদস্যদের অনেকেই ট্রাম্পকে হার মেনে নিতে চাপ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

সোমবার ডেমোক্র্যাট নেতা মিচ ম্যাককনেল নির্বাচন নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের একহাত নিয়েছেন।

“ যারা ৪ বছর ধরে আগের নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে গেছে, এবং যারা এবারও নির্বাচনে হারলে, কেবল তারা হারলেই নির্বাচনকে অবৈধ বলবে বলে আগে থেকেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল তাদের কাছ থেকে প্রেসিডেন্ট কীভাবে দ্রুত ও আনন্দের সঙ্গে প্রাথমিক ফলাফল মেনে নিতে পারেন এই সংক্রান্ত বাকোয়াজ শোনার কোনো প্রয়োজন নেই,” বলেছেন কেন্টাকির এই সিনেটর। 

“নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ দেখার এবং আইন অনুযায়ী ভোট পুনর্গণনার অনুরোধ করার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে প্রেসিডেন্টের। উল্লেখ করা দরকার, এই প্রক্রিয়ায় ধনী গণমাধ্যমগুলোর কোনো ধরনের ভূমিকা রাখার সুযোগ সংবিধানে নেই,” বলেছেন তিনি।