ট্রাম্প নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার না করলে কী হতে পারে?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রয়োজনীয় ইলেকটোরাল ভোটে জয় নিশ্চিত করেছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন। আর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ভোট চুরির অভিযোগ তুলে দাবি করেছেন, নির্বাচনে তিনিই জিতেছেন। তাই ক্ষমতা ছাড়বেন না এবং বিচার পেতে আইনি লড়াইয়ে’ নামবেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2020, 07:34 PM
Updated : 8 Nov 2020, 08:16 PM

ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘এই নির্বাচন শেষ হতে আরও অনেক বাকি আছে।”

ভোট চুরির অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় সময় সোমবার ট্রাম্পের আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টে যাবেন বলেও জানিয়েছে বিবিসি। যদি ট্রাম্প পরাজয় স্বীকার না করেন তবে কী হবে?

হার স্বীকার করা না করায় কিছু আসে যায় না

যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট যদি নির্বাচনে পরাজিত হন এবং সেই ফল যদি নির্বাচন কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে বিজয়ী নিশ্চিত করে, তবে পরাজয় স্বীকার করা বা না করায় কিছু এসে যায় না।

নির্বাচনের পর হেরে যাওয়া প্রার্থীর পরাজয় স্বীকার করে বিজয়ীকে অভিনন্দন জানানো একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এটা রাজনৈতিক সৌজন্য ছাড়া আর কিছু নয়। আইনে পরাজয় স্বীকারের বাধ্যবাধকতা নেই।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীরা বরাবরই পরাজয় স্বীকার করে ফোন করে বা চিঠি লিখে বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়ে এসেছেন, যা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ট্রাম্প এখনও সে পথে হাঁটছেন না। অন্তত তার টুইটগুলো সে ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

তবে সিএনএন হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ট্রাম্পের জামাতা ও জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার বাস্তবতা স্বীকার করে নিতে শ্বশুরকে বুঝিয়েছেন। যদিও এ খবরের সত্যতা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

২০ জানুয়ারির পর যা হতে পারে

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, নভেম্বরের নির্বাচনের পর নতুন বছরের ২০ জানুয়ারি দুপুরে নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহণ করাই নিয়ম। সংবিধানে বিষয়টি বেশ স্পষ্ট করে লেখা আছে। তাই এর ব্যত্যয় হওয়ার সুযোগ নেই।

সাধারণত কংগ্রেস ভবনের সামনে শপথ অনুষ্ঠান হয় এবং শপথ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে সব ক্ষমতা নতুন প্রেসিডেন্টের হাতে চলে যাবে।

তখনও যদি ট্রাম্প ওভাল অফিস আঁকড়ে ধরে বসে থাকেন, সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিস তাকে সেখান থেকে বের করে দিতে পারে বলে জানায় সিএনএন।

নতুন প্রেসিডেন্ট সিক্রেট সার্ভিসকে সেই নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তবে ট্রাম্প যদি নিজে থেকে পরাজয় স্বীকার না করেন তবে তাকে হোয়াইট হাউজ থেকে জোর করে বের করে দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের আছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

কিন্তু ভোটের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার যখন ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের থেকে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেনের এগিয়ে থাকার ব্যবধান সুস্পষ্ট হতে থাকে তখনই বাইডেনের নিরাপত্তা জোরদার করেছিল সিক্রেট সার্ভিস।

নিরাপত্তা বাড়াতে দিন দিন বাইডেনকে ঘিরে সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্ট সংখ্যা বাড়ছে। উইলমিংটনের আকাশসীমার নিরাপত্তাও বেড়েছে। কর্মীদের নিয়ে উইলমিংটনে একটি কনভেনশন সেন্টারে ঘাঁটি গেড়ে ভোট পর্যবেক্ষণ করেছেন বাইডেন।

ট্রাম্পকে কী হোয়াইট হাউজ থেকে বের করে দেওয়া যাবে?

আগামী ২০ জানুয়ারি দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বর্তমান মেয়াদ শেষ হবে এবং ওই দিনই নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নেবেন।

যেহেতু মঙ্গলবারের নির্বাচনে তাকে পেছনে ফেলে জো বাইডেন জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত করেছেন। তাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে গেছেন, এ কথা বলা যায়। যদিও ট্রাম্প এখনও নিজেকে ‘বিপুল ভোটে বিজয়ী’দাবি করছেন এবং সুপ্রিম কোর্টেও আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার ধমকি দিচ্ছেন।

কিন্তু নির্বাচন কমিশন বাইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করলে এবং ২০ জানুয়ারি শপথ অনুষ্ঠান হয়ে গেলে দেশের সামরিক বাহিনী এবং বিচার বিভাগসহ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ তার হাতে চলে যাবে। তখন তিনি চাইলে ট্রাম্পকে ওভাল অফিস থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন।

এর আগে বাইডেন একবার প্রয়োজনে তেমন করার ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত কী ঘটে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে না চাইলে তাকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হবে কিনা বা এ ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে, সে বিষয়ে দেশটির সংবিধানে কিছু উল্লেখ করা নেই।

তবে ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বলে ধারণা রাজনীতি বিশ্লেষকদের। দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখতে কংগ্রেস এবং ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টি থেকেই তাকে পদত্যাগ বা ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য চাপ দেওয়া হবে বলে ধারণা তাদের।

আরও যেভাবে সংকট তৈরি হতে পারে

সবশেষ ভোট গণনার খবর অনুযায়ী, বাইডেন ২৭৯টি এবং ট্রাম্প ২১৪টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু আসলেই কি তা নিশ্চিত হয়েছে?

নির্বাচন কমিশন থেকে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার এখনও ঢের বাকি। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রক্রিয়া বেশ জটিল হওয়ায় দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্ত বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

এখনও কেবল পপুলার ভোট গোনা হচ্ছে। পপুলার ভোট গোনা শেষে দুই বা তিন সপ্তাহের মধ্যে তার ফলাফল সার্টিফাই করতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজ্যের গভর্নর একাজ করেন।

পপুলার ভোটের ভিত্তিতে রাজ্যের ইলেকটোরাল কলেজ সদস্যরা আগামী ১৪ ডিসেম্বর সমবেত হয়ে প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে তাদের ভোট দেবেন।

সাধারণ নিয়মে একেটি রাজ্যে পপুলার ভোটে যে প্রার্থী বিজয়ী হন তিনিই ওই রাজ্যের সবগুলো ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে যান। সেকারণেই পপুলার ভোটের ফল জানার সাথে সাথেই সবাই ধরে নেন যে ইলেকটোরাল ভোটের ফল কী হবে। কিন্তু বাস্তবে বিষয়টা তেমন নাও হতে পারে।

আবার অনেকক্ষেত্রে কংগ্রেস বিজেতা নির্ধারণ করে দেয়। তা যদি না হয়, তাহলে ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস থেকে সরানো মুশকিল হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেন জিতলেও এ মুহূর্তে সময়টা স্বাভাবিক নয়।

ট্রাম্প ও তার প্রচারশিবির এরই মধ্যে ভোট গণনাকে চ্যালেঞ্জ করে আইনি পথে গেছে। সেইসব আইনি লড়াইয়ের অবসান না হওয়া পর্যন্ত ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে থাকার সিদ্ধান্ত নিলে কিংবা ওইসব আইনি লড়াইয়ের কারণে কংগ্রেসের বিজেতা ঠিক করে দিতে দেরি হলে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি দাঁড়িয়ে যেতে পারে।

সংকট তৈরি হলে ট্রাম্প কী সুবিধা পাবেন?

ইলেকটোরাল কলেজের সদস্য নির্ধারণ করার দায়িত্ব অঙ্গরাজ্যের আইনসভার। এ ক্ষেত্রে আইনসভা চাইলে জো বাইডেনের সমর্থক প্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে নিজেদের পছন্দমত ইলেকটোরাল কলেজের প্রতিনিধিদের ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে পারেন।

সেক্ষেত্রে ইলেকটোরাল ভোটের দুটো স্লট হতে পারে। একটা হচ্ছে, যা আসলেই পপুলার ভোটের রায় প্রতিফলিত করবে, আরেকটি রাজ্যের আইনসভাগুলোর আলাদা করে পাঠানো রায়।

আগামী ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট গোনা হবে।

কংগ্রেসে ভোট গণনার বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। তিনি যদি ইলেকটোরাল কলেজের ভোটগুলোর দুটি স্লটের একটা রেখে অন্যটা ফেলে দেন বা দুটোর কোনটাই গ্রহণ না করেন, তাহলে সাংবিধানিক সঙ্কট দেখা দিতে পারে।

সেক্ষেত্রে প্রতিটি অঙ্গরাজ্য একটি করে ভোট পাবে। আর এখন পর্যন্ত অঙ্গরাজ্যে জয়ের হিসাবে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাটিক নিয়ন্ত্রিত হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসও তখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় চলে আসবে।