ট্রাম্প বা বাইডেন, রাশিয়ার পছন্দের নয় কেউই

রাশিয়ায় ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে যে উল্লাস দেখা গিয়েছিল এবার তা নেই। ট্রাম্পকে তারা আর চাইছে না। ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেনকেও তাদের পছন্দ নয়।

>>রয়টার্স
Published : 30 Oct 2020, 06:19 PM
Updated : 30 Oct 2020, 06:46 PM

গতবারের নির্বাচনে ট্রাম্পের জয় উদযাপন করতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও প্রবীণ আইনপ্রণেতা ভ্লাদিমির ঝিরিনোভস্কি পার্লামেন্টে শ্যাম্পেন পার্টি দিয়েছিলেন। অথচ এবার উল্টোটা করার পরিকল্পনা করেছেন।

রাশিয়ার লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রধান ঝিরিনোভস্কি এ সপ্তাহান্তে জানিয়েছেন, তার দলের তরুণ কর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের দিনের আগে মস্কোয় মার্কিন দূতাবাসের সামনে “বাইডেন, ট্রাম্প নিপাত যাক!” স্লোগান দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

আগামী ৩ নভেম্বর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে। ঝিরিনভস্কি বলেন, ‘‘তিনি (ট্রাম্প) আমাদের ভালর জন্য কিছুই করেননি।

“কিন্তু আমরা এখন একটি রুশ প্রবাদ মতেই কাজ করছি। ওই প্রবাদে বলা হয়েছে, দুই শয়তানের মধ্যে বাছতে হলে অপেক্ষাকৃত কম শয়তানকেই বেছে নেওয়া উচিত। বাইডেন আরও বড় শয়তান।”

২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে হাততালি দিয়ে তাকে সাধুবাদ জানানো হয়েছিল। তারা ভেবেছিল, ট্রাম্প যেহেতু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসা করেন তাই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসায় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন হবে।

কিন্তু গত চার বছরে সেই উচ্ছ্বাসের ছিঁটেফোটাও আর অবশিষ্ট নেই। সব বাষ্প হয়ে উড়ে গেছে। তবে ট্রাম্পের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে যে মেরুকরণ হয়েছে তাতে রাশিয়ার রাজনীতিকদের একাংশ খুশি হয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রুশ কর্মকর্তা বলেন, ‘‘যখন তারা (আমেরিকান) নিজেদের মধ্যে বিবাদ নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে তখন তারা আমাদের দিকে পুরোপুরি মনোনিবেশ করার সময় পায় না। আর এটাই আমরা চাই।”

“অন্য কেউ আমাদের অভ্যন্তরীন বিষয়ে নাক গলাক তা আমরা একদমই পছন্দ করি না।”

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট থিংক ট্যাঙ্ক ‘রাশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল’এর প্রধান আন্দ্রেই করতুনোভ বলেন, ‘‘ট্রাম্পের অধীনে বলতে গেলে দুই দেশের সম্পর্কের সবগুলো ভিতই ধ্বংস হয়ে গেছে।“

“আমাদের মধ্যে কূটনৈতিক লড়াই চলেছে। উভয় দেশের দূতাবাসগুলো যেন শত্রু ঘেরা দুর্গে পরিণত হয়েছে। আমাদের মধ্যে কূটনীতি যেন পরষ্পরের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্যেই আটকে গেছে।”

ক্রেমলিন অবশ্য বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় যেই আসুন। তারা তার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ট্রাম্প এবং বাইডেন উভয়ের প্রশংসা ও সমালোচনা দুই করেছেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাশিয়ার এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, যদি ট্রাম্প বিজয়ী হন তবে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের আশা শূন্য। আর বাইডেনকে তারা রাশিয়ার জন্য অধিক কঠোর মনে করছেন।

কিন্তু বাইডেন ট্রাম্পের মতো ‘খামখেলায়ী নন, তিনি ট্রাম্পের মতো ‍অপ্রত্যাশিত আচরণও করেন না। বরং বাইডেন জিতলে ‘পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ’ নিয়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে অগ্রসর হবেন।

বাইডেন পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো বা নতুন চুক্তির বিষয়ে সরাসরি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

তবে বাইডেন জিতলে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার বোঝা আরও বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাই ঝিরিনোভস্কির মতো নেতাদের মতে বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্পই এখনও মস্কোর অপেক্ষাকৃত পছন্দের প্রার্থী। যদিও তাকে নিয়ে গতবারের মত উচ্ছ্বাস আর নেই।