থাইল্যান্ডে রাজার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, জার্মান দূতাবাস অভিমুখে পদযাত্রা

থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচার পদত্যাগের দাবিতে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে সেই বিক্ষোভকারীরা এখন রাজা মাহা ভাজিরালংকর্ণর কার্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।

>>রয়টার্স
Published : 26 Oct 2020, 07:35 PM
Updated : 26 Oct 2020, 07:35 PM

সোমবার হাজার হাজার গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারী রাজধানী ব্যাংককে জার্মান দূতাবাস অভিমুখে রাজার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী পদযাত্রা করেছে।

জার্মানিতে দীর্ঘ সময় অবস্থানকালে রাজা কী করেন তার তদন্ত চায় বিক্ষোভকারীরা। তারা দূতাবাসের সামনে জড়ো হয়ে ‘আমরা মানুষ, (রাজার পায়ের) ধুলো নই’স্লোগান দিয়েছে।

থাই রাজা ভাজিরালংকর্ণ বেশিরভাগ সময় জার্মানিতে বসবাস করেন। জার্মান সরকারও তাদের দেশে বসে ভাজিরালংকর্ণর কোনও ধরনের রাজনীতি করা মেনে নেবে না বলে জানিয়েছে।

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস বলেন, ৬৮ বছরের ভাজিরালংকর্ণ বাভারিয়ায় তার অস্থায়ী আবাসে থেকে কী করেন জার্মান সরকার তার উপর নজর রেখে আসছে।

গত জুলাই থেকে প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচার পদত্যাগের দাবিতে থাইল্যান্ডে বিক্ষোভ চলছে। মূলত শিক্ষার্থীরা ওই বিক্ষোভ করছে।

২০১৪ সালে সেনা অভ্যূত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন সাবেক জেনারেল ওচা। গত বছর অবশ্য তিনি নির্বাচন দেন এবং ভোটের মাধ্যমে জয়ী হয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু ওই ভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে বিতর্ক আছে।

ওচার বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ থেকেই রাজার বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। আর এতে কয়েক দশকের মধ্যে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে থাই রাজতন্ত্র।

সোমবার বিক্ষোভকারীরা জার্মান দূতাবাসে গিয়ে ‘জনগণের’ পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি পাঠ করেছে।

এতে রাজার বিরুদ্ধে থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ অভিযোগ করে বলা হয়, “রাজা এখন প্রাধানমন্ত্রী প্রায়ুথের ‘হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছেন। পরিবর্তনের সময় এসে গেছে। গণতন্ত্রের এই জোয়ার আটকে রাখা যাবে না। সামন্ততন্ত্রের পতন হোক, গণতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক।”

আলাদা একটি চিঠিতে বিক্ষোভকারীরা জার্মান সরকারের কাছে রাজা ভাজিরালংকর্ণের কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্তের আবেদন করেছে। বহু মানুষের স্বাক্ষর করা এ চিঠিতে বলা হয়, ‘‘শুভেচ্ছান্তে ধুলো নয়, মানুষের পক্ষ থেকে।”

প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী থাইল্যান্ডে সাধারণ মানুষদের রাজার পায়ের নীচের ধুলা বলেই গণ্য করা হয়। সেখানে রাজপরিবারের সমালোচনা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। যার শাস্তি সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড।

কিন্তু সম্প্রতি বিক্ষোভকারীরা ওই ‘ট্যাবু’ভেঙে বেরিয়ে এসে রাজা এবং রাজপরিবার নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, থাইল্যান্ডের রাজপরিবার দেশটিতে দশকের পর দশক ধরে সেনাশাসন থাকার পক্ষে সমর্থন ও সাহায্য করে আসছে। করোনাভাইরাস মহামারীর সময় রাজা ভাজিরালংকর্ণের দেশ ও জনগণকে ছেড়ে ইউরোপে বসবাস করা নিয়েও তারা অভিযোগ তুলেছে।

ওদিকে, থাইল্যান্ডের চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারণে রাজার জার্মানিতে বসবাস নিয়ে জার্মান সরকারও কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নজরে রাখছি। যদি আমরা অবৈধ কিছু খুঁজে পাই তবে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সোমবার থাইল্যান্ডের পার্লামন্টের বিশেষ অধিবেশনে বিরোধী দলের নেতারাও প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচাকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে রাজপরিবারকে কাজে লাগানো বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ওচা অবশ্য গত সপ্তাহেই জানিয়ে দিয়েছেন, বিক্ষোভের মুখে তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন না এবং রাজপরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা তার সরকারের দায়িত্ব।

সোমবার তিনি পার্লামেন্টে বলেন, ‘‘আমি আজও বিশ্বাস করি আমাদের মধ্যে যতই রাজনৈতিক বিভেদ থাকুক, আমরা সবাই এখনও আমাদের দেশকে ভালবাসি।”