ট্রাম্প-বাইডেন শেষ বিতর্কেও প্রাধান্য পেল করোনাভাইরাস, বর্ণবাদ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে মুখোমুখি শেষ বিতর্কে ডনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মার্কিন প্রশাসনের ভূমিকা, বর্ণবাদ ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানান বিষয়ে একে অপরকে ঘায়েল করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2020, 06:46 AM
Updated : 23 Oct 2020, 06:46 AM

বৃহস্পতিবার টেনেসির ন্যাশভিলে অনুষ্ঠিত এ বিতর্কে দুই প্রার্থী নিজেদের কার্যক্রমের পক্ষে সাফাই গাওয়ার পাশাপাশি দুর্নীতির পাল্টাপাল্টি অভিযোগও এনেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি। 

করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ে আলোচনায় নির্বাচিত হলে আসন্ন দিনগুলোতে আরও লকডাউন দেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি বাইডেন। অন্যদিকে ট্রাম্প বলেছেন, অর্থনীতি সচলে বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়।

ছেলে হান্টারের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বাইডেন লাভবান হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী তার বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিদ্বন্দ্বীর কর রিটার্ন সংক্রান্ত অস্বচ্ছতার প্রসঙ্গ সামনে আনেন। 

জাতীয় পর্যায়ের জনমত জরিপগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনকেই রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের চেয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।

তবে ‘দোদুল্যমান’ হিসেবে পরিচিত রাজ্যগুলোতে দুইজনের মধ্যে ব্যবধান সামান্য। শেষ পর্যন্ত এ রাজ্যগুলো কোন দিকে হেলবে, তার উপরই নির্ভর করবে আগামী ৪ বছর কে হোয়াইট হাউসের দখল পাচ্ছেন।

দেশটিতে এবার রেকর্ড আগাম ভোটও পড়েছে। ডাকযোগে এবং কেন্দ্রে গিয়ে এরই মধ্যে ৪ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি ভোটার তাদের রায় জানিয়ে এসেছেন। 

বৃহস্পতিবার রাতের বিতর্ককে দুই প্রার্থীর মধ্যে ২৯ সেপ্টেম্বর হওয়া প্রথম বিতর্কের তুলনায় বেশ সুশৃঙ্খল মনে হয়েছে। সেদিন দু’জন একে অপরকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ ও অপমান করেছিলেন।

ন্যাশভিলের শেষ বিতর্কেও ছিল ব্যক্তিগত আক্রমণের ছড়াছড়ি। দুই প্রার্থী যে একে অপরকে ভয়াবহ অপছন্দ করেন, এদিনের আলোচনায় ফুটে উঠেছিল তাও। 

বিতর্কে করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলা নিয়ে দুই প্রার্থী বিপরীতধর্মী অবস্থান নেন।

বিজ্ঞানীরা যদি পরামর্শ দেয় তাহলে আরও লকডাউন দেওয়া হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বাইডেন জানান তিনি সেরকম সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

আর ট্রাম্প বলেছেন, ভাইরাস সংক্রমণে অধিকাংশ মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠায় এখন আরও শাটডাউন দেওয়ার কথা বিবেচনা করাই ভুল হবে।

“এটা বিশাল দেশ, বিশাল অর্থনীতি। মানুষজন তাদের চাকরি হারাচ্ছে, তারা আত্মহত্যা করছে। তাদের হতাশা, অ্যালকোহল ও মাদক গ্রহণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এর আগে কেউই এমনটা দেখেনি,” বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

বাইডেন তার আলোচনায় মহামারীতে যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর দায় ট্রাম্পকে দিয়েছেন।

“এত বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর জন্য যিনি দায়ী, তার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকা উচিত নয়,” বলেছেন তিনি।

বর্ণবাদ প্রসঙ্গে আলোচনায় ট্রাম্প বলেছেন, “এ কক্ষে যারা আছেন, আমি তাদের মধ্যে সবচেয়ে কম বর্ণবাদী।” তিনি ১৯৯৪ সালের অপরাধ বিলের কথাও তোলেন, যার খসড়ায় বাইডেন সহায়তা করেছিলেন। ওই আইনের কারণে বিপুল সংখ্যক আফ্রিকান-আমেরিকানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করে আসছেন।

বাইডেন তার আলোচনায় ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অন্যতম বর্ণবাদী প্রেসিডেন্ট’ অ্যাখ্যা দেন।

“তিনি প্রতিটি বর্ণবাদী আগুনেই হাওয়া দেন,” বলেছেন সাবেক এ মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। 

মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা কাগজপত্রহীন অভিবাসীদেরকে তাদের সন্তানদের কাছ থেকে আলাদা করার নীতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প জানান, ওবামা প্রশাসনের আমলেও অভিবাসী শিশুদের আটক করা হয়েছিল।

“খাঁচাগুলো কে বানিয়েছিল, জো?,” ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন ট্রাম্প।

বাইডেন বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনই অভিবাসী পরিবারগুলোর সদস্যদের নির্দয়ভাবে আলাদা করেছে। তাদের এ চর্চাকে ‘অপরাধ’ বলেও অ্যাখ্যায়িত করেন তিনি।

২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে চমকে দেওয়া ট্রাম্প তার আলোচনায় বাইডেনের ছেলে হান্টারের ‘ফাঁস হওয়া’ ইমেইলের প্রসঙ্গ তুলে চীনের সঙ্গে তার ব্যবসায়িক সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আনেন।

“আমার মনে হয়, এ বিষয়ে আপনার একটি ব্যাখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের প্রাপ্য,” বলেন ট্রাম্প।

জবাবে বাইডেন বলেন, “আমি কোনো দেশের কাছ থেকে কখনোই একটি পয়সাও নেইনি।”

চীনে ট্রাম্পের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে- নিউ ইয়র্ক টাইমসে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রে ও চীনে প্রেসিডেন্টের দেওয়া কর নিয়ে তুলনা করেন।  নিউ ইয়র্ক টাইমস বলেছে, চীনে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ট্রাম্পের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬১ ডলার কর দেওয়া হয়েছিল। একই পত্রিকা আগের এক প্রতিবেদনে ট্রাম্প ২০১৬-১৭ সালে মাত্র ৭৫০ ডলার কর দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিল। 

এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, “আমার অনেকগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, সারা বিশ্বেই আছে এবং সেগুলো সবই তালিকাভুক্ত। আমি একজন ব্যবসায়ী, যিনি ব্যবসা করেন।”

জ্বালানি নীতি নিয়ে আলোচনায় ট্রাম্প তার প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে তেল শিল্প নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চান।

“আপনি কি তেল শিল্প বন্ধ করে দেবেন?,” প্রশ্ন করেন তিনি।

“আমি তেল শিল্পকে রূপান্তর করবো। কেননা এটি ভয়াবহ দূষণ ঘটাচ্ছে,” বড় বড় তেল কোম্পানিগুলোকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে প্রতিস্থাপন এবং ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রকে কার্বন নিরপেক্ষ দেশে পরিণত করার পরিকল্পনার কথা জানান বাইডেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বলেন, “সত্যিকার অর্থে তিনি যা বলতে চাচ্ছেন, তা হল তিনি তেল শিল্পকে ধ্বংস করতে যাচ্ছেন। টেক্সাস, আপনাদের কি এটা মনে থাকবে? পেনসিলভানিয়া, ওকলাহোমা, ওহাইও মনে থাকবে?”