কুচকাওয়াজে নতুন ‘দানবাকৃতির’ ক্ষেপণাস্ত্র দেখাল উত্তর কোরিয়া

করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে অনুষ্ঠিত সামরিক কুচকাওয়াজে আগে কখনো দেখায়নি এমন একটি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের প্রদর্শনী করেছে উত্তর কোরিয়া।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2020, 09:07 AM
Updated : 11 Oct 2020, 09:32 AM

শনিবার ভোরের আগে হওয়া অভিনব এ কুচকাওয়াজে দেশটি দুই বছরের মধ্যে প্রথম দূরপাল্লার বিভিন্ন অস্ত্রেরও প্রদর্শনী করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কুচকাওয়াজে দুই পাশে ১১ চাকাবিশিষ্ট বিশেষ একটি পরিবহনে করে নিয়ে যাওয়া যে ক্ষেপণাস্ত্রটি দেখানো হয়েছে, কার্যকর বলে প্রমাণিত হলে এটি হবে বিশ্বের অন্যতম বড় রোড-মোবাইল আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। 

“এই ক্ষেপণাস্ত্রটি দানবাকৃতির,” বলেছেন ওপেন নিউক্লিয়ার নেটওয়ার্কের উপপরিচালক মেলিসা হানহাম। 

এবারের কুচকাওয়াজে উত্তর কোরিয়া তাদের পরীক্ষা করা সবচেয়ে দূরপাল্লার হোয়াসং-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রেরও প্রদর্শনী করেছে; অন্য একটি ক্ষেপণাস্ত্রও দেখিয়েছে তারা, যেটিকে সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বলে মনে করা হচ্ছে।

দেশটির ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এ কুচকাওয়াজে পিয়ংইয়ং চলতি বছরের শুরুর দিকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নতুন একটি ‘কৌশলগত অস্ত্র’ উন্মোচন করতে পারে বলে দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। 

মার্কিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা উত্তর কোরিয়ার নতুন এ আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের প্রদর্শনীকে ‘হতাশাজনক’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন। পূ্র্ণাঙ্গ পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে আলোচনার টেবিলে বসতে দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

রয়টার্স বলছে, ২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পসহ বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে কিম জং উনের বৈঠক শুরুর পর পিয়ংইয়ং এবারই প্রথম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে কেন্দ্র করে কুচকাওয়াজ করল।

কুচকাওয়াজে দেওয়া ভাষণে অবশ্য কিম যুক্তরাষ্ট্র কিংবা স্থবির হয়ে পড়া পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ আলোচনার বিষয়ে সরাসরি কিছু বলেননি।

“আমরা ধারাবাহিকভাবে আমাদের জাতীয় প্রতিরক্ষা শক্তি ও আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধাস্ত্র বানিয়ে যাবো,” বলেছেন উত্তর কোরিয়ার এ সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর নেতা। পিয়ংইয়ংয়ের সামরিক শক্তি কখনোই আগ্রাসনে ব্যবহার হবে না বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

ভাষণে কিম উত্তর কোরিয়ার অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়ে তার দেওয়া সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, টাইফুন এবং করোনাভাইরাস মহামারীকে দায়ী করেন।

“আপনারা যে বিশাল আস্থা রেখেছেন, কখনোই তার ঠিকঠাক প্রতিদান দিতে পারিনি বলে আমি লজ্জিত। আমার প্রচেষ্টা ও নিষ্ঠা জনগণকে কঠিন জীবনযাপন থেকে বের করে আনার জন্য যথেষ্ট ছিল না,” বলেছেন তিনি। 

ভিডিওতে মধ্য রাতেই কিমকে নতুনভাবে সজ্জিত কিম ইল সাং স্কয়ারে হাজির হতে দেখা গেছে। সামরিক কর্মকর্তা পরিবেষ্টিত, ধূসর স্যুট ও টাই পরা উত্তরের এ শীর্ষ নেতা পরে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন এবং শিশুদের কাছ থেকে ফুল গ্রহণ করেন।

তিনি প্রায় আধঘণ্টা বক্তব্য দেন। হালকা ঠাণ্ডা বাতাসেও তাকে প্রায়ই ঘামতে, বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানানোর সময় অশ্রু ফেলতে এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শনীর সময় হাসতে দেখা গেছে।

ব্যাপক সুসজ্জিত এবারের কুচকাওয়াজে হাজার হাজার সৈন্যের নানান ফর্মেশনে মার্চের পাশাপাশি উত্তর কোরিয়া নতুন ট্যাংকের মতো বিভিন্ন প্রচলিত সামরিক সরঞ্জামেরও প্রদর্শনী করেছে। তাদের যুদ্ধবিমানগুলোকে আলো ও আতশবাজি ছুড়তেও দেখা গেছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুচকাওয়াজে উত্তর কোরিয়া যে নতুন ও অতিকায় আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র দেখিয়েছে সেটি সম্ভবত একাধিক স্বতন্ত্র রিএন্ট্রি ভেহিক্যাল বহনে সক্ষম, যা ক্ষেপণাস্ত্রটিকে একাধিক লক্ষ্যে আঘাত হানার সুযোগ করে দিতে পারে। এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রকে আটকানো বেশ কঠিন হতে পারে বলেও অনুমান করছে তারা।

ক্ষেপণাস্ত্রটি সোভিয়েতের বানানো আর-১৬ কিংবা আর-২৬ আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে বেশি কার্যকর এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো স্থানে দুই থেকে সাড়ে তিন হাজার কেজি বিস্ফোরক বা অন্য কিছু নিয়ে যেতে পারবে বলে ধারণা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের নন-প্রোলিফারেশন অ্যান্ড নিউক্লিয়ার পলিসির পরিচালক মাইকেল এলেম্যান।

“যদি হোয়াসং-১৫ই যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো জায়গায় বিশাল বড় নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড নিয়ে যেতে সক্ষম হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসবে যে এই বিশাল ক্ষেপণাস্ত্রটি কী করবে?,” বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

ট্রাম্প এবং নভেম্বরের নির্বাচনে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা জো বাইডেনকে বার্তা দিতে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পিয়ংইয়ং এ ‘দানবাকৃতির’ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে যাচ্ছে বলে অনুমান করছেন অলাভজনক মিসাইল ডিফেন্স অ্যাডভোকেসি অ্যালায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা রিকি এলিসন।