যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন: প্রথম বিতর্কে মুখোমুখি ট্রাম্প-বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দুই প্রার্থীর মধ্যে তিনটি বিতর্কের প্রথমটিতে ক্লিভল্যান্ডে মুখোমুখি হচ্ছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন।

>>রয়টার্স
Published : 29 Sept 2020, 04:29 PM
Updated : 8 Jan 2021, 07:15 AM

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ৯টায় শুরু হওয়ার কথা রয়েছে এই বিতর্ক। উভয় প্রার্থী নিজেদের দুর্বলতাগুলো জানেন। তাই কী প্রশ্নবান আসতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে তাদের ধারণা আছে, উত্তরও জানা।

আগামী ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এরই মধ্যে ১০ লাখ ভোটার আগাম ভোট দিয়ে ফেলেছেন। সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। উভয় প্রার্থীর প্রচার শিবির এ সময়ে ভোটারদের খুশি করে দলে টানতে নানা রকম চেষ্টা করছেন। যদিও করোনাভাইরাস মহামারীর এ সময়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নানা বিধি নিষেধের কারণে কোনো পক্ষই এবার বড় সমাবেশ আয়োজন করতে পারেনি।

কোভিড-১৯ মহামারীতে যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে দুই লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন। বেকার হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ট্রাম্পের ব্যর্থতা এখন স্পষ্ট। বিতর্কে যা বাইডেনের গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে।

বিতর্কের জন্য গঠিত নিরপেক্ষ কমিশন প্রশ্নের জন্য যে ছয়টি বিষয় নির্ধারণ করে দিয়েছেন সেখানে করোনাভাইরাস মহামারীও আছে।

মঙ্গলবারের বিতর্কে প্রত্যেক প্রার্থী ছয়টি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য মোট ৯০ মিনিট সময় পাবেন। অর্থাৎ, প্রতি প্রশ্নের জন্য ১৫ মিনিট। প্রশ্নের জন্য নির্ধারণ করে দেওয়া বাকি বিষয়গুলো হলো: সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান, সুপ্রিম কোর্ট, অর্থনীতি, বর্ণবৈষম্য ও সহিংসতা এবং নির্বাচনে বিশুদ্ধতা।

এই বিতর্কের ঠিক একদিন আগে ট্রাম্পের কর ফাঁকির চিত্র তুলে ধরে রীতিমত বোমা ফাটিয়েছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ৭৫০ মার্কিন ডলার করে দুই বছরে মাত্র ১৫০০ ডলার আয়কর দিয়েছেন ট্রাম্প।

আর গত ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছর কোনো আয়করই দেননি তিনি। নিজের কোম্পানিগুলোর ক্রমাগত লোকসান দেখিয়ে বছরের পর বছর তিনি আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন। ট্রাম্প যথারীতি নিউ ইয়র্ক টাইমসের এই প্রতিবেদনকে ‘ভুয়া খবর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

মঙ্গলবারের বিতর্কে প্রশ্নের তালিকায় আয়কর বিষয়টি না থাকলেও বাইডেন যে সুযোগ পেলে এটা নিয়ে কথা বলবেন তা প্রায় নিশ্চিত। ট্রাম্প তার আয়কর নিয়ে প্রকাশিত খবর ‘ভুয়া’ বললেও নিজের আয়করের হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশে কিছুতেই রাজি নন। তার যুক্তি আয়কর বিভাগ এখনও তার হিসাব নিরীক্ষা করছে। সেই ২০১৬ সাল থেকে তিনি এই একই কথা বলে আসছেন।

ট্রাম্প আয়কর নিয়ে লুকোচুরি করলেও বাইডেন তার গত ২১ বছরের আয়করের হিসাব প্রকাশ করছেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই তিনি আয়কর নিয়ে ট্রাম্পের কড়া সমালোচনায় মাতবেন। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ‘আমি ট্রাম্পের চেয়ে বেশি আয়কর দেই’ লেখা পোস্টার ও গাড়ির স্টিকার দেখা যাচ্ছে।

এখন পর্যন্ত জনমত জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন বাইডেন। যদিও যেসব অঙ্গরাজ্যের

ফল বিজয়ী নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সেগুলোতে দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবার ৯০ মিনিটের ওই বিতর্ক অনুষ্ঠানে দর্শক সংখ্যা সীমিত রাখা হয়েছে। নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই দর্শকদের আসন বিন্যাস করা হয়েছে।

বিতর্কের প্রস্তুতি:

ক্লিভল্যান্ডের কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্নিটি তে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ৯টায় (জিএমটি মঙ্গলবার ০১:০০) এই বিতর্ক শুরু হবে।

বির্তক অনুষ্ঠান ছয়টি পর্বে ভাগ করা হয়েছে।

সত্যি-মিথ্যা দিয়ে কথার পিঠে কথা সাজাতে ওস্তাদ ট্রাম্প নিয়মিতই বাইডেনের মানসিক সক্ষমতা এবং শারীরিক শক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বাকপটু ট্রাম্প একের পর এক কথার বান ছুড়ে বাইডেনকে ঘায়েল করার চষ্টা করবেন।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে দুই মেয়াদে ভাইস-প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন বাইডেন। ওবামা তাকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সেরা ভাইস-প্রেসিডেন্ট আখ্যা দিলেও ওই সময়ে নানা নীতি ও কৌশল নির্ধারণে তার অবস্থান নিয়ে সমালোচনা আছে।

অন্যদিকে, বাইডেনের কথা আটকে যাওয়ার দুর্বলতা রয়েছে। শৈশবে তার তোতলামোর সমস্যা ছিল এবং এ কারণে তাকে হাইস্কুল পর্যন্ত বেশ অপদস্ত হতে হয়েছে। দারুণ চেষ্টায় তিনি কথা বলার এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু এখনও হঠাৎ তার কথা আটকে যায় এবং তিনি কথা শুরু করতে দেরি করেন। অল্পতেও রেগে যাওয়ার ঘটনা আছে। এসব কারণে বিতর্কে বাইডেন দারুণ কিছু করে ফেলবেন এমন হয়ত তার সমর্থকরাও আশা করেন না।

বিতর্কের আগে ডেমোক্র্যাটিক সমর্থকরা ফক্স নিউজের মডারেটর ক্রিস ওয়ালেসকে ট্রাম্পের মিথ্যা বক্তব্য শুধরে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। ট্রাম্পের চরম অপছন্দ ওয়ালেস, তাকে ট্রাম্প আগেই ‘কদর্য এবং অশ্লীল’ বলেছেন। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক যেমনই হোক ডেমোক্র্যাটদের দাবি রাখছেন না ওয়ালেস। তিনি বলেছেন, বিতর্ক অনুষ্ঠানে তথ্য যাচাই করা তার কাজ নয়।

মঙ্গলবারের এই বিতর্কের জন্য গত অগাস্ট থেকে প্রস্তুত হচ্ছেন বাইডেন। তিনি ব্রিফিংয়ের নানা বিষয় বার বার দেখে নিয়েছেন। এমনকী তিনি দীর্ঘদিনের মিত্র ডেমোক্র্যাটিক আইনজীবী বব বাওয়ার সঙ্গে ‘মক ডিবেট’ করেছেন বলে জানা গেছে। যেখানে বাওয়ার ট্রাম্পের ভূমিকায় ছিলেন।

নিজের ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি এবং নিউ জার্সির গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টির সঙ্গে বসে ট্রাম্পও বিতর্কের প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানান তার এক উপদেষ্টা।

উভয় প্রার্থীর অভিজ্ঞতারও কমতি নেই। ২০১৬ ‍সালে দর্শক কোলাহলপূর্ণ রিপাবলিকান প্রাইমারি ডিবেটে র‌্যাপিড-ফায়ার অ্যাটাকে প্রতিদ্বন্দ্বীদের কুপোকাত করেছিলেন ট্রাম্প। সেবার ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে বিতর্কের এক পর্যায়ে বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে যৌন অসদাচরণের অভিযোগ তোলা কয়েকজন নারীকে দর্শকের সারিতে বসিয়ে দিয়ে তিনি হিলারিকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন।

বাইডেনও ২০০৮ ও ২০১২ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের সঙ্গে বিতর্ক করেছেন। তিনি ওই সব বিতর্কে কিছুটা রক্ষণাত্মক ছিলেন।

ট্রাম্প সবসময় বাইডেনকে ‘স্লিপি জো’ বলে বিদ্রুপ করেন। বলেন, তার সঙ্গে বিতর্কে অংশ নিতে আসার আগে বাইডেনকে ওষুধ খেতে হবে।

বাইডেনের এক মিত্র বলেন, ‘‘আমি বুঝতে পারছি না কেন ট্রাম্পের লোকজন বাইডেনকে খাটো করে দেখছে। জো বাইডেন একজন দক্ষ খেলোয়াড়। যখন প্রয়োজন ঠিক তখন তিনি তার খেলা দেখান এবং আশা করি এবারও তিনি তা দেখাবেন।”