ব্রেওনা টেইলর হত্যাকাণ্ড: লুইভিলে বিক্ষোভ, ২ পুলিশ কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ

ছয় মাস আগে এক মাদক ব্যবসায়ীকে ধরতে পরিচালিত অভিযানে কৃষ্ণাঙ্গ নারী ব্রেওনা টেইলরের মৃত্যুর ঘটনায় কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ না আনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে কেনটাকির লুইভিল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2020, 06:29 AM
Updated : 24 Sept 2020, 06:29 AM

বুধবার রাতে শহরটির বিভিন্ন অংশে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীর প্রতিবাদের মধ্যেই দুই পুলিশ কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধও হয়েছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

গুলিবিদ্ধ দুই কর্মকর্তার অবস্থাই আশঙ্কামুক্ত; এ ঘটনায় সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন লুইভিলের পুলিশপ্রধান রবার্ট শ্রোয়েডার।

ব্রেওনা টেইলর হত্যাকাণ্ডে পুলিশ সদস্যদের অভিযুক্ত করা হবে কিনা, এ বিষয়ক সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগেই শহরটিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। পরিস্থিতি মোকাবেলায় বুধবার সেখানে ন্যাশনাল গার্ড বাহিনীর সদস্যদেরও মোতায়েন করা হয়।

মেয়র গ্রেগ ফিশার রাত ৯টা থেকে পরদিন ভোর সাড়ে ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করলেও অনেক এলাকায় রাত ৯টার পরও হাজার হাজার বিক্ষোভকারীদের দেখা গেছে।

কেনটাকির গভর্নর অ্যান্ডি বেশির পরে বিক্ষোভকারীদের বাড়ি ফিরে যেতে অনুরোধ জানান।

“আমরা জানি, সহিংসতার জবাব কখনোই সহিংসতা হতে পারে না। আমরা এখন ওই দুই কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কথা ভাবছি। আমি সবার প্রতি অনুরোধ করছি. দয়া করে বাড়ি ফিরে যান,” বলেন তিনি। 

বুধবার ২৬ বছর বয়সী ব্রেওনা টেইলর হত্যাকাণ্ডে কেবল এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সামান্য অপরাধের অভিযোগ আনার পর লুইভিলের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হতে শুরু করেন বলে জানিয়েছে সিএনএন। কোথাও কোথাও তারা পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষেও জড়িয়েছেন।

ব্রেওনার আত্মীয়স্বজন এবং পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা মার্চে ব্রেওনার ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনার দাবি জানিয়েছিলেন।

বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ পর্যালোচনার পর গ্র্যান্ড জুরি অ্যানি ও’কনেল কেবল ব্রেট হ্যানকিনসনের বিরুদ্ধে হালকা অপরাধের অভিযোগ এনেছেন, বাকি দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই আনা হয়নি।   

“সন্তান, ভাতিজি, বোন ও বন্ধু হারানোর শোক আর বেদনাকে দূরে সরিয়ে দিতে তাদেরকে আজ কিছুই দিতে পারছি না আমি,” ব্রেওনার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল ড্যানিয়েল ক্যামেরন।

মার্চে ব্রেওনার ফ্ল্যাটে অভিযানে আইনের কোনো লংঘন হয়েছিল কিনা, এফবিআই তা খতিয়ে দেখছে।

গ্র্যান্ড জুরি ও’কনলের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ব্রেওনার পরিবারের আইনজীবী। কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ না আনাকে ‘আপত্তিকর ও অপমানজনক’ বলেও অ্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।

অ্যাটর্নি জেনারেলের সিদ্ধান্তের আগেই কর্মকর্তারা চলতি মাসে ব্রেওনার পরিবারকে এক কোটি ২০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার একটি সমঝোতায় সম্মত হয়েছিলেন।

গ্র্যান্ড জুরির এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি কেনটাকির রিপাবলিকান অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রশংসাও করেছেন।

ক্যামেরন গত মাসে রিপাবলিকান জাতীয় সম্মেলনে বক্তব্যও রেখেছিলেন। কেনটাকির ডেমোক্র্যাট গভর্নর অ্যান্ডি বেশিরের অনুরোধে লুইভিলে ন্যাশনাল গার্ড পাঠানোর বিষয়টি অনুমোদন করেছেন বলেও ট্রাম্প জানিয়েছেন।

গ্র্যান্ড জুরির কাছে ব্রেওনা টেইলর হত্যাকাণ্ড নিয়ে যেসব তথ্য উপাত্ত দেওয়া হয়েছিল, তা জনসমক্ষে প্রকাশেও বেশির কেনটাকির কৌঁসুলিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

“আমার মনে হয়, যত বেশি তথ্য প্রকাশিত হবে ততই জনগণ দেখতে পাবে, ব্যাপারটা অনুধাবন করতে পারবে। এটি করা দরকার,” সাংবাদিকদের বলেছেন কেনটাকির গভর্নর।