জাতিসংঘের ৭৫ বছর উদযাপন বিশ্ব নেতাদের

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মহামারী আর যুক্তরাষ্ট্র-চীনের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে জাতিসংঘের কার্যকারিতা ও ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে সংহতি বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন করছে বিশ্ব সংস্থাটি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2020, 10:58 AM
Updated : 22 Sept 2020, 11:28 AM

সোমবার এ উপলক্ষে অনলাইনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ একত্রিত হয়েছিলেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

মঙ্গলবার থেকে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘের বার্ষিক অধিবেশনের আগে একদিনের এ বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবারের অধিবেশনে কোনো দেশের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীকে সশরীরে নিউ ইয়র্কে গিয়ে বক্তৃতা করতে হচ্ছে না। সবার ধারণকৃত বক্তৃতা সাধারণ পরিষদের হলে একে একে সম্প্রচার করা হবে।

চলতি বছরের শুরু থেকে কোভিড-১৯ এর বিস্তৃতি বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে গৃহবন্দি হতে বাধ্য করেছে। এতে থমকে পড়া অর্থনীতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে কেবল নিজেদের স্বার্থের দিকে মনোযোগী করেছ। এ অবস্থায় জাতিসংঘকে নিজেদের এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কঠিন সংগ্রাম করতে হচ্ছে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।

দীর্ঘদিন ধরে দানা বাঁধতে থাকা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার উত্তেজনাও মহামারীর মধ্যে পরিস্থিতিকে ফুটন্ত কড়াইয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে; বেইজিং যে ওয়াশিংটনের এককেন্দ্রিক নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বহুপাক্ষিক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর, তাও স্পষ্ট হয়েছে। 

গত বছরের শেষদিকে চীনে করোনাভাইরাসের আবির্ভাব হয়েছিল। ভাইরাসের চরিত্র ও সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি নিয়ে বেইজিংয়ের অস্বচ্ছতার কারণেই পরে তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে এবং মহামারী পরিস্থিতিকে খারাপ করেছে বলে অভিযোগ ওয়াশিংটনের। চীন অবশ্য শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

সোমবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, “বৈশ্বিক বিষয়সমূহে প্রভুত্ব করা, অন্য দেশের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ কিংবা অগ্রগতির সুযোগ কেবল নিজেদের কাছে রাখার অধিকার কোনো দেশেরই নেই। এককেন্দ্রিকতা মৃতপ্রায়।”

শি’র এসব মন্তব্য সোমবারের বৈঠকের জন্য ধারণকৃত ভিডিওতে ছিল না। এ মন্তব্যগুলো একটি দীর্ঘ বিবৃতির অংশ, যে বিবৃতিটি বৈশ্বিক এ সংস্থার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে চীনের জাতিসংঘ মিশন।

রয়টার্স বলছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতো প্রতিষ্ঠান এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও ইরান চুক্তির মতো বহুপাক্ষিক সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ভেতর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে অমর্যাদা করার যে নজির হাজির করেছে, তার বিপরীতে বহু কেন্দ্রবিশিষ্ট বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে চীন নিজেদেরকে প্রধান নেতা হিসেবে হাজির করতে চাইছে। 

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের উপ-রাষ্ট্রদূত শেরিথ নরম্যান শ্যালেট সাধারণ পরিষদকে বলেছেন, বৈশ্বিক এ সংস্থা অনেকভাবেই নিজেদের সফলতার প্রমাণ দিলেও ‘অনেকগুলো কারণ নিয়ে উদ্বেগ রয়েই গেছে’।

“জাতিসংঘ দীর্ঘদিন ধরেই এর অর্থপূর্ণ সংস্কারে বাধা দিয়ে আসছে, অনেক ক্ষেত্রেই এর স্বচ্ছতার ঘাটতি আছে এবং এটি স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা ও একনায়কতন্ত্রের মতো বিষয়গুলোতে খুবই দুর্বল,” বলেছেন তিনি।

ডব্লিউএইচও থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ও যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটিকে ‘চীনের পুতুল’ অ্যাখ্যা দিয়েছিল। ডব্লিউএইচও তখনই এ অভিযোগ উড়িয়ে দেয়।

সোমবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভও ওয়াশিংটনের নাম উল্লেখ না করে বলেছেন, বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে কিছু দেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ‘ক্রমবর্ধমান বিভেদ’ উসকে দিচ্ছে।

“ভেদাভেদের পথ, আমাদের এবং তাদের এভাবে রাষ্ট্র ভাগাভাগির লাইনে বিশ্ব ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। বিশ্বের দরকার বহুপাক্ষিক সাহায্য-সহযোগিতা বাড়ানো,” বলেছেন তিনি।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, মহামারী বিশ্বের ক্ষত উন্মোচন করে দিয়েছে।

“এখন আমাদের বহুপাক্ষিক চ্যালেঞ্জের উদ্বৃত্ত থাকলেও বহুপাক্ষিক সমাধানের ঘাটতি রয়েছে,” বলেছেন তিনি।

জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল বলেছেন, বিভিন্ন রাষ্ট্রের নিজেদের স্বার্থের কারণে অনেক সময়ই জাতিসংঘকে তার আদর্শ থেকে সরে আসতে হয়।

“যারা মনে করে, তারা একাই ভালো থাকতে পারবে, তারা ভুল করছে। আমাদের ভালো থাকাটা যেমন সবার সঙ্গে ভাগাভাগির উপর নির্ভর করে, তেমনি দুর্ভোগও আমাদের সবাইকে ভাগ করে নিতে হয়। আমরা সবাই মিলে একটি বিশ্ব,” সাধারণ পরিষদকে বলেছেন তিনি।

সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বেশ ক’জন নেতা জাতিসংঘ বিশেষ করে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের উপর জোর দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের স্থায়ী সদস্যপদ এবং ভিটো দেওয়ার ক্ষমতাকে অন্যায্য বলেও অ্যাখ্যা দিয়েছেন কেউ কেউ।

“৭০০ কোটির বেশি মানুষের ভাগ্য কেবল ৫টি দেশের হাতে রাখা কাউন্সিলের কাঠামো ন্যায্য কিংবা টেকসই কোনোটাই হতে পারে না,” বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান।