মঙ্গলবার ৬৯ বছর বয়সী রেন জিকিয়াংকে এ সাজা দেওয়া হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সিএনএন।
এক সময়ের প্রভাবশালী আবাসন ব্যবসায়ী রেনের সঙ্গে চীনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। চলতি বছরের মার্চে করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় শি’র সমালোচনা করে নিবন্ধ লেখার পর তিনি কিছু সময়ের জন্য নিখোঁজ ছিলেন। পরে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।
মঙ্গলবার বেইজিংয়ের একটি আদালত রেনকে সরকারি তহবিলের এক কোটি ৬৩ লাখ ডলার আত্মসাৎ, ঘুষ গ্রহণ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কোম্পানির এক কোটি ৭২ লাখ ডলার ক্ষতিসহ বেশ কয়েকটি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে। রেন এক সময় ওই কোম্পানির প্রধান ছিলেন।
বিচারকরা সাবেক এ রিয়েল-এস্টেট টাইকুনকে ১৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ৬ লাখ ২০ হাজার ডলার জরিমানা করেন।
রেন ‘স্বেচ্ছায় সব দোষ স্বীকার করে নিয়েছে’ এবং ‘তার সব অবৈধ আয় উন্মোচিত হওয়ার পর তিনি আদালতের শাস্তি মেনে নেওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন’, বলেছে আদালত।
আইনি পর্যবেক্ষকদের হিসাবে, চীনের বিচার ব্যবস্থায় প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। দেশটিতে বেশিরভাগ সময় তাদের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, যারা দলের অভ্যন্তরে নেতৃত্বের দৌড়ে পেছনে পড়ে যায়।
রেনকে অভিযুক্ত করা এবং ১৮ বছরের সাজা দেওয়ার মাধ্যমে শি’র সমালোচনা বা অমর্যাদা কোনোভাবেই বরদাশত করা যে হবে না, সে বিষয়ে চীনের অভিজাত গোষ্ঠীর সদস্যদেরকে কঠোর বার্তা দেওয়া হল বলে ভাষ্য সিএনএনের।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের শাসকগোষ্ঠীর রাজনীতি নিয়ে সমালোচনা করে আসা রেন তার স্পষ্ট ও সোজাসাপটা বক্তব্যের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ‘দ্য ক্যানন’ নাম পেয়েছিলেন।
চীনের মতো একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে তিনি অন্য যে কারও তুলনায় শাসকগোষ্ঠীর সমালোচনা করার বেশি সুযোগ পেয়েছিলেন।
মার্চে প্রকাশিত যে নিবন্ধের জন্য রেনকে ‘শি’র সমালোচক’ বলা হচ্ছিল, ওই নিবন্ধে লেখক মতপ্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ঘাটতির কারণেই বেইজিং দ্রুততার সঙ্গে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করতে পারেনি; উল্টো পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন।
শি’র নাম না নিয়েই তিনি ওই নিবন্ধে চীনের শীর্ষ নেতাকে ‘ক্ষমতার জন্য ক্ষুধার্ত ভাঁড়’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
মহামারীর মধ্যে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি জনগণের নিরাপত্তার চেয়েও নিজেদের স্বার্থকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছিল এবং নিজেদের ক্ষমতাকে সুরক্ষিত রাখার দিকেই বেশি মনোযোগী ছিল বলেও নিবন্ধে অভিযোগ করেছিলেন তিনি।
নিবন্ধটি অনলাইনে প্রকাশিত হওয়ার পরপরই রেন ‘নিখোঁজ’ হন বলে তার বন্ধুরা অভিযোগ করেন; সেসময়ই তার আত্মীয়রাও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, হয়তো কর্তৃপক্ষই তাকে আটক করেছে ।পরে এপ্রিলের শুরুর দিকে কর্তৃপক্ষ জানায়, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত হুয়াইয়ুআন রিয়েল এস্টেট গ্রুপের সাবেক শীর্ষ নির্বাহী রেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চলছে।
কমিউনিস্ট পার্টির দীর্ঘদিনের সদস্য রেনকে জুলাইয়ে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়; এর মাধ্যমে ‘তিনি সাজা পেতে যাচ্ছেন’ এ ধারণাও দৃঢ় হয়।
রেন এর আগেও অনলাইনে শি সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। এজন্য ২০১৬ সালে বছরখানেকের জন্য তার পার্টি সদস্যপদও স্থগিত রাখা হয়েছিল।
হুয়াইয়ুআন রিয়েল এস্টেটের সাবেক এ শীর্ষ নির্বাহী সমালোচনা করলেও করোনাভাইরাস রুখতে চীন সরকারের নেওয়া নানান পদক্ষেপ পশ্চিমা মহলে বেশ সমাদৃত হয়েছে।