চীনকে চাপে রাখতে তাইওয়ানে অস্ত্র বিক্রি বাড়ানোর পথে যুক্তরাষ্ট্র

তাইওয়ানের কাছে মাইন, ক্রুজ মিসাইল ও ড্রোনসহ অন্তত সাত ধরনের সমরাস্ত্র বিক্রি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ বাড়তে থাকার মধ্যে এ পরিকল্পনা চলছে।

>>রয়টার্স
Published : 16 Sept 2020, 04:12 PM
Updated : 16 Sept 2020, 04:12 PM

বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল চার কর্মকর্তা একথা জানিয়েছেন। তবে, তাদের কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

তাইওয়ানের কাছে একবারে এত ধরনের অস্ত্র বিক্রির ঘটনা বেশ বিরল। তাইওয়ানের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলেও বেইজিংয়ের সঙ্গে উত্তেজনা কমিয়ে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করে।

চীন তাইওয়ানকে তাদের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ বলে বিবেচনা করে এবং কখনওই তাইওয়ানের অধিকার ছাড়বে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্কে উত্তেজনা বেড়েছে। ‍দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ তো চলছেই।

এছাড়াও, ট্রাম্প অনেক দিন ধরে চীনের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি অভিযোগ করছেন। বিশ্বজুড়ে নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়েও দুই দেশের মধ্যে কথার লড়াই চলছে।

চীনের উহান শহর থেকেই সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ট্রাম্পের অভিযোগ, করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা নিয়ে চীন তথ্য গোপন করেছে এবং এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

শুধু তাইওয়ান নয়, ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের সব মিত্রের কাছেই অস্ত্র রপ্তানি বাড়াতে চাইছে। যাতে দেশগুলোর নিজেদের সুরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর উপর নির্ভরশীলতা কমে এবং একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর অস্ত্র বিক্রি, ব্যবসা এবং দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ে।

আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ট্রাম্প এবং তার দল রিপাবলিকান পার্টির সমর্থকরা বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ‍তাদের অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে ভোটারদের মন গলাতে চাইছেন। তাদের দাবি, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন চীনের প্রতি নমনীয় আচরণ করেন। আগামী ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। 

এতো গেলো ট্রাম্প প্রশাসনের হিসাব। ওদিকে, তাইওয়ানও নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করতে অস্ত্র কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

জানুয়ারিতে সাই ইং-ওয়েন পুনরায় তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ‘চীনের এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতি জোরাল ভাবে প্রত্যাখান করেন। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করাই তার কাছে সব কিছুর আগে। তাদের প্রতিরক্ষা বাজেটের অংকটাও তাই অনেক বড়।

তাইওয়ানের সেনাবাহিনী অত্যন্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত। তাদের কাছে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রও আছে। যেগুলোর বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি।

অন্যদিকে, চীন নিজেই অনেক শক্তিশালী। তারা নিজেরাই অনেক অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র তৈরি করে। চীনের যুদ্ধবিমান এবং যুদ্ধজাহাজ নিয়মিত তাইওয়ানের কাছে আকাশ ও জলসীমায় মহড়া দেয়।

ঊর্ধ্বতন এক মার্কিন কর্মকর্তা তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের হম্বিতম্বির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, “আজ সেখানে কোনও ভারসাম্য নেই। আমি মনে করি এটি বিপজ্জনক।”

চীনের এই শক্তিমত্তা এবং আগ্রাসী আচরণের বিরুদ্ধে ওই অঞ্চলে পাল্টা একটি শক্তিশালী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। সে লক্ষ্যেই ওয়াশিংটন কাজ করছে। পেণ্টাগনে এই প্রচেষ্টা পরিচিতি পেয়েছে ‘দুর্গ তাইওয়ান’ নামে।

তবে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে ওয়াশিংটনে অবস্থিত তাইপে ‘ইকোনোমিক অ্যান্ড কালচারাল রিপ্রেজেন্টেটিভ ‍অফিসে’ যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।