বেক্সিট বাণিজ্য চুক্তির আশা প্রতিদিনই ফিকে হচ্ছে: ইইউ কমিশন 

ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিন সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে  ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছার আশা প্রতিদিনই ফিকে হচ্ছে।

>>রয়টার্স
Published : 16 Sept 2020, 02:19 PM
Updated : 16 Sept 2020, 05:55 PM

ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় ইইউ’র সঙ্গে এরই মধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে পড়া যুক্তরাজ্য সরকার এখন ‘ব্রেক্সিট চুক্তি’ ভঙ্গের পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। এ নিয়ে উভয়পক্ষে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বুধবার উরসুলা এই সতর্কবার্তা দিলেন।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বাণিজ্য আলোচনায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন হুমকি সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছেন এবং তা মোকাবেলায় ব্রেক্সিট চুক্তির শর্ত ভেঙে আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন।

জনসনের অভিযোগ, ইইউ জানুয়ারিতে হওয়া ব্রেক্সিট চুক্তিকে ব্রিটেনের মূল ভূখণ্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের মধ্যে বাণিজ্য বাধা হিসাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে; এমনকী দু’য়ের মধ্যে খাদ্য সরবরাহেও বাধা সৃষ্টি করতে চাইছে।

ইইউ আলোচনার ‘টেবিল থেকে রিভলভার’ সরাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেছেন জনসন।

এই হুমকির মুখে ভবিষ্যৎ বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা যদি ভেঙেও পড়ে সেক্ষেত্রে উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের বাদবাকী অংশের সুরক্ষায় ব্রিটিশ সরকার গত সপ্তাহেই একটি খসড়া আইন প্রস্তাব করেছে।

তবে এই আইনে ৩১ জানুয়ারিতে হওয়া ব্রেক্সিট চুক্তির কিছু অংশ বাতিল হয়ে যাওয়া এবং সর্বোপরি আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ হতে পারে বলে এটি নিয়ে বিতর্ক আছে।

তারপরও জনসন সরকার এই বিতর্কিত আইন নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে; যাকে বলা হচ্ছে ‘ইন্টারনাল মার্কেট বিল’। এ আইনের ফলে জনসন সরকার ব্রেক্সিট চুক্তির কিছু অংশ বাতিল করার ক্ষমতা পাবে।

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে এই বিল এরই মধ্যে প্রথম বাধা পার হয়েছে। বিবিসি জানায়, সোমবার নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সে ইন্টারনাল মার্কেট বিলের পক্ষে এমপি’দের ভোট পড়েছে ৩৪০ টি এবং বিপক্ষে পড়েছে ২৩৬ ভোট।

ওদিকে, ব্রাসেলস চাইছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এই ইন্টারনাল মার্কেট বিল পরিকল্পনা বাতিল করুক।

যুক্তরাজ্যকে বিলটি সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদই বাতিল করতে হবে বলে দাবি করেছে ইইউ। অন্যথায়, পুরো বাণিজ্য আলোচনা ভেঙে পড়ার ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে যুক্তরাজ্যকে সতর্ক করেছে ব্রাসেলস।

কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এখনও তার পরিকল্পায় অনঢ়।

এ পরিস্থিতিতেই বুধবার সকালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিন বলেছেন, “একটি করে দিন পার হচ্ছে, আর সময়মত বাণিজ্য চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনাও ফিকে হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “যুক্তরাজ্য ব্রেক্সিট চুক্তি একতরফাভাবে পরিবর্তন, উপেক্ষা কিংবা প্রত্যাখ্যান করতে পারে না। এটি আইন, আস্থা, বিশ্বাসের ব্যাপার… যে কোনও সুদৃঢ় অংশীদারিত্বের মূলভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস।”

ইন্টারনাল মার্কেট বিল নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিতর্ক চলছে। বিলটি নিয়ে বিরোধিতার মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তার কনজারভেটিভ পার্টিরও কিছু সদস্য আইনটির বিরোধিতা করছেন।

বেশকিছু টোরি এমপিসহ আরও অনেকেই আইনটির সমালোচনা করে বলছেন, এর ফলে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ হয়ে যুক্তরাজ্যের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার ঝুঁকি আছে। আন্তর্জাতিক আইন ভাঙার এই ঝুঁকি দূর করতে কিছু এমপি আইনটির সংশোধনীও চাইছেন।

হাউজ অব কমন্সে জনসন সরকার আইনটির পক্ষে আপাতত সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পেলেও আগামী কয়েকসপ্তাহে এ আইনের বিরোধিতা আরও বাড়তে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।