বেলারুশের ‘ত্রাসের’ নিন্দায় নোবেলজয়ী সভেতলানা

বেলারুশ কর্তৃপক্ষ জনগণকে ত্রাসের মুখে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির নোবেল জয়ী সাহিত্যিক সভেতলানা আলেক্সিয়েভিচ।

নিউজডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2020, 05:14 PM
Updated : 9 Sept 2020, 05:14 PM

সাধারণ পোশাকের মুখোশধারীদের হাতে বিরোধীদলীয় আরেকজন রাজনীতিবিদ আটক হওয়ার পর আলেক্সিয়েভিচ বুধবার এ অভিযোগ করলেন।

বেলারুশে একমাসব্যাপী চলা বিক্ষোভের মধ্যে বিরোধী নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়ের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ আটক হয়েছেন ম্যাক্সিম জ্নাক নামের এই রাজনীতিবিদ।

বেলারুশের নোবেল জয়ী সাহিত্যিক সভেতলানা আলেক্সিয়েভিচের বাড়িতেও দরজা ভেঙে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছে মুখোশধারী একদল লোক। আলেক্সিয়েভিচ নিজেই বুধবার সাংবাদিকদের বাড়িতে ডেকে ওই ঘটনার কথা জানান বলে জানিয়েছে বিবিসি।

দেশের এই পরিস্থিতির নিন্দা করে তিনি বলেন, “মানুষের বিরুদ্ধে ত্রাসের রাজত্ব চলছে। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

এই সাহিত্যিক ও সাংবাদিক বলেন, তার দরজায় কড়া নেড়ে এবং ফোন করে তাকে ভয় দেখানো হয়েছে। এ ঘটনার পর তিনি সমর্থকদের তার বাড়িতে আসার আহ্বান জানান।

এর আগে একদল মুখোশধারী তার অ্যাপার্টমেন্টের দরজা ভাঙার চেষ্টা করে। এ ঘটনার পর বুধবার সকালে ইউরোপীয় একদল কূটনীতিক মিনস্কে আলেক্সিয়েভিচের বাড়িতে যান।

সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান লিন্ডে টুইটারে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। ছবিতে আলেক্সিয়েভিচকে ঘিরে ইউরোপীয় কূটনীতিকদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।

অ্যান লিন্ডে বলেন, ‘‘বিরোধীদের হেনেস্তা করা, গ্রেপ্তার এবং জোর করে নির্বাসনে পাঠানো শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন ।”

“এই ছবি শেয়ার করতে পেরে আনন্দিত বোধ করছি। কিছুক্ষণ আগে মিনস্কে এটা তোলা হয়েছে।”

বিতর্কিত নির্বাচনের পর বেলারুশ সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের সদস্যরা একজোট হয়ে কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল গঠন করেছেন। আলেক্সিয়েভিচও বিরোধীদের ওই দলে যোগ দিয়েছেন।

অবশ্য ৭২ বছর বয়সের এই লেখিকা এখনো কাউন্সিলের কোনো বৈঠকে অংশ নেননি বলে জানায় জার্মানির সংবাদ সংস্থা ডয়চে ভেলে। বরং করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে তিনি বাড়িতেই অবস্থান করছেন। বাড়ির বাইরে খুব একটা বের হচ্ছেন না।

গত ৯ অগাস্ট প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটের দিন থেকেই বেলারুশে বিক্ষোভ শুরু হয়। নির্বাচন কমিশন দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোকে পুনরায় বিজয়ী ঘোষণা ফলে ওই বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯৯৪ সাল থেকে বেলারুশের ক্ষমতা আকড়ে ধরে আছেন লুকাশেঙ্কো।

বিরোধী দলের নেতারা ৯ অগাস্টের ভোটে বড় ধরনের জালিয়াতির অভিযোগ করেছেন। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলও বেলারুশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি হওয়ার কথা বলেছেন।

প্রায় চার সপ্তাহ ধরে বেলারুশে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভ দমনে লুকাশেঙ্কো প্রশাসন দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। বিরোধী নেতাকর্মীদের গণহারে আটক করা হচ্ছে।

আলেক্সিয়েভিচ ছাড়া বিরোধী কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বাকি শীর্ষ নেতাদের আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

আটক নেতাদের একজন মারিয়া কোলেসনিকোভা। বেলারুশ প্রশাসন এ সপ্তাহের শুরুতে তাকে প্রথমে ইউক্রেইনে নির্বাসনে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল। কোলেসনিকোভা সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে দিলে তাকে আটক করা হয়।

কোলেসনিকোভার পর বুধবার কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের আরেক নেতা আইনজীবী ম্যাক্সিম জ্নাক-কে রাজধানী মিনস্ক থেকে মুখোশ পরা একদল লোক তুলে নিয়ে যায়।

বিরোধীদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, এখন পর্যন্ত বিরোধী দলের হাজারো নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে, বেলারুশ প্রশাসন থেকে বুধবার দেশজুড়ে ১২১ জন বিক্ষোভকারীকে আটকের কথা জানানো হয়েছে। বলা হয়, মঙ্গলবার তাদের আটক করা হয়েছে। এছাড়া, গত রোববার আরো শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

দ্য বেলারুশিয়ান পিইএন সেন্টার- এর ওয়েবসাইটে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে আলেক্সিয়াভিচ বলেন, কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল একটি ‘সামাজিক সংলাপ’ শুরু করতে চেয়েছিল। নির্বাচন ঘিরে গণজাগরণের পর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্যই কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে।

“আমরা অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নিচ্ছি না। আমরা আমাদের দেশ বিভক্ত হয়ে পড়া ঠেকাতে চাই। এই কাউন্সিল বিদ্রোহ করছে ‍না, বরং এই দেশ বিদ্রোহ করেছে।”