করোনাভাইরাস: অংশগ্রহণকারী অসুস্থ, অক্সফোর্ডের টিকার ট্রায়াল স্থগিত

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাজ্যের ওষুধ কোম্পানি আস্ট্রাজেনেকার তৈরি করা করোনাভাইরাসের টিকার চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষায় যুক্তরাজ্যে একজন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল স্থগিত রাখা হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2020, 04:07 AM
Updated : 9 Sept 2020, 05:09 AM

আস্ট্রাজেনেকা বলেছে, ট্রায়ালে কারও অসুস্থতার কারণ যখন ব্যাখ্যা করা যায় না, তখন পরীক্ষায় এ ধরনের ‘বিরতি’ স্বাভাবিক ঘটনা।

বিবিসি লিখেছে, বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত যেসব টিকার গবেষণা এগিয়েছে, তার মধ্যে আস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ডের টিকাকে যথেষ্ট সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

করোনাভাইরাস টিকার চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষায় ফল কী হয়- তা জানতে এসব ট্রায়ালের ওপর নজর রেখেছে পুরো বিশ্ব।

আস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর বাজারে আসা প্রথম টিকাগুলোর মধ্যে এটি একটি হবে বলে উচ্চ ধারণা পোষণ করা হচ্ছে।

কয়েক সপ্তাহ ধরে এর তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় ৩০ হাজার অংশগ্রহণকারী যুক্ত আছেন। এই পর্যায়ের পরীক্ষায় প্রায়ই কয়েক হাজার অংশগ্রহণকারী যুক্ত থাকেন এবং তা কয়েক বছর ধরে চলতে পারে।

বিবিসির চিকিৎসা বিষয়ক সম্পাদক ফারগাস ওয়ালশ জানিয়েছেন, এ টিকার ট্রায়াল বিশ্বের যেখানে যেখানে চলছিল সবগুলোই স্থগিত করা হয়েছে। একটি স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে নিরাপত্তা দিকটি যাচাই করার পর ট্রায়াল আবার শুরু করতে পারবে কি না নিয়ন্ত্রক সংস্থা সে সিদ্ধান্ত নেবে। 

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “বড় ধরনের পরীক্ষায় হঠাৎই অসুস্থতার ঘটনা ঘটতে পারে কিন্তু বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করতে অবশ্যই স্বাধীনভাবে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে।” 

এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অক্সফোর্ডের করোনাভাইরাস টিকার পরীক্ষা স্থাগিত করা হল বলে উল্লেখ করেছে বিবিসি। বড় ধরনের পরীক্ষায় এ ধরনের ঘটনা নিয়মিত ঘটে থাকে আর যে কোনো সময়ই তা ঘটতে পারে। অসুস্থতার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট না হলে অসুস্থ হয়ে পড়া স্বেচ্ছাসেবককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

কয়েকদিনের মধ্যেই অক্সফোর্ডের এই টিকার ট্রায়াল আবার শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অক্সফোর্ডের টিকার ট্রায়াল স্থগিত করার বিষয়টি প্রথম জানিয়েছিল স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট স্ট্যাট নিউজ। তারা জানিয়েছে, টিকার প্রয়োগে যুক্তরাজ্যের ওই স্বেচ্ছাসেবকের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার বিস্তারিত তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। 

গত বছরের শেষে চীন থেকে ছড়াতে শুরু করে পুরো বিশ্ব দখল করে নেওয়া নতুন করোনাভাইরাস ইতোমধ্যে প্রায় পৌনে তিন কোটি মানুষকে আক্রান্ত করেছে, মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছেছে ৯ লাখের কাছাকাছি।

এ ভাইরাসের টিকা তৈরির চেষ্টায় বিশ্বে এখন প্রায় দুইশ গবেষণা চলছে। এর মধ্যে আধা ডজন সম্ভাব্য টিকা পৌঁছেছে পরীক্ষার একেবারে শেষ পর্যায়ে।

এর মধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়-আস্ট্রাজেনেকা ছাড়াও মডার্না, ফাইজার, ক্যানসিনো বায়োলজিক্যাল, সিনোভ্যাক বায়োটেক ও সিনোফার্ম তাদের তৈরি করা সম্ভাব্য টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চালাচ্ছে বিশ্বের কয়েকটি দেশে।

আর রাশিয়ার গামালিয়া ইনস্টিটিউট তাদের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ না করেই সরকারের অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে।

কোনো টিকা চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার আগে বিপুল সংখ্যক রোগীর ওপর এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাতে হয়, যাকে বলে তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল।

তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় সফল প্রমাণিত হলে ট্রায়ালে অংশ নেওয়া দেশগুলো ইমার্জেন্সি অথরাইজেশন দেয়। সবশেষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চূড়ান্ত অনুমোদনের বিষয়টি আসে।