১২ বছরের বালিকাকে মাটিতে চেপে ধরে তোপে হংকং পুলিশ

হংকংয়ে বিক্ষোভের মধ্যে ১২ বছরের এক বালিকা ও তার ভাইকে মাটিতে চেপে ধরে আছে পুলিশ। এমন একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়ার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে পুলিশ।

নিউজডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2020, 06:13 PM
Updated : 7 Sept 2020, 06:13 PM

পুলিশের দাবি, ওই বালিকা ‘একটি অবৈধ জমায়েতে অংশ নিয়েছিল’।‘‘সে সন্দেহজনক ভাবে দৌড় দিয়েছিল। খুবই কম শক্তি প্রয়োগ করে পুলিশ তাকে থামিয়েছে।”

যদিও বালিকার পরিবারের দাবি একবারেই ভিন্ন। তারা বলেন, ‘‘স্কুলের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনতে মেয়েটি বাইরে বের হয়েছিল। পথে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাত দেখে সে ভয় পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল।”

বিবিসি জানায়, অবৈধ জমায়েতের অভিযোগ তুলে মংককে রোববারের ওই বিক্ষোভ থেকে প্রায় তিনশ’ জনকে আটক করা হয়েছে।

করোনাভাইরাসের কথা বলে হংকংয়ের পার্লামেন্ট নির্বাচন এক বছর পিছিয়ে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রোববার একদল বিক্ষোভকারী রাস্তায় নামে।

তাদের অভিযোগ, সরকার করোনাভাইরাস মহামারীকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে জনগণকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখতে চায়।

ভিডিওতে কী আছে?:

রোববার বিকালের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মংকক এলাকায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা এক বালিকাকে থামতে বলে এবং স্থির হয়ে দাঁড়াতে বলে।

কিন্তু সে দৌড়াতে শুরু করলে এক পুলিশ তার হাতের ব্যাটন বালিকার দিকে ছুড়ে মারে এবং অন্য একজন পেছন পেছন ছুটে গিয়ে মেয়েটিকে মাটিতে চেপে ধরে।

সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আরো দাঙ্গা পুলিশ হাজির হয়। মেয়েটির ভাই তাকে সাহায্য করতে চাইলে পুলিশ তাকেও মাটিতে চেপে ধরে।

ঘটনাস্থলে থাকা সাংবাদিক ও পথচারীরা পুলিশের এ কাণ্ডের প্রতিবাদ জানালে পুলিশ তাদের দূরে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ওই বালিকা ও তার বড় ভাই সামান্য আহত হয়েছে। হাসপাতালে তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।

পুলিশ দুই ভাইবোন এবং এক পথচারীকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম ভঙ্গের দায়ে জরিমানাও করেছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে হংকংয়ে দুই জনের বেশি মানুষ একসঙ্গে চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

বালিকার বক্তব্য:

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে ওই মেয়েটির নাম শুধু ‘পামেলা’ বলা হয়েছে। তার পরিচয় গোপন রাখতেই এটি করা হয়েছে।

ঘটনাস্থলের কাছেই মেয়েটির বাড়ি। সে জানায়, আঁকার জিনিসপত্র কিনতে সে বাইরে এসেছিল।

‘‘পুলিশ রাস্তা ঘিরে রেখেছিল এবং লোকজনকে চলাচল করতে দিচ্ছিল না। তাই আমরা একটি ঘুর পথে বাড়ি ফিরছিলাম....হঠাৎ করেই পুলিশ আমাদের দিকে দৌড়ে আসতে থাকে। তা দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই। তারা আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছিল। কিন্তু আমি আতঙ্কে অস্থির হয়ে দৌড় মারি।”

মেয়েটির ভাই জানায়, সামাজিক দূরত্বের নিয়ম ভাঙায় তাদের যে জরিমানা করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে তারা চ্যালেঞ্জ করতে চায়।

‘‘আমরা শুধু হেঁটে আসছিলাম। পুলিশের আমাদের দিকে ছুটে আসার কোনও কারণই ছিল না।”

মেয়েটির মা বলেন, তিনিও ছেলেমেয়ের সঙ্গে দৈনন্দিন বাজার করতে গিয়েছিলেন। বাজার করা হয়ে গেলে তিনি বাড়ি ফিরে যান আর দুই ভাইবোন আঁকার জিনিস কিনতে যায়।

তার সন্তানদের সঙ্গে পুলিশের আচরণে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলেও জানান তিনি।

পুলিশের বক্তব্য:

এ ঘটনার পর এক বিবৃতিতে পুলিশ বলে, মংককে সতর্ক করার পরও বিক্ষোভকারীরা সড়ক থেকে চলে যেতে রাজি না হলে পুলিশ তাদের তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছিল।

‘‘পুলিশ ওই মেয়েটিকে থামিয়ে তল্লাশি করতে চেয়ছিল। কিন্তু সে হঠাৎই সন্দেহজনকভাবে দৌড় দেয়। অফিসাররাও তার পেছনে দৌড় দেয় এবং খুবই কম বল প্রয়োগ করে তাকে থামায়।

‘‘তদন্তে দেখা গেছে, ওই মেয়েটি এবং অন্যান্য বিক্ষোভকারীরা ঘটনাস্থলে নিষেধ থাকার পরও একটি জমায়েতে অংশ নিয়েছিল। তারা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জারি থাকা নিয়ম লঙ্ঘন করেছে, তাই তাদের জরিমানা করা হয়েছে।”