সমুদ্রে ভাসমান ২৯৭ রোহিঙ্গার ঠাঁই মিলল ইন্দোনেশিয়ায়

প্রায় ৩শ’ রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে একটি নৌকা ছয় ‍মাস ধরে সমুদ্রে ভেসেছে। আশ্রয় মেলেনি মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ডে। শেষ পর্যন্ত ভাসমান নৌকাটিকে কূলে ভেড়ার অনুমতি দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া কর্তৃপক্ষ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2020, 01:12 PM
Updated : 7 Sept 2020, 06:31 PM

সোমবার এই রোহিঙ্গারা ইন্দোনেশিয়ার আচি প্রদেশে পৌঁছেছে। কাঠের নৌকায় করে ১৪ শিশু এবং ১৮১ জন নারীসহ মোট ২৯৭ জন রোহিঙ্গা কূলে ভিড়েছে বলে সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন স্থানীয় পুলিশ প্রধান।

সুমাত্রার উত্তর উপকূলে লোকসেউমাওয়ে নগরীর উপকূল থেকে বেশ কয়েক মাইল দূরে সমুদ্রের গভীরে ভাসমান এই নৌকাটিকে দেখতে পান স্থানীয় ‍জেলেরা।

নৌকার রোহিঙ্গাদেরকে আপাতত একটি স্থানে রাখা হয়েছে। পরে তাদেরকে সুরক্ষিত অন্য কোনও শিবিরে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন লোকসেউমাওয়ে নগরীর রেড ক্রসের প্রধান কর্মকর্তা। তবে তাদের স্বাস্থ্য, বিশেষ করে কোভিড-১৯ নিয়েই চিন্তা বেশি বলে জানান তিনি।

মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানরা নিজ দেশে নানা নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে বাঁচতে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশেগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা করে।

২০১৭ সালের অগাস্টে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনা অভিযানের পর সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ হাতে নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এরও দুই বছর আগে থেকে রোহিঙ্গারা ব্যাপক হারে দেশ ছাড়তে শুরু করেছিল।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কাজ করা এনজিও ‘আরাকান প্রজেক্ট’র পরিচালক ক্রিস লেওয়া বিবিসি’কে বলেন, রোহিঙ্গাদের এই নৌকাটি গত মার্চের শেষে বা এপ্রিলের শুরুর দিকে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির থেকে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়া পৌঁছাতে রওনা হয়েছিল।

কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড কর্তৃপক্ষ তাদের কূলে ভেড়ার অনুমতি না দিয়ে সমু্দ্রে তাড়িয়ে দেয়।

২০১৫ সালের পর একবারে এত রোহিঙ্গা ইন্দোনেশিয়ায় যায়নি বলেও জানান তিনি। ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছানো এই রোহিঙ্গাদের সমুদ্রে জিম্মি করে তাদের পরিবার থেকে বাড়তি অর্থ আদায়ের চেষ্টা হয়েছে বলেও ধারণা করছেন ক্রিস লেওয়া।

সোমবার রোহিঙ্গাদের নৌকাটি উপকূলে ভেড়ার পর ‍অন্তত একজন আরোহীকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য নিয়ে যেতে হয়েছে বলে জানান জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার কর্মকর্তা ওকেটিনা। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যা দেখেছি তাতে মনে হয়েছে, এ মুহূর্তে তাদের অবস্থা বেশ নাজুক।”

রোহিঙ্গাদের সহায়তা করতে স্থানীয়রা প্রচুর খাবার ও পোশাক দান করছেন। আইসাহ নামের স্থানীয় এক নারী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আমরা তাদের অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের মানবিক সাহায্য প্রয়োজন....তারাও আমাদের মত মানুষ।”

বিবিসি জানায়, এর আগে গত জুনে দুই বারে প্রায় ১০০ রোহিঙ্গা একই এলাকা দিয়ে ইন্দোনেশিয়া পৌঁছায়। ওই দুই দলে বেশিরভাগই ছিল নারী ও শিশু।

উপকূলে পৌঁছে তারা জানিয়েছিল, প্রায় চারমাস ধরে তারা সমুদ্রে ভাসছে। মানবপাচারকারীরা সমুদ্রে তাদের মারধর করেছে এবং পানি না থাকায় নিজেদের প্রসাব পান করতে বাধ্য করেছে।

ক্রিস লেওয়া বলেন, ‘‘জুনে যে রোহিঙ্গারা এসেছে এবং সোমবার যারা এল তাদের নিয়ে প্রায় আটশ’ রোহিঙ্গা এ বছরের শুরুতে বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রে যাত্রা করেছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। সমুদ্রে প্রায় ৩০ জন রোহিঙ্গা মারা গেছে বলেও শুনেছি।”

বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা মানবপাচারকারীদের প্রলোভনে পড়ে উন্নত জীবনের আশায় সমুদ্র পেরিয়ে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মত মুসলমান অধ্যুষিত দেশগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করে।