করোনাভাইরাস কালে প্রথম দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব

দীর্ঘদিন ধরে ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান, নাইজেরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চল এবং ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে খাদ্য সংকট চলছে। করোনাভাইরাস মহামারী ওইসব অঞ্চলের পরিস্থিতি আরো নাজুক করে দিয়েছে। শিগগিরই সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।

>> দ্যনিউ ইয়র্ক টাইমস
Published : 6 Sept 2020, 02:12 PM
Updated : 6 Sept 2020, 03:56 PM

জাতিসংঘের মানবকল্যাণ বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা মার্ক লোকক এক চিঠিতে এই সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেন।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে লেখা ওই চিঠিতে লোকক বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিধ্বস্ত অর্থনীতি এবং জনস্বাস্থ্যের চরম সংকটের কারণে ওই সব অঞ্চল দুর্ভিক্ষ ‍শুরু হওয়ার তীব্র ঝুঁকিতে পড়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী ওই সব সংকটের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে।

“এই সব সংকট মিলে সেখানকার লাখ লাখ নারী, পুরুষ ও শিশুদের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে।”

নিরাপত্তা পরিষদে লেখা লোককের চিঠি জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। লোককের কার্যালয় শুক্রবার সরাসরি নিরাপত্তা পরিষদকে এ চিঠি সম্পর্কে অবগত করেছে। সেই চিঠিরই একটি অনুলিপি পেয়েছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।

অবশ্য জাতিসংঘের কর্মকর্তারা আগেই ওই চারটি অঞ্চলের বাসিন্দাদের মারাত্মক খাদ্য সংকটে পড়ার ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ ও সংঘাত চলতে থাকা ওই সব ‍অঞ্চলে স্বাধীনভাবে মানবিক ত্রাণ বিতরণও সম্ভব হয় না।

গত এপ্রিলে ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম’এর নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিইসলিও একই কথা বলেন। তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘‘বিশ্ব যখন করোনাভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে তখন আমরা আরও একটি মহামারীর দ্বারপ্রান্তে আছি, সেটা হলো ক্ষুধা মহামারী (দুর্ভিক্ষ)।”

জাতিসংঘের মানব কল্যাণ ও ত্রাণ বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি মার্ক লোকক তার চিঠিতে দুর্ভিক্ষ শুরু হওয়ার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে জরুরি ত্রাণ তহবিলে অর্থ সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া, এ মহামারীর কারণে আরও নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে বিশ্বের ওই অংশ যেখানে সবচেয়ে দরিদ্র মানুষের বাস সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেছে।

খাদ্য সংকট কী পর্যায়ে রয়েছে তা পর্যবেক্ষণের জন্য আইপিসি (ইনটিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ক্লাসিফিকেশন) স্কেলে পরিস্থিতি পরিমাপা হয়।

স্কেলের ‘ফেজ ৩’ এর অর্থ সংকট, ‘ফেজ ৪’ এর অর্থ জরুরি অবস্থা, এবং সবচেয়ে খারাপ ‘ফেজ ৫’এর অর্থ দুর্ভিক্ষ। বাসিন্দাদের মধ্যে অনাহার, মৃত্যু, চরম দারিদ্র এবং মারাত্মক অপুষ্টির বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে এই পর্যায় নির্ধারণ করা হয়।

ইয়েমেন:

দুই বছর আগে ইয়েমেনে ‍দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল, যেটাকে প্রতিহত করা হয়েছে। ‘সেখানে ধীরে ধীরে দুর্ভিক্ষ ফিরে আসার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে’ বলে মনে করেন লোকক। আরব বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশ ইয়েমেন। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে সেখানে গৃহযুদ্ধ চলছে। গরিব এ দেশটিকে গৃহযুদ্ধ এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে, সেখানকার অর্থনীতি বলতে গেলে প্রায় সম্পূর্ণ রূপে (৮০ শতাংশ) বিদেশি ত্রাণের উপর নির্ভরশীল।

ইয়েমেন এখন ‘ফেস ৪’ এ আছে বলে জানান লোকক। দুর্ভিক্ষ থেকে যা মাত্র এক পা দূরে।

কঙ্গো:

যুদ্ধ বিধ্বস্ত ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের প্রায় দুই কোটি ১০ লাখ মানুষ ‘খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সংকটময় বা চরম সংকটময় অবস্থায়’ আছে বলে জানান লোকক।

নাইজেরিয়া:

নাইজেরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলে অস্ত্রধারী জঙ্গি বাহিনী অত্যন্ত সক্রিয়। সেখানে প্রায়ই হামলার ঘটনা ঘটে। লোকক বলেন, সেখানে এক কোটি বাসিন্দার প্রতি পাঁচ জনে চারজনেরই মানবিক সহায়তা এবং সুরক্ষা প্রয়োজন।

দক্ষিণ সুদান:

দক্ষিণ সুদানে প্রায় সাত বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলেছে। সম্প্রতি আবারও সংঘাত বাড়তে থাকা সেখানকার ১৪ লাখের বেশি মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। লোকক বলেন, ‘‘দুই বছর আগ দক্ষিণ সুদানে দুর্ভিক্ষের হুমকি কিছুটা প্রতিহত করা গেলেও দেশটির কিছু কিছু এলাকায় আবারও পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হচ্ছে।”