করোনাভাইরাস: বিশ্বে শনাক্ত রোগী আড়াই কোটি ছাড়াল

গত ১৯ দিনে নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে আরও ৫০ লাখ মানুষ, রয়টার্সের টালিতে বিশ্বজুড়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে আড়াই কোটিতে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2020, 06:07 AM
Updated : 30 August 2020, 07:07 AM

বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্য ছাড়িয়ে গেছে ৮ লাখ ৪০ হাজার। মাত্র আট দিন আগে এই সংখ্যা আট লাখে পৌঁছেছিল।

দৈনিক নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যায় এখন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের চেয়েও এগিয়ে থাকছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার এই দেশটি এখন হয়ে উঠেছে করোনাভাইরাস মহামারীর নতুন উপকেন্দ্র। 

রোববার সকালে ভারত সরকারের তরফ থেকে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তাতে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৭৮ হাজার ৭৬১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে সেখানে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে এক দিনে ৭৭ হাজার ২৯৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল, এতদিন এটাই ছিল কোনো দেশে এক দিনে শনাক্ত রোগীর সর্বোচ্চ সংখ্যা।

ভারতে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় রয়টার্সের টালিতে রোববার বিশ্বে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ২ কোটি ৫০ লাখ ৭৪ হাজার ৭৫১ জনে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে প্রতিবছর বিশ্বে যত লোক মারাত্মক ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়, আট মাসে মোটামুটি তার পাঁচগুণ মানুষকে সংক্রমিত করেছে নতুন করোনাভাইরাস।

আর করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তা এক বছরে ইনফ্লুয়েঞ্জায় মৃত্যুর সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়ে গেছে আগেই। ইনফ্লুয়েঞ্জায় বছরে ২ লাখ ৯০ হাজার থেকে সাড়ে ছয় লাখ মানুষের মৃত্যু হয় প্রতিবছর।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মানবদেহে ধরা পড়ে; খুব দ্রুত বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা।

পরে এ ভাইরাসের নাম দেওয়া হয় নভেল বা নতুন করোনাভাইরাস। আর এ ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগের নাম দেওয়া হয় কোভিড-১৯।

চীনে প্রথম মৃত্যুর দুদিন পর ১৩ জানুয়ারি থাইল্যান্ডে প্রথম রোগী ধরা পড়ার পর জানা যায়, চীনের রাষ্ট্রীয় সীমানা পেরিয়ে গেছে এই ভাইরাস।

তারপর হু হু করে বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা, দেড় মাসের মধ্যে এন্টার্কটিকা বাদে সব মহাদেশেই ধরা পড়ে রোগী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তখন এই পরিস্থিতিকে মহামারী আখ্যায়িত করে।

কঠোর লকডাইনে চীন তিন মাসের মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও ততদিনে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র এবং পরে রাশিয়ায় ব্যাপক মাত্রা পায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব।

প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার পর চার মাসের মাথায় ১ এপ্রিল বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়ায়। এর পরের সাত সপ্তাহে আরও ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় ২১ মে আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধ কোটি ছাড়িয়ে যায়।

এরপর পাঁচ সপ্তাহের মাথায় ২৮ জুন সেই সংখ্যা কোটিতে পৌঁছায়। পরের ৪৩ দিনে তা পৌঁছায় দুই কোটিতে।

অনেক দেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ঘাটতি থাকায় এবং কোনো কোনো দেশ হাসপাতালের বাইরে মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হিসাবের মধ্যে না আনায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

মহামারীতে পর্যুদস্ত অনেক দেশ লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করে জুনের শুরুতে অর্থনীতি সচল করার চেষ্টা শুরু করলেও অনেক জায়গায় আবার নতুন করে বিধিনিষেধ ফিরিয়ে আনতে হয়েছে।

জীবন ও জীবিকার প্রশ্নে ভারসাম্য আনতে গিয়ে কর্মক্ষেত্র আর সামাজিক জীবন যাপনে আনতে হয়েছে নানা ধরনের পরিবর্তন, যা চালিয়ে যেতে হতে পারে করোনাভাইরাসের টিকা না পাওয়া পর্যন্ত।

একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৬০ লাখ ছুঁই ছুঁই করছে।

গত কিছুদিনে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন শনাক্ত রোগী, মৃত্যুম হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা, পরীক্ষার তুলনায় শনাক্ত রোগীর হার কমে এলেও কিছু এলাকায় নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার তথ্য আসছে।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে ৩৮ লাখ ৪৬ হাজার মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার তথ্য দেওয়া হয়েছে সরকারিভাবে।

এ ভাইরাস লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতেই সবচেয়ে দ্রুত গতিতে ছড়িয়েছে। তবে ওই এলাকার কয়েকটি দেশে নতুন সংক্রমণের হার কমে আসতে শুরু করেছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যায় বিশ্বে এখন তৃতীয় অবস্থানে আছে ভারত। সেখানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ৩৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। গত ৭ অগাস্টের পর থেকে প্রতিদিন ভারতেই সর্বোচ্চ সংখ্যক নতুন রোগী শানাক্তের তথ্য আসছে।

মহামারীর প্রকোপ বাড়তে থাকলেও অর্থনীতির চাকা সচল করতে বিধিনিষেধ কমিয়ে স্বাভাবিকতায় ফেরার ওপরই জোর দিচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইতোমধ্যে ভারতে ৭ সেপ্টেম্বর থেকে মেট্রো রেল চালু করার ঘোষণা এসেছে। আগামী মাস থেকে সীমিত পরিসরে খেলাধুলা এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান করারও অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

পুরনো খবর