দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনামে টানা কয়েকমাস স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত কোনো রোগী পাওয়া না গেলেও সম্প্রতি সেখানে নতুন করে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে।
পরিস্থিতি সামলাতে দেশটি রাশিয়ার টিকার দিকে ঝুঁকেছে বলে ভিয়েতনাম টেলিভিশনের (ভিটিভি) প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
“এর মধ্যে ভিয়েতনাম নিজস্ব কোভিড-১৯ টিকা উদ্ভাবনেও কাজ চালিয়ে যাবে,” দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলেছে ভিটিভি।
গত সপ্তাহে রাশিয়া তাদের গামালিয়া ইনস্টিটিউটের কোভিড-১৯ টিকাকে জনসাধারণের মধ্যে প্রয়োগে চূড়ান্ত অনুমতি দিয়েছে। মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় টিকাটি ‘যথেষ্ট কার্যকর’ বলেও দাবি করছে তারা।
তবে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপর পরীক্ষা চালানো ছাড়া অনুমোদিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের গবেষকরা এ রুশ টিকাটির কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ ও সন্দেহ থাকলেও ২০টির মতো দেশ এরই মধ্যে রাশিয়ার টিকা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে মস্কো।
ভিয়েতনামও টিকাটির ৫-১৫ কোটি ডোজ পেতে চুক্তি করেছে, জানিয়েছে তুওই ত্রে পত্রিকা।
এর মধ্যে কিছু টিকা রাশিয়া ‘অনুদান’ হিসেবে দেবে, বাকিগুলোর দাম দেবে ভিয়েতনাম, বলেছে তারা।
কবে নাগাদ এ টিকা পাওয়া যাবে এবং টিকার জন্য কত খরচ হয়েছে সে বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হয়নি ভিয়েতনামের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আগ্রাসী শনাক্তকরণ পরীক্ষা, রোগী ও তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন এবং আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখায় কিছুদিন আগেও সারা বিশ্বেই ভিয়েতনামের প্রশংসা চলছিল। জুলাইয়ের শেষে দেশটিতে ভাইরাসের নতুন প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্যাশবোর্ড অনুযায়ী, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এ দেশটিতে শনিবার পর্যন্ত মোট ৯৩০ জনের দেহে প্রাণঘাতী ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে; মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের।
রুশ টিকার উৎপাদন শুরু
রাশিয়া তাদের কোভিড-১৯ টিকার উৎপাদন শুরু করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে টিকা উৎপাদন শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে বলে শনিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
উৎপাদন শুরু হওয়ায় দুই সপ্তাহের মধ্যে টিকাটি প্রয়োগ শুরু করা যাবে বলেও বিবৃতিতে জানিয়েছে রুশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্নায়ুযুদ্ধ যুগে মহাকাশ জয়ের সেই সোভিয়েত কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুৎনিক এর নামে রাশিয়া তার এ কোভিড-১৯ টিকার নাম রেখেছে।
এদিকে তড়িঘড়ি করে কোভিড-১৯ টিকার অনুমোদন দেওয়ায় এবং টিকা সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত না থাকায় দেশটির বেশিরভাগ চিকিৎসক এই টিকা নিতে অস্বস্তি বোধ করছেন বলে এক জরিপে উঠে এসেছে।
রাশিয়ার তিন হাজারেরও বেশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞর ওপর এ জরিপ চালানো হয়।
টিকাটির তৃতীয় ধাপের চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ না হওয়ায় এই অস্বস্তি, বলছেন বেশিরভাগ চিকিৎসক।