এবার কমলা হ্যারিসকে নিয়ে ট্রাম্পের ‘জন্ম তত্ত্বের’ খোঁচা

বছরের পর বছর ডনাল্ড ট্রাম্প সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্মস্থান নিয়ে বিতর্ক যেভাবে উসকে দিয়েছিলেন; নির্বাচনের আগে এবারও তিনি প্রায় একই কায়দায় প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের রানিং মেট কমলা হ্যারিসকে ঘায়েল করতে চাইছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2020, 07:21 AM
Updated : 14 August 2020, 07:21 AM

বৃহস্পতিবার রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্ট কমলার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে বসার‘সাংবিধানিক যোগ্যতা ’ নিয়ে আলোচনা উসকে দিয়েছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে ১৯৬৪ সালের ২০ অক্টোবর জন্ম নেওয়া কমলা হ্যারিসের বাবা জ্যামাইকান, মা ভারতীয়।  ডেমোক্র্যাট এ নারী সিনেটরের যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে বসার ‘সাংবিধানিক যোগ্যতা আছে কিনা’ সম্প্রতি মার্কিন এক আইনের অধ্যাপক এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। 

মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ ও চতুর্দশ সংশোধনীর দিকে ইঙ্গিত করে অধ্যাপক ইস্টম্যান বলেছেন, কমলা হ্যারিসের জন্মের সময় তার বাবা-মা দুজনের কারওই যদি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি না থাকে (উদাহরণ স্বরূপ, যদি সেসময় দুজনেই শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে থাকেন), তাহলে জো বাইডেনের এ রানিং মেটের সম্ভবত ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে বসার ‘যোগ্যতা থাকে না’।

ইস্টম্যানের এ তত্ত্বকে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীই আমলে নিচ্ছেন না। তারা বলছেন, কমলা হ্যারিসের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে হওয়ায় তার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন ও দায়িত্ব পালনে সাংবিধানিকভাবে কোনো ধরনের বাধা নেই।

ট্রাম্প অবশ্য এত যুক্তির ধার ধারেননি। ভাইস প্রেসিডেন্টের লড়াইয়ে নামা ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলাকে এক হাত নিতে পারার সুযোগ পেয়েই তিনি খুশি।

বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে কমলাকে নিয়ে ইস্টম্যানের আপত্তি সম্বন্ধে ট্রাম্পের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমি আজই শুনেছি যে ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে যা যা প্রয়োজন তা নাকি তার (কমলা) নেই। যে আইনজীবী এটা লিখেছেন তিনি খুবই যোগ্যতাসম্পন্ন, খুবই মেধাবী আইনজীবী।”

“আমি জানি না এটা ঠিক কি না। কেবল ধারণা করতে পারি যে, ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তাকে বেছে নেওয়ার আগে ডেমোক্র্যাটরা নিশ্চয়ই এটি খতিয়ে দেখেছে। কিন্তু এটি খুবই গুরুতর বিষয়, আপনারা বলছেন, আরও অনেকে বলছেন যে তিনি (কমলা) সাংবিধানিকভাবে যোগ্যতা অর্জন করেননি কেননা তিনি এদেশে জন্মই নেননি,” বলেন ট্রাম্প।

যে সাংবাদিক ট্রাম্পের কাছে ইস্টম্যানের নিবন্ধ নিয়ে মন্তব্য চেয়েছিলেন, তিনি তাৎক্ষণিকভাবে প্রেসিডেন্টের ভুল ধরিয়ে দেন। বলেন, ডেমোক্র্যাট ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিয়ে কোনো সংশয় নেই।

কমলার জন্মের সময় সম্ভবত তার বাবা-মার যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি ছিল না, তা উল্লেখ করেই ইস্টম্যান কমলাকে নিয়ে আপত্তি তুলেছেন, বলেন ওই সাংবাদিক।

২০০৮ সালে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ‘বার্থার’ আন্দোলনের জনপ্রিয় মুখপাত্রে পরিণত হয়েছিলেন ট্রাম্প। ওই আন্দোলনে ওবামার জন্মস্থান নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রশ্ন তোলা হয়। বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে নয়, ওবামা জন্মেছিলেন কেনিয়ায়। ত্যক্ত বিরক্ত ওবামা এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ে তার জন্মের সনদও প্রকাশ করেন।

গতবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে নেমে চাপের মুখে আগের অবস্থান থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন ট্রাম্প। ওবামার জন্ম যে যুক্তরাষ্ট্রেই, এক বিবৃতিতে তিনি তা মেনেও নেন। ট্রাম্প সেসময় ‘বার্থার’ আন্দোলন শুরুর দায় দিয়েছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনকে। বলেছিলেন, তিনি নন, ২০০৮ সালে মনোনয়ন যুদ্ধের সময় হিলারি শিবিরই প্রতিদ্বন্দ্বী ওবামার বিরুদ্ধে জন্মস্থানকেন্দ্রীক ওই অভিযোগ তুলেছিল।