কোভিড-১৯: ব্রাজিলে মৃত্যুর সংখ্যা লাখ ছাড়াল

অধিকাংশ শহরের দোকানপাট ও রেস্তোরাঁ খোলার পর আক্রান্তের সংখ্যা উর্ধ্বগতিতে বাড়তে থাকা ব্রাজিলে করোনাভাইরাস মহামারীতে মৃত্যু লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2020, 10:51 AM
Updated : 9 August 2020, 10:51 AM

শনিবার ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৪৯ হাজার ৯৭০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে, ওই সময়কালে মৃত্যু হয়েছে আরও ৯০৫ জনের।

এতে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ লাখ ১২ হাজার ৪১২ জনে এবং মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখ ৪৭৭ জনে দাঁড়িয়েছে।

এক শতাব্দী আগের স্প্যানিশ ফ্লুর পর থেকে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে লড়াই করা ব্রাজিল প্রথম নতুন করোনাভাইরাস আক্রান্তের কথা জানিয়েছিল ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে। এরপর দেশটির ৫০ হাজার লোকের প্রাণনাশে ভাইরাসটি সময় নেয় তিন মাস, কিন্তু পরবর্তী ৫০ হাজারের মৃত্যু হয় মাত্র ৫০ দিনে।

শনাক্ত রোগী ও মৃত্যুতে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই ‘করোনাভাইরাসকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি’ বলে তার সমালোচকরা অভিযোগ করে আসছেন।

সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন ও বিধিনিষেধের বিরোধী এ ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট অর্থনীতি সচল রাখতে আঞ্চলিক গভর্নর এমনকী নিজ মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছিলেন। ৬৫ বছর বয়সী এ প্রেসিডেন্ট নিজে ও তার মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যও পরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন।

ব্রাজিলের সংক্রামক রোগ সমিতির জ্যেষ্ঠ সদস্য ডা. জোসে দাভি উরবায়েজ বলেছেন, “আমাদের হতাশার মধ্যে জীবনযাপন করা উচিত, কারণ এটি বিশ্বযুদ্ধের মতো শোচনীয় পরিস্থিতি; কিন্তু ব্রাজিল সমষ্টিগতভাবে অসাড়তার মধ্যে আছে।”  

এখনও এই মহামারীর সঙ্গে লড়াই করার মতো ব্রাজিলের কোনো সমন্বিত পরিকল্পনা না থাকা নিয়ে সতর্ক করেছেন উরবায়েজ ও অন্যান্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। দেশটির অনেক কর্মকর্তা সবকিছু পুনরায় খুলে দেওয়ার ওপর জোর দেয়াতে রোগটি আরও ছড়িয়ে পড়ে প্রাদুর্ভাব মারাত্মক রূপ নেবে বলে মনে করছেন তারা।        

 ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট, কংগ্রেস ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মহামারী মোকাবেলায় বোলসোনারোর নেওয়া পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। মৃত্যুর সংখ্যা লাখ ছাড়ানোয় সুপ্রিম কোট তিন দিনের ও ন্যাশনাল কংগ্রেস চার দিনের শোক ঘোষণা করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।

বোলসোনারোর সঙ্গে মতবিরোধে তার মন্ত্রীসভার দুই জনস্বাস্থ্য মন্ত্রী পরপর পদত্যাগ করেছেন। তারা উভয়েই চিকিৎসক ছিলেন। বর্তমান অস্থায়ী স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল, তিনি সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলার আহ্বান থেকে সরে এসেছেন।

মহামারীর বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলা অপরিহার্য, বিশেষজ্ঞরা এমনটি বললেও প্রেসিডেন্ট এর বিরোধিতা করছেন। কোভিড-১৯ কে ‘সামান্য ফ্লু’ আখ্যায়িত করে অবজ্ঞা করছেন বোলসোনারো। নিজে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য করোনাভাইরাস চিকিৎসায় অপ্রমাণিত ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনকে কৃতিত্ব দিয়েছেন।

“এটি কোথায় থামবে আমরা জানি না, দেড় থেকে দুই লাখ মৃত্যু হতে পারে। শুধু সময়ই এখানে কোভিড-১৯ এর পুরো প্রভাব তুলে ধরতে পারে,” বলেছেন সাও পাউলো রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক ব্যাধি বিভাগের প্রধান আলেসান্দ্রি নাইমি।