আগের অবস্থায় ফেরার ‘আশা নেই’ বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত বৈরুতের

লেবাননে বিস্ফোরকের গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত রাজধানী বৈরুতে তছনছ হয়ে যাওয়া জীবন আবার আগের অবস্থায় ফেরার আশা দেখছে না অসহায় হয়ে পড়া বাসিন্দারা।

>>রয়টার্স
Published : 7 August 2020, 01:29 PM
Updated : 7 August 2020, 03:06 PM

গত মঙ্গলবার বৈরুতের বন্দর এলাকায় বিস্ফোরণটি ঘটে। এতে বৈরুতের অর্ধেকই ধুলিস্যাৎ হয়েছে। মারা গেছে অন্তত ১৪৫ জন। লাখো মানুষ ঘরহারা হয়েছে, নষ্ট হয়েছে খাবার। যতদূর চোখ যায় কেবল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ধ্বংসস্তুপ।

সেই ধ্বংসস্তুপ থেকে আবার নিজেদের বাড়িঘর নতুন করে তোলার চেষ্টা করছে বৈরুতবাসী।কিন্তু আগের অবস্থা আর ফিরে পাওয়ার আশা নেই অনেকেরই।

বৈরুতের যে বন্দরে বিস্ফোরণ ঘটেছে তার কয়েকশ মিটার দূরেই একটি এলাকায় নিজ বাড়িতে বসে কথা বলছিলেন টনি আবদু নামের এক বসিন্দা। তার কণ্ঠে স্পষ্ট হয়ে ওঠে হতাশার সুর, “বাড়ি আর আগের মতো করে তোলার উপায় নেই।” কোথায় গেল রাষ্ট্র? প্রশ্ন তার।

হতাশার সুরে কথা বলতে শোনা যায় এক ট্যাক্সি চালককেও। বাড়িঘরের ধ্বংস্তুপের নিচে চাপা পড়ে যার ট্যাক্সিক্যাব হয়েছে চুরমার। “আয় করার তো আর উপায় রইল না। আমাদের কি সরকার বলতে আসলেই কিছু আছে?- ক্ষেদোক্তি তার।

বিস্ফোরণে সব হারিয়ে নিঃস্ব আরেক বাসিন্দা বলেন, স্ত্রীর বাড়ি ছাড়া আর কোথাও এখন যাওয়ার জায়গা তার নেই। অর্থনীতি শুন্যে নেমেছে, এখানে আমরা কিভাবে বাঁচব? প্রশ্ন তার।

বিস্ফোরণে গুঁড়িয়ে যাওয়া শহরের রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়ে বৈরুতের আরেক বাসিন্দাও প্রকাশ করেছেন চরম হাতাশা। বিস্ফোরণস্থলের কাছেই একটি হাসপাতালের উপ-পরিচালক তিনি। বিস্ফোরণে হাসপাতালটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।

বিবিসি জানায়, বিস্ফোরণের সময় হাসপাতালে না থাকায় বেঁচে যান ওই কর্মকর্তা। পরে পরিস্থিতি সচক্ষে দেখতে বেরিয়ে হাসপাতালের ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে চোখের পানি সামলাতে সামলাতে ধরা গলায় তিনি বলেন, “রোগীরা সবাই হতভম্ব, তারা আহত হয়েছে। আমরা তাদেরকে সাহয্য করা, অন্য হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা হাসপাতাল হারিয়েছি, কাজ হারিয়েছি, আশা হারিয়েছি।”

কেবল বৈরুতের বাসিন্দারাই নন, বিশ্লেষকরাও বলছেন- এই নগরী আর কখনওই আগের অবস্থায় ফিরে যাবে না।

সিএনএন এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণস্থল বৈরুতের বন্দর ‘পোর্ট অব বৈরুত’ ছিল লেবাননের সঙ্গে বহির্বিশ্বের যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র। সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটময় সময়ে থাকা লেবাননের অর্থনীতিকে সচল রাখার কয়েকটি কেন্দ্রের মধ্যে ছিল এই পোর্ট অব বৈরুত। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও পণ্য পরিবহন চালু ছিল এ বন্দরে।

আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুতের সহযোগী অধ্যাপক করিম মাকদিসি বলেন, “এর (বিস্ফোরণ) পর বৈরুত আবার সেই আগের অবস্থায় ফিরে যাবে বলে আমি মনে করি না। বিশ্বের সঙ্গে লেবাননের যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র একেবারেই ধ্বংস হয়ে গেছে।”