আমিরাতে আরব বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু

আরব দেশগুলোর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2020, 03:32 PM
Updated : 2 August 2020, 03:32 PM

কাতারের পূর্বদিকে উপসাগরীয় উপকূলে আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির আল ধাফরাহ অঞ্চলে এই বারাকাহ পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

শনিবার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির চারটি চুল্লির মধ্যে একটিতে কাজও শুরু হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করে চুল্লিতে চলছে নিউক্লীয় বিভাজন।

বিবিসি জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০১৭ সালেই চালু হওয়ার কথা থাকলেও নিরাপত্তা সংক্রান্ত নানা কারণে এই কেন্দ্র চালুর প্রক্রিয়া কয়েকবার পিছিয়ে গিয়েছিল।

এমিরেটস নিউক্লিয়ার এনার্জি করপোরেশন (ইএনইসি) এবং কোরিয়া ইলেকট্রিক পাওয়ার করপোরেশন ( কেইপিসিও) মিলে এ  বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করেছে।

তেল-সমৃদ্ধ আরব আমিরাত বারাকাহ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দেশটির মোট চাহিদার এক-চতুর্থাংশ মেটাতে চায়। আরব আমিরাতের নেতারা এ বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির প্রতীক হিসেবেই দেখছেন।

এর মাত্র একসপ্তাহ আগেই সংযুক্ত আরব আমিরাত মঙ্গলগ্রহে মহাকাশযান পাঠিয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে এটিই ছিল প্রথম বড় ধরনের বৈজ্ঞানিক অভিযান।

এরই মধ্যে দেশটি বারাকাহ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর যে পদক্ষেপ নিল তা এক ‘গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক’ বলে এক টুইটে প্রশংসা করেছে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থাও (আইএইএ)।

সংযুক্ত আরব আমিরাত সৌর বিদ্যুতেও বড় ধরনের বিনিয়োগ করছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা কেউ কেউ বারাকাহ পারমাণবিক কেন্দ্রের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সন্ত্রাসবাদে জর্জরিত এ অঞ্চলের জন্য সৌর বিদ্যুৎই বেশি পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী এবং অর্থবহ।

তাছাড়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুকে কিছু কিছু দেশ আঞ্চলিক শান্তি ও পরিবেশের জন্য হুমকি হিসাবেও দেখছে। আমিরাতের বৈরি প্রতিবেশী দেশ কাতার গতবছরই বারাকাহ কেন্দ্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

উপসাগরীয় অঞ্চলে আমিরাতের আরেক বৈরি দেশ ইরান এরই মধ্যে বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে আছে। এখন আমিরাতেও পারমাণবিক কেন্দ্র চালু হওয়ায় ওই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদে এর পরিণতি কী হবে তা নিয়ে শঙ্কা আরও বাড়ল।

উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনাকর ভূরাজনৈতিক পরিবেশের কারণে অন্য যে কোনও জায়গার চেয়ে সেখানে পারমাণবিক শক্তির বিষয়টি অনেক বেশি বিতর্কিত। পরমাণু শক্তি হাতে পাওয়ার ফলে কোনও দেশ পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর সক্ষমতা অর্জন করে ফেলতে পারে বলেই বিষয়টি উদ্বেগের।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের এনার্জি ইন্সটিটিউটের গবেষক পল ডরফম্যান বলেছেন, “অস্থিতিশীল উপসাগরীয় অঞ্চলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পারমাণবিক কেন্দ্রে বিনিয়োগ অঞ্চলটিতে অস্থিতিশীলতা আরও বাড়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া, পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তারের আশঙ্কাও এতে বেড়ে যাচ্ছে।”