শামিমাকে যুক্তরাজ্যে ফিরতে দেওয়া উচিত: আদালত

জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিতে লন্ডন থেকে সিরিয়ায় পাড়ি জমানো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামিমা বেগমকে আইনি লড়াইয়ের জন্য যুক্তরাজ্যে ফেরার অনুমতি দেওয়া উচিত বলে রায় দিয়েছে দেশটির আপিল আদালত।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2020, 11:52 AM
Updated : 16 July 2020, 01:31 PM

আদালত বলছে, শামিমাকে সুষ্ঠু শুনানি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, কারণ যুক্তরাজ্যে ফিরতে না দিলে সিরিয়ার শিবিরে থাকা অবস্থায় তার পক্ষে এই আইনি লড়াই চালানো সম্ভব নয়।

বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার আপিল আদালতের এই রায়ের ফলে ব্রিটিশ সরকারকে এখন ২০ বছর বয়সী শামিমার লন্ডনে যাওয়ার এবং আদালতে হাজির হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে, যিনি এখন দক্ষিণ সিরিয়ার এক ক্যাম্পে আছেন।

২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাত্র ১৫ বছর বয়সে আরও দুই ব্রিটিশ কিশোরীর সঙ্গে যুক্তরাজ্য ছাড়েন শামিমা। সিরিয়ায় আইএস উৎখাত অভিযানে আশ্রয় হারিয়ে তার ঠাঁই হয় শরণার্থী শিবিরে। সেখানে তার একটি সন্তানও হয়।

২০১৯ সালে শরণার্থী শিবিরে তার খোঁজ মেলার পর তিনি দেশে ফিরতে চাইলে সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তার যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব বাতিল করেন।

এরপর শামিমা বেগম তার আইনজীবীর মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেন।

 তার যুক্তি ছিল, ব্রিটিশ সরকার ‘অবৈধভাবে’ তাকে রাষ্ট্রহীন করেছে এবং তার জীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। তাছাড়া, যুক্তরাজ্যে ফিরতে না পারলে তার পক্ষে আইনি লড়াইও ঠিকমত চালানো সম্ভব নয়।

বৃহস্পতিবারের রায়ে আপিল আদালত বলেছে, “শামিমাকে সুষ্ঠু এবং কার্যকরভাবে আইনি প্রক্রিয়া চালাতে দেওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে তাকে যুক্তরাজ্যে ফেরার অনুমতি দেওয়া।”

আদালতের এ রায়ে হতাশা প্রকাশ করে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলেছে, এর বিরুদ্ধে তারা আপিল করার অনুমতি চাইবে। ব্রিটিশ সরকার বরাবরই বলে আসছিল, শামিমাকে সিরিয়া থেকে সরিয়ে আনতে কোনো সহযোগিতা তারা করবে না।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্যের আদালত শামিমার নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ বলে রায় দিয়েছিল। কারণ সে সময় আইনত শামিমা ছিলেন ‘বংশগতভাবে বাংলাদেশের নাগরিক’।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কারও নাগরিকত্ব বাতিল করা তখনই বৈধ যখন সেই ব্যক্তি আইনত আরেকটি দেশের নাগরিকত্ব পেতে পারে। কারণ, আন্তর্জাতিক আইনে কোনো মানুষকে দেশবিহীনভাবে রাখা যায় না।

শামিমা তার মায়ের সূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক হিসাবে বিবেচিত। যদিও এর আগে বিবিসি’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শামিমা বলেছিলেন, তিনি কখনও বাংলাদেশে যাননি এবং বাংলাদেশি পাসপোর্টও তার নেই। 

শামিমা বেড়ে উঠেছেন লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন এলাকায়। বেথনাল গ্রিন একাডেমির ছাত্রী শামীমা যুক্তরাজ্য থেকে সিরিয়া গিয়েছিলেন ব্রিটিশ পাসপোর্ট নিয়ে। কিন্তু সীমান্ত পার হওয়ার পরপরই তার কাছ থেকে সেটি কেড়ে নেওয়া হয়।

শামিমা তুরস্কের সীমান্ত পেরিয়ে সিরিয়ার আইএস নিয়ন্ত্রিত শহর রাকায় পৌঁছান। এরপর ধর্মান্তরিত এক ডাচ নাগরিককে বিয়ে করে রাকা শহরেই বসবাস করছিলেন তিনি। পরে লড়াইয়ে রাকার পতন হলে তারা ফোরাত নদীর তীরবর্তী আইএসের ছিটমহল বাঘুজে আশ্রয় নেন।

পরে সিরিয়ায় আইএসের তথাকথিত ‘খিলাফতের’ অবশিষ্টাংশ বলে বিবেচিত এই বাঘুজের পতন হলে শামীমার স্বামী আত্মসমর্পণ করেন, আর বাঘুজের অন্যান্য বেসামরিকদের মতো শামীমার ঠাঁই হয় সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরে। শামীমার ছিল তিন সন্তান। তাদের সবাই মারা গেছে।