মালিতে অস্থিরতা: সাংবিধানিক আদালত ভেঙে দিলেন প্রেসিডেন্ট কেইতা

মালিতে কয়েক মাস ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতা থামাতে সাংবিধানিক আদালত ভেঙে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বৌবাকার কেইতা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 July 2020, 12:03 PM
Updated : 12 July 2020, 12:03 PM

শনিবার রাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন বলে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

আফ্রিকার এ দেশটির সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীরা পার্লামেন্ট নির্বাচনের কিছু আসনের ফল নিয়ে সাংবিধানিক আদালতের দেয়া বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছিল।

শুক্রবারও কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী দেশটির পার্লামেন্ট ও জাতীয় সম্প্রচার কেন্দ্রে অবস্থান নিয়ে মালির নিরাপত্তা রক্ষায় ব্যর্থতা ও অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য প্রেসিডেন্ট কেইতাকে দায়ী করে তার পদত্যাগ দাবি করেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে কাঁদুনে গ্যাস ও গুলি ছুড়তে হয়। এ সময় সংঘর্ষে অন্তত চার জন নিহত হয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট কেইতা তার ভাষণে ‘এ ধরনের সহিংসতা সহ্য করা হবে না’ বলে হুঁশিয়ার করেছেন।

মার্চে মালিতে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সাংবিধানিক আদালত ওই নির্বাচনের পর ৩০টির মতো আসনের প্রাথমিক ফল উল্টে দেয়। এরপর থেকেই দেশটিতে তুমুল সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়।

সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে প্রেসিডেন্ট কেইতা ঐক্য সরকার গঠনসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিলেও বিরোধী দলগুলোর জোট তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিদ্যমান উত্তেজনার মধ্যেই শনিবার বিক্ষোভকারীদের ছোট ছোট দল রাজধানী বামাকোর বেশ কয়েকটি এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে ও কাঠের গুঁড়ি ফেলে সড়কে অবরোধ বসায়। তবে এ দিন বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা শুক্রবারের চেয়ে অনেক কম ছিল বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

শনিবার রাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে কেইতা বলেন, “সাংবিধানিক আদালতের অবশিষ্ট সদস্যদের লাইসেন্স বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি। এর ফলে আগামী সপ্তাহ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আদালতে নতুন সদস্য নিয়োগ দিতে পারবে; সংস্কার করা আদালত তখন পার্লামেন্ট নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তার দ্রুত একটি সমাধান খুঁজে বের করতে পারবে।”

শনিবার মালির প্রধানমন্ত্রী বৌবু সিসে বলেছিলেন, তিনি এবং প্রেসিডেন্ট সবার সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।

অন্যদিকে বিরোধী দলগুলোর জোট শনিবার তাদের দুই নেতাকে নিরাপত্তা বাহিনী আটক করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছে। শুক্রবার জোটের আরেক নেতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

নিরাপত্তা বাহিনী জোটের সদরদপ্তরে হামলা চালিয়ে সেটি তছনছ করে নিয়েছে বলেও জানিয়েছেন বিরোধী জোটের মুখপাত্র নৌহোম টোগো।  

মালিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা জঙ্গি সমস্যা, অর্থনৈতিক সংকট ও বিতর্কিত নির্বাচন নিয়ে বিরোধীদলগুলো অসন্তুষ্ট হয়ে আছে।

শুরুর দিকে বিরোধী দলগুলোর জোট প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চাইলেও গত সপ্তাহে তারা ওই পথ থেকে সরে আসে এবং রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়।  

শনিবারের ভাষণে কেইতা পার্লামেন্টের কিছু কিছু আসনে পুনর্নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের পাশাপাশি গত মাসে পশ্চিম আফ্রিকার আঞ্চলিক জোট ইকোওয়াস-ও বিতর্কিত আসনগুলোতে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিল। 

প্রেসিডেন্টের ভাষণের পরও শনিবার সন্ধ্যায় মালির রাজধানীতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল।

মালির উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের অনেক এলাকায় জিহাদি গোষ্ঠীগুলো ব্যাপক সক্রিয়। সরকারবিরোধী এ অস্থিরতা তাদেরকে আরও সুযোগ করে দিতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।

পার্লামেন্ট নির্বাচনের কয়েকদিন আগে দেশটির অন্যতম প্রভাবশালী বিরোধীদলীয় নেতা সোমালিয়া সিসেকে অজ্ঞাত একটি গোষ্ঠী অপহরণ করে; তবে নিখোঁজ থাকা অবস্থায়ও সিসে পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন।