ক্রাইস্টচার্চ: আরেক মসজিদে হামলার হুমকির কথা জানত পুলিশ

নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে হামলার দিনটিতে অন্য এক মসজিদে হামলার হুমকির বিষয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল বলে দাবি করেছে মুসলিম নারীদের একটি সংগঠন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2020, 10:05 AM
Updated : 7 July 2020, 10:17 AM

দেশটির মুসলিম নারীদের ওই সংগঠনটি দুই মসজিদে ৫১ মুসল্লি নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্তে নিয়োজিত তদন্তকারীদের এমন তথ্য জানিয়েছে। 

ইসলামিক উইমেন্স কাউন্সিল অব নিউ জিল্যান্ড বলেছে, গত বছরের ১৫ মার্চ ফেইসবুকের ম্যাসেঞ্জারে হ্যামিল্টনের একটি মসজিদের বাইরে কোরান পুড়িয়ে দেয়ার হুমকিসহ শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীদের হুমকির বিষয়ে তারা পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে ধারাবাহিকভাবে সতর্ক করে এসেছে।

হ্যামিল্টনের মসজিদ সংক্রান্ত এ হুমকির সঙ্গে ক্রাইস্টচার্চের হত্যাযজ্ঞের প্রত্যক্ষ কোনো সংযোগ না থাকলেও, হুমকির বিষয়ে জানার পর চাইলে সব মসজিদের নিরাপত্তায় অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেয়া যেত বলে রুদ্ধদ্বার কক্ষে তদন্তকারীদের কাছে দেওয়া বক্তব্যে বলেছে ইসলামিক উইমেন্স কাউন্সিল।

মঙ্গলবার তাদের বক্তব্য জনসমক্ষে আসে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

“পুলিশের কাছে এত তথ্য ছিল যে তারা চাইলেই এ বিষয়ে সমন্বিত জাতীয় কৌশল গ্রহণ করতে পারতো। যদি এরকম কোনো কৌশল থাকতো, তাহলে ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ একটি মসজিদে হামলার হুমকি সম্পর্কিত বার্তা অন্য মসজিদগুলোকে সতর্ক করতে পারতো এবং সব মসজিদের জন্যই অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া যেত। ক্রাইস্টচার্চের হামলাকারীর সঙ্গে এ হুমকির কোনো যোগসাজশ আছে কি নেই, তা অপ্রাসঙ্গিক,” ১৩০ পৃষ্ঠার বক্তব্যের এক জায়গায় এমনটাই বলেছে মুসলিম নারীদের সংগঠনটি।

সন্দেহভাজন শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট গত বছরের ১৫ মার্চ ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে আধা-স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অর্ধশতাধিক মুসল্লিকে হত্যা করেন।

অস্ট্রেলীয় এ বন্দুকধারী নিউ জিল্যান্ডের ইতিহাসে অন্যতম বর্বর এ হামলাটি ফেইসবুকে লাইভ সম্প্রচার করেছিলেন।

এসব হত্যাকাণ্ড ও হামলার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত ট্যারেন্টের সাজা আদালত ২৪ অগাস্ট থেকে ঘোষণা শুরু করবে।

ইসলামিক উইমেন্স কাউন্সিল তাদের বক্তব্যে বলেছে, পুলিশ, নিরাপত্তা সংস্থা ও সরকারি প্রতিনিধিরা কেবল উগ্রবাদী মুসলিমদের সন্ত্রাস মোকাবেলাতেই বেশি মনোযোগী ছিল। তারা নিউ জিল্যান্ডের মুসলমানদের উপর উদীয়মান কট্টর খ্রিস্টান ডানপন্থিদের হামলার হুমকি নিয়ে গা করেননি।

পুলিশ জানিয়েছে, তারা এ সংক্রান্ত রাজকীয় কমিশনের তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবে না। হ্যামিল্টনের মসজিদের বাইরে কোরান পোড়ানোর হুমকি দেওয়া ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে আনুষ্ঠানিকভাবে সতর্ক করা হযেছিল বলেও জানিয়েছে তারা।

সরকারের এক মুখপাত্রও রাজকীয় কমিশনের দেয়া প্রতিবেদনের আগে কোনো মন্তব্য করা হবে না বলে জানিয়েছেন। ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে হামলার ঘটনার রাজকীয় কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন জুলাইয়ের শেষ নাগাদ প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, ক্রাইস্টচার্চে ওই হামলার পর থেকে নিউ জিল্যান্ডের মুসলমানদের উপর হুমকির ঘটনা অব্যাহত আছে। সামাজিক গণমাধ্যমে হুমকি দেয়া একটি পোস্ট চলতি বছরের শুরুতে সবার নজরও কেড়েছে।

ইসলামিক উইমেন্স কাউন্সিলের ধারণা, নিউ জিল্যান্ডে মাথায় স্কার্ফ পরা এমন এক মুসলিম নারীকেও পাওয়া যাবে না, যিনি কখনোই জনসম্মুখে হয়রানির শিকার হননি।