বন্যপ্রাণী নিধন চলতে থাকলে আরও প্রাদুর্ভাব আসবে: জাতিসংঘ

প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে (জুনোটিক) রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা বাড়ছে আর বন্যপ্রাণীর সুরক্ষা ও পরিবেশ সংরক্ষিত রাখার পদক্ষেপ না নেয়া হলে তা চলতে থাকবে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2020, 05:33 AM
Updated : 7 July 2020, 05:33 AM

কোভিড-১৯ এর মতো রোগের উদ্ভবের জন্য তারা প্রাণিজ প্রোটিনের উচ্চ চাহিদা, কৃষির অপরিবর্তনীয় ধরন ও জলবায়ুর পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন।

কোভিড-১৯ এ দুই বছরে বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি নয় ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচী ও আন্তর্জাতিক প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদনে তারা এসব কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

অবহেলিত জুনোটিক রোগে এক বছরে ২০ লাখ মারা যায় বলে জানিয়েছেন তারা। ইবোলা, ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস ও সার্স-ও জুনোটিক রোগ। এই রোগগুলো প্রাণীদের মধ্যে শুরু হয়ে পরে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছিল।

কিন্তু মানুষের মাঝে এসব সংক্রমণ প্রাকৃতিকভাবে ছড়ায়নি, এগুলোকে ডেকে নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি করার মাধ্যমে এটি করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে ভূমির অবক্ষয়, বন্যপ্রাণী নিধন ও অবৈধভাবে সেগুলোকে বন্দি করা, খনিজ সম্পদ আহরণ ও জলবায়ু পরিবর্তন।

এসব প্রক্রিয়া প্রাণী ও মানুষের মধ্যে যোগাযোগে উপায়কে পরিবর্তিত করে দিচ্ছে।

“গত শতাব্দীতে আমরা নভেল করোনাভাইরাসের অন্তত ছয়টি বড় ধরনের প্রাদুর্ভাব দেখেছি,” বলেছেন জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচীর আন্ডার-সেক্রেটরি জেনারেল ও নির্বাহী পরিচালক ইঙ্গর আনাসন।

তিনি বলেন, “গত দুই দশকে এবং কোভিড-১৯ এর আগে জুনোটিক রোগে কারণে ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়।

“অ্যানথ্রাক্স, বোভাইন টিউবারকুলোসিস ও জলাতঙ্কের মতো স্থানীয় জুনোটিক রোগগুলোতে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে প্রতি বছর ২০ লাখ লোক মারা যায়। এগুলো প্রায়ই জটিল উন্নয়ন সমস্যাযুক্ত, গবাদিপশুর ওপর অতিরিক্ত নির্ভশীল ও বন্যজীবের সান্নিধ্যে থাকা সমাজগুলোতেই ঘটেছে।”

গত ৫০ বছরে বিশ্বজুড়ে মাংস উৎপাদন ২৬০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ব্যাখ্যা করে আনাসন বলেন, “বনের জায়গা দখল করে আমরা কৃষির সম্প্রসারণ ঘটিয়েছি, অবকাঠামো গড়ে তুলেছি ও খনিজ সম্পদ আহরণ করেছি।

“মানুষের ২৫ শতাংশ সংক্রামক রোগের সঙ্গে বাঁধ, সেচ ও শিল্পভিত্তিক খামারগুলোর যোগ আছে। ভ্রমণ, পরিবহন ও খাদ্যের সাপ্লাই চেইনগুলো সীমান্ত ও দূরত্ব মুছে দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।”

বিশেষজ্ঞদের এই প্রতিবেদনে ভবিষ্যত প্রাদুর্ভাবগুলো প্রতিরোধে সরকারগুলোকে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, এগুলোর মধ্যে টেকসই জমি ব্যবস্থাপনাকে উৎসাহিত করা, জীববৈচিত্র্যের উন্নয়ন ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বিনিয়োগ অন্যতম।

আনাসন বলেন, “আমরা যদি বন্যপ্রাণী শিকার ও আমাদের বাস্তুসংস্থান ধ্বংস করতে থাকি, তাহলে আসছে বছরগুলোতে আমরা প্রাণী থেকে মানুষের মাঝে এই রোগগুলোর নিয়মিতভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশা করতে পারি।

“ভবিষ্যৎ প্রাদুর্ভাব রোধ করতে আমাদের অবশ্যই প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য আরও বেশি উদ্যোগ নিতে হবে।”