অস্ত্র হাতে হুমকি দেওয়া শ্বেতাঙ্গ যুগলের ভিডিও শেয়ার ট্রাম্পের

আধা-স্বয়ংক্রিয় বন্দুক ও হ্যান্ডগান হাতে থাকা দুই শ্বেতাঙ্গ নারী-পুরুষের বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকারীদের দিকে ক্ষুব্ধ বাক্যবাণ ছুড়ে দেয়ার একটি ভিডিও রিটুইট করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2020, 10:29 AM
Updated : 30 June 2020, 10:29 AM

সোমবার স্থানীয় সময় সকালে তিনি ভিডিওটি রিটুইট করেছেন বলে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

মিনিয়াপোলিসে পুলিশ হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গড়ে ওঠা পুলিশি নির্যাতন ও বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে দেশটিতে যে বিভেদ ও বৈষম্যের রাজনীতি চলছে, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের রিটুইট করা ভিডিও তাতে আরও হাওয়া দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

রোববার সেইন্ট লুইসে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনকারীরা বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ দেখায়।

ট্রাম্পের রিটুইট করা ভিডিওতে বিক্ষোভ চলার সময় হালকা গোলাপি পোলো শার্ট ও খাকি প্যান্ট পরিহিত এক শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিকে একটি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আন্দোলনকারীদের দিকে হুমকি ছুড়ে দিতে দেখা গেছে। খালি পায়ে থাকা ওই ব্যক্তির হাতে একটি আধা-স্বয়ংক্রিয় বন্দুক ছিল।

ভিডিওতে তার পাশে সাদাকালো টি-শার্ট ও কালো প্যান্ট পরিহিত শ্বেতাঙ্গ এক নারীকেও দেখা গেছে। খালি পায়ে থাকা ওই নারীর হাত ছিল রুপালি রংয়ের একটি হ্যান্ডগানের ট্রিগারে।

এসময় বিক্ষোভকারীরা সেইন্ট লুইসের ডেমোক্রেটিক মেয়র লিডা ক্রিউসনের পদত্যাগের দাবিতে শান্তিপূর্ণ শোভযাত্রা নিয়ে তার বাসভবনের দিকে যাচ্ছিলেন।

পুলিশের বরাদ্দ কাঁটছাঁটের সমর্থকদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করে দিয়ে লিডা আন্দোলনকারীদের রোষের মুখে পড়েছেন বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম।

ভিডিওতে অস্ত্র হাতে হুমকি দেওয়া ওই শ্বেতাঙ্গ যুগলকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষোভকারীদের ড্রাম বাজাতে ও একে অপরের প্রতি চিৎকার করে ‘হাঁটতে থাকো’ বলতে শোনা গেছে।

ভিডিওতে থাকা সশস্ত্র দুই শ্বেতাঙ্গের নাম মার্ক টি ম্যাকক্লোস্কি ও প্যাট্রিসিয়া এন ম্যাকক্লোস্কি; তারা দু’জনই আইনজীবী বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম সেইন্ট লুইস পোস্ট-ডিসপ্যাচ।

নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, ভিডিওটিতে দুইপক্ষের মধ্যে যে মুখোমুখি অবস্থান দেখানো হয়েছে, তার সঙ্গে অস্কারজয়ী মার্কিন নির্মাতা কুয়েন্টিন টারান্টিনোর চলচ্চিত্রের সাদৃশ্য আছে।

ভিডিওটি এরই মধ্যেই এক কোটির বেশি দর্শককে আকৃষ্ট করেছে বলেও জানিয়েছে তারা।

ট্রাম্প ওই ভিডিও এবং এ সংক্রান্ত খবরের লিংকটি রিটুইট করেন।

প্রেসিডেন্ট কেন এই ভিডিও ক্লিপটি প্রচার করছেন, সে সম্বন্ধে জানতে চাইলেও হোয়াইট হাউসের কাছ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, অতীতে অনেকবারই ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের অস্ত্র ক্রয় ও বহনের অধিকার দেয়া দ্বিতীয় সংশোধনীর পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। কিন্তু তিনি সংবিধানে দেওয়া অধিকার অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করা ব্যক্তিদের সঙ্গে সহিংস লুটপাটকারী, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগে জড়িতদের আলাদা করে দেখতে ব্যর্থ হয়েছেন।

মিনিয়াপোলিসে পুলিশ হেফাজতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশ নিলেও, তাদের মধ্যে গুটিকয়েক ব্যক্তিই লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

সোমবার একই টুইটে ট্রাম্প ওই লুটপাটকারীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের প্রতিও তার ক্ষোভ ব্যক্ত করেন।

“সিয়াটলের লুটপাটকারী, বিক্ষোভে উস্কানিদাতা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এবং ‘প্রতিবাদকারী’- এর সবাই ‘ক্যাপিটল হিলের মুক্তাঞ্চল’ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। সরকার, সিয়াটলের মেয়র কিংবা ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের গভর্নর কারও প্রতিই এদের কোনো শ্রদ্ধাবোধ নেই। মোটেই ভালো নয়,” টুইটারে এমনটাই লিখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

এর আগে রোববার প্রেসিডেন্টের রিটুইট করা অন্য একটি ভিডিও ক্লিপও তুমুল সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। ভিডিওটি দুই দল শ্বেতাঙ্গের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ট্রাম্পের এক সমর্থককে চিৎকার করে ‘হোয়াইট পাওয়ার’ বলতে শোনা যায়।

রিটুইট করার তিন ঘণ্টা পর ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট থেকে এই ক্লিপটি সরিয়ে নেয়া হয়। হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র পরে জানান, ভিডিওতে চিৎকার করে বলা ‘হোয়াইট পাওয়ার’ অংশটুকু শুনতে পাননি প্রেসিডেন্ট।

তবে এখন পর্যন্ত ট্রাম্প বা হোয়াইট হাউসের কাউকেই এ শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী অবস্থানের বিরোধিতা বা সমালোচনা করতে দেখা যায়নি।