যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত রোগী ২৫ লাখ, মৃত্যু সোয়া লাখ ছাড়াল

মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখ ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2020, 08:56 AM
Updated : 28 June 2020, 08:56 AM

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এখন ২৫ লাখ ১০ হাজারেরও বেশি।

এরমধ্যে শনিবারই ফ্লোরিডা ও টেক্সাসে একদিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি রাজ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালুর অনুমতি দেয়ার পর থেকেই সেসব রাজ্যে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। 

শনিবার ফ্লোরিডায় রেকর্ড সাড়ে নয় হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে; আগের দিন এ সংখ্যা নয় হাজারের কাছাকাছি ছিল।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাজ্যটির কর্মকর্তারা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপর ফের বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন; শুক্রবার টেক্সাসের কর্তৃপক্ষও নতুন করে বিধিনিষেধ দিয়েছে।

এদিন সংক্রামক রোগ বিষয়ক মার্কিন সরকারের শীর্ষ উপদেষ্টা ড. অ্যান্থনি ফাউচি করোনাভাইরাস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ‘গুরুতর সমস্যায়’ আছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। 

এপ্রিলের পর দুই মাসের মধ্যে প্রথম হোয়াইট হাউস করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের ব্রিফিংয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণের ফের ঊর্ধ্বগতির জন্য ‘সম্ভবত কিছু কিছু এলাকায় আগেভাগে বিধিনিষেধ শিথিল’ এবং ‘জনগণের নির্দেশনা না মানাকে’ দায় দিয়েছিলেন। 

“মানুষই মানুষকে সংক্রমিত করছে। শেষ পর্যন্ত আপনিই অন্য একজনকে ভাইরাস পৌঁছে দিচ্ছেন, যিনি তুলনামূলক বেশি ঝুঁকিতে আছেন,” বলেছেন ড. ফাউচি।

ফ্লোরিডায় শনিবার পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৩২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। কোভিড-১৯ অঙ্গরাজ্যটির তিন হাজার তিনশ’রও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।

বিধিনিষেধ শিথিল এবং অন্যান্য এলাকা থেকে আগমণের সুযোগ করে দেয়ার পর সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি রাজ্যে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

প্রাদুর্ভাব সামলাতে গত সপ্তাহেই টেক্সাস, ফ্লোরিডা ও অ্যারিজোনা বিধিনিষেধ আরও শিথিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিল।

পরে শুক্রবার ফ্লোরিডার গভর্নর নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করে অঙ্গরাজ্যের বারগুলোকে তাদের নিজস্ব প্রাঙ্গন থেকে অ্যালকোহল বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। নতুন এ নির্দেশ রেস্তোরাঁগুলোর উপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে মিয়ামি হেরাল্ড।

মিয়ামির মেয়র ফ্রান্সিস সুয়ারেজ বলেছেন, রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তা শহরের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করেছে।

“যারা মাস্ক পরছে না, এখন আমরা তাদেরকে সাজা দিচ্ছি। সম্ভবত, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঘরবন্দি থাকার নির্দেশও দিতে হতে পারে,” শনিবার বিবিসিকে এমনটাই বলেছেন সুয়ারেজ।

কয়েকদিন ধরে রেকর্ড সংখ্যক শনাক্ত রোগী দেখা টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট তার অঙ্গরাজ্যের সব বার বন্ধ রাখতে এবং রেস্তোরাঁগুলোর ভেতর আসন সংখ্যা ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন।

হিউস্টনের পূর্ব দিককার শহর গ্যালেনা পার্কের মেয়র শনিবার রাতে শহরজুড়ে কারফিউ জারি করেছিলেন। হাসপাতালগুলো শিগগিরই রোগীতে উপচে পড়তে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শনাক্ত রোগী হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে অনেকে বেশি সংখ্যক পরীক্ষার দিকে ইঙ্গিত করলেও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা কিছু কিছু এলাকায় পরীক্ষা অনুপাতে রোগীর সংখ্যা বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন।

সরকারি হিসাবে যা আসছে, প্রকৃত রোগীর সংখ্যা এর ১০ গুণ হবে বলে অনুমানও করছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ‘হয়ত দুই কোটি ছাড়িয়ে গেছে’।

দেশটির দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে এখন ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদেরই বেশি দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সিডিসির পরিচালক ড. রবার্ট রেডফিল্ড। 

অন্যদিকে হোয়াইট হাউস যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ এলাকার পরিস্থিতিই ‘স্থিতিশীল’ হচ্ছে বলে আশ্বস্ত করেছে।

শুক্রবার করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের ব্রিফিংয়ে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স চাকরি সংখ্যা ও খুচরা বিক্রিতে অগ্রগতির পরিসংখ্যান দেখিয়ে ‘যুক্তরাষ্ট্রকে সামনে এগিয়ে নিতে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অনন্য সাধারণ কর্মকাণ্ডের’ প্রশংসা করেছেন।