ইউরোপে আবার বেড়েছে ভাইরাসের প্রকোপ, যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে রেকর্ড সংক্রমণ

ইউরোপে কয়েকমাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো আবার করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রেও এপ্রিলের পর একদিনে রেকর্ড ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2020, 06:14 PM
Updated : 25 June 2020, 07:28 PM

ইউরোপজুড়ে বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় সেখানে সপ্তাহে সপ্তাহে সংক্রমণ বাড়ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে বুধবার একদিনেই সর্বোচ্চ ৩৬,৮৮০ জনের ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সংক্রমণের এই হার মূলত দেখা যাচ্ছে, সাউথ এবং ওয়েস্ট ফ্লোরিডা, ওকলাহোমা, সাউথ ক্যারোলাইনা এবং টেক্সাসে। এ রাজ্যগুলেই বুধবার একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের ওই সংখ্যা জানিয়েছে।

ভাইরাস ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যর্থতা এবং পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাওয়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছে এ পরিসখ্যান।

ওদিকে, ইউরোপে আর্মেনিয়া, সুইডেন, মলডোভা এবং নর্থ মেসিডোনিয়াসহ ১১ টি দেশে দ্রুত করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে ‘খুবই গুরুতরভাবে ভাইরাসটি’ ফিরে আসছে বলে জানিয়েছেন ডব্লিউএইচও’র আঞ্চলিক পরিচালক হ্যান্স হেনরি ক্লুজ।

তার কথায়, ভাইরাসের পুনরুত্থানের ঝুঁকি নিয়ে কয়েকসপ্তাহ ধরে তিনি যে সতর্কবার্তা দিয়ে এসেছেন তাই-ই এখন ইউরোপজুড়ে কয়েকটি দেশে বাস্তব রূপ নিচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়া না গেলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে চলে যেতে পারে বলে বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সতর্ক করেছেন তিনি।

ক্লুজ জানান, গত দুই সপ্তাহে নতুন করে ভাইরাস সংক্রমণ বেড়েছে ৩০ টি দেশে। এর মধ্যে ১১ টি দেশে ভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে দ্রুতহারে। এই ১১ দেশ হচ্ছে- আর্মেনিয়া, সুইডেন, মলডোভা, নর্থ মেসিডোনিয়া, আজারবাইজান, কাজাখস্তান, আলবেনিয়া, বসনিয়া-হারজেগোভিনা, কিরগিজস্তান, ইউক্রেইন এবং কসোভো।

বিবিসি জানায়, ইউরোপে এখনও দৈনিক প্রায় ২০ হাজার মানুষের ভাইরাস সংক্রমণ ঘটছে এবং ৭শ’র বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে বলেও ক্লুজ সতর্ক করেছেন।

গত কয়েকসপ্তাহে ইউরোপজুড়ে দেশগুলোতে ব্যাপক আকারে কয়েকটি গুচ্ছ সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এর মধ্যে আছে জার্মানির নর্থরাইন ভেস্টফেলিয়া রাজ্যের একটি শহরের মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানা থেকে ১৫শ’রও বেশি কর্মীর ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা।

যুক্তরাজ্যের ওয়েলস এবং ইংল্যান্ডের মাংস পক্রিয়াকরণ কারখানা থেকেও গত সপ্তাহে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। ফ্রান্সেও ঘটেছে একই ঘটনা।

যুক্তরাষ্ট্রেও ২৯ টি রাজ্যে ভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে। ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এর দেওয়া নতুন ভাইরাস সংক্রমণের পরিসংখ্যান বলছে, ভাইরাসের প্রকোপ যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি। কেবল ভাইরাস পরীক্ষাতেই রোগী বেশি শনাক্ত হচ্ছে তাই নয়, হাসপাতালগুলোতেও উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ছে রোগীর ভিড়।

বুধবারের সর্বশেষ হিসাবে ২৩ লাখের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে এবং প্রায় ১২২,০০০ মানুষ মারা গেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর তার রাজ্যে একদিন আগের তুলনায় ৭ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর জানিয়েছেন।

ইউরোপে সম্প্রতি নতুন সংক্রমণ ধরা পড়ার পরই পোল্যান্ড, জার্মানি, স্পেনের মতো দেশগুলো খুব দ্রুতই আবার বিধিনিষেধ আরোপ করে তা ঠেকানোর ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ডব্লিউএইচও’র আঞ্চলিক পরিচালক হ্যান্স হেনরি ক্লুজ। দেশগুলোর এ পদক্ষেপ আশাব্যাঞ্জক উল্লেখ করে তিনি আগামীতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে আসার সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন।

ক্লুজ বলেন, ডব্লিউএইচও’র পূর্বাভাস অনুযায়ী, গ্রীষ্মের সময়টিতে বেশিরভাগ দেশেই পরিস্থিতি আরো কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে বসন্তের সময়টির জন্য প্রস্তুতি রাখতে হবে। কারণ, তখন ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া এবং অন্যান্য রোগের সঙ্গে মিশে যাবে কোভিড-১৯। সমাজে এখনও ভাইরাসটির সক্রিয় উপস্থিতি আছে এবং এর কোনও কার্যকর চিকিৎসা কিংবা টিকা এখনো নেই।