মঙ্গলবার সকালের দিকের এ ভূমিকম্প কয়েকশত মাইল দূরে রাজধানী মেক্সিকো সিটিতেও অনুভূত হয়েছে এবং সেখানে বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভূমিকম্পটির উপকেন্দ্র দক্ষিণাঞ্চলীয় ওহাকা রাজ্যের প্রশান্ত মহাসাগর তীরবর্তী রিজোর্ট শহর লা ক্রুসেসিতায় বলে মেক্সিকোর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
হতাহতের ঘটনাগুলোও লা ক্রুসেসিতা ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে ঘটেছে। মেক্সিকোর পবর্তময় ওহাকা রাজ্যটি কফি, রসালো উদ্ভিদ মেসক্যাল ও স্পেনীয় ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের জন্য পরিচিত।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক ভূমিকম্পের কয়েক ঘণ্টা পরও প্রাণঘাতী পরাঘাতের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন লা ক্রুসেসিতার বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন।
স্থানীয় একজন কর্মকর্তা জানান, শহরের প্রায় ২০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যার মধ্যে ৩০টি বাড়ি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। বাড়িগুলোর দেয়ালে বড় বড় ফাটল তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা আবর্জনা সরাতে শুরু করেছে।
“প্রকৃতির মূহুর্তের তাণ্ডবে আমরা সবকিছু হারালাম,” বলেন লা ক্রুসেসিতার এক স্টেশনারি দোকানের মালিক ভিসেন্তে রোমেরো; ভূমিকম্পে তার বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাজ্যের রাজধানী ওহাকা সিটি থেকে পর্বত ঘুরে উপকূলের দিকে চলে যাওয়া সড়কগুলো ধসে পড়া পাথরে বন্ধ হয়ে রয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের প্রত্যন্ত একটি গ্রামে তিন জন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন রাজ্যটির এক কর্মকর্তা।
কয়েক ঘণ্টার চেষ্টার পর উদ্ধারকারীরা ভূমিকম্পের উপকেন্দ্রের কাছের বসতিগুলোতে পৌঁছতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ভূমিকম্পে এখানে বহু বাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি পর্বতের একপাশ ধসে পড়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা ছবিতে দেখা গেছে, উপকেন্দ্রের কাছে একটি ক্লিনিক ও একটি গির্জা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ওহাকায় মেক্সিকোর রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পেমেক্সের তেল শোধনাগারে উঁচু থেকে পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ভূমিকম্পের সময় স্থা্পনাটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, এতে শোধনাগারটি কিছু সময় বন্ধ ছিল।
এ ভুমিকম্পে প্রকম্পিত হয়েছে ৪শ’ মাইলের বেশি দূরের মেক্সিকো সিটিও। ভবনগুলো প্রবলভাবে কেঁপে ওঠার পর লোকজন দৌড়ে রাস্তায় নেমে আসে।
রাজধানীতে ৩০টিরও বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অন্তত দুই জন আহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মেক্সিকোর এ ভূমিকম্পটির উপকেন্দ্র পচুদলা শহর থেকে ৬৯ কিলোমিটার (৪৩ মাইল) উত্তরপূর্বাঞ্চলে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) । ভূপৃষ্ঠের মাত্র ২৬ কিলোমিটার গভীরে এর উৎপত্তি বলে জানিয়েছে তারা।
৭ মাত্রার বেশি ভূমিকম্পগুলো ব্যাপক ধ্বংসাত্মক হয়ে থাকে। ফলে এরকম তীব্রতার কম্পনে প্রবল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।
২০১৭ সালে মেক্সিকোর মধ্যাঞ্চলে ৭ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে রাজধানী ও আশেপাশের এলাকায় অন্তত ৩৫৫ জনের প্রাণহানি হয়েছিল।