কারফিউ জারি হওয়া এবং বিক্ষোভ চলার সময় মানুষের সঙ্গে পুলিশের নির্মম আচরণের এ ভিডিওগুলোর বর্ণনা দিয়েছে বিবিসি।
নিউ ইয়র্ক রাজ্যের বাফেলো শহরের একটি ভিডিওয় দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে দেখা গেছে এক শ্বেতাঙ্গ বৃদ্ধকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দিতে। এ ঘটনায় ওই দুই পুলিশকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
ওদিকে, নিউ ইয়র্ক শহরে, ছুটে পালানো বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশকে নির্দয় আচরণ করতে দেখা গেছে আরেকটি ভিডিওতে।
মিনেসোটায় জর্জ ফ্লয়েড মিনিয়াপোলিসের যে স্থানে পুলিশের হাতে খুন হন, সেখানে তার একটি স্মরণানুষ্ঠান শেষ হওয়ার কয়েক ঘন্টা পর পুলিশের বর্বরতার এ খবরগুলো পাওয়া গেছে।
জর্জ ফ্লয়েডকে পুলিশ যেভাবে মেরেছে তারও ভিডিও ছিল। সেটি সামনে আসার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও পুলিশের আচরণ এবং বর্ণবাদ নিয়ে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
এভাবে বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের সাংবিধানিক অধিকার ভঙ্গ করায় প্রেসিডেন্ট সমালোচনার মুখে পড়েছেন এবং এ অভিযোগে বৃহস্পতিবার তিনি ও তার এটর্নি জেনারেলসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে নাগরিক অধিকার সংগঠন ‘আমেরিকা সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন’।
অন্য আরেক ঘটনায় অ্যারিজোনার পুলিশ আরেক কৃষ্ণাঙ্গ ডিওন জনসনের মৃত্যুর বিস্তারিত প্রকাশ করেছে। জর্জ ফ্লয়েড মারা যাওয়ার দিন ২৫শে মে’তেই অ্যারিজোনার ফিনিক্স শহরে মারা যান জনসন। তাকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছিল।
পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, জনসন চালকের আসনে মাতাল অবস্থায় ছিলেন এবং তার গাড়ির কারণে যান চলাচল আংশিকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। তার সঙ্গে কথা বলার সময় ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু হলে তাকে গুলি করা হয়।
পুলিশের অডিও রেকর্ডিং এবং পরিবহন দপ্তরের রেকর্ড করা ভিডিও জনসনের পরিবারের হাতে দেওয়ার সময় এ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
বাফেলো শহরের ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ কারফিউ বলবৎ করার সময় ৭৫ বছর বয়স্ক এক বৃদ্ধ সামনে এগিয়ে যান। পুলিশ তখন তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে এগিয়ে যায়। ধাক্কায় ওই বৃদ্ধ মাটিতে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। তার কান থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়ার পর দেখা যায়, তার মাথায় মারাত্মক আঘাত লেগেছে।
বাফেলো পুলিশ বিভাগ থেকে প্রথমে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল, ওই ব্যক্তি হোঁচট খেয়েছিলেন এবং বিক্ষোভকারীদের সাথে ধ্বস্তাধ্বস্তির সময় তিনি মাটিতে পড়ে যান। স্যোশাল মিডিয়ায় ঘটনাটি নিয়ে পুলিশের এমন বিবৃতি ক্ষোভের মাত্রা আরো বাড়িয়েছে।
পুলিশের মুখপাত্র জেফ রিনোল্ডো পরে বলেন, ওই বিবৃতি যে কর্মকর্তারা দিয়েছিলেন, তারা সরাসরি ওই ঘটনায় জড়িত ছিলেন না। তাছাড়া, ভিডিওটি সামনে আসার পর বৃদ্ধকে ধাক্কা মারা দুই পুলিশকে বিনা বেতনে বরখাস্তও করা হয়েছে।
একইদিন সন্ধ্যায়, নিউ ইয়র্ক সিটিতে একজন পণ্য সরবরাহ যানের চালককে গ্রেপ্তার করা হয় কারফিউ শুরুর ২৭ মিনিট পর। অথচ ওই জরুরি সেবা কর্মী ছিলেন কারফিউয়ের আওতার বাইরে। টুইটারে পোস্ট করা ভিডিওতে পুলিশকে তাকে গ্রেপ্তার করতে দেখা যায়।
উইলিয়ামসবার্গ শহরের আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করছে এবং অন্তত একজন বিক্ষোভকারীকে মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
অন্য আরেক ভিডিওতে দেখা গেছে, একজন মাটিতে পড়ে আছেন, তার মাথা থেকে রক্ত ঝরছে; সে অবস্থাতেই তাকে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ।
নিউ ইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর এন্ড্রু কুমো বৃহস্পতিবার পুলিশের পক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, তারা ‘বিনা কারণে’ কোন নাগরিককে মারধর করেনি। আর যদি তা করে থাকে তাহলে ‘ভুল করেছে।’
শহরের মেয়র বিল ডি ব্লাসিও বলেছেন, কর্তৃপক্ষ সবকিছু করছে পরিস্থিতিকে সংযত রাখার দৃষ্টিকোণ থেকেই।
তবে দুইজনই এমন কথা বললেও ভিডিওতে দেখা ঘটনাগুলোর নিন্দা করেছেন। কুমো এক টুইট বার্তায় বাফেলোর ঘটনাকে ‘খুবই অন্যায় এবং ন্যাক্কারজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন।
তার কথায়, “পুলিশ আইন প্রয়োগ করবে। কিন্তু আইনের অপব্যবহার করবে না।”
ওদিকে, মেয়র ডি ব্লাসিও বলেছেন, জরুরি পণ্য সরবরাহ কর্মী গ্রেপ্তারের ভিডিও দেখার পর তিনি শহরের পুলিশ বিভাগের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেছেন।
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশ তা দমনে কারফিউ জারি করার সময়ে এসব ঘটনা ঘটেছে।
মিনিয়াপোলিস শহরে গত ২৫শে মে ৪৬ বছর বয়স্ক কৃষ্নাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড জাল নোট দিয়ে সিগারেট কিনছিলেন কি-না তা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ তার গাড়ি থামায়।
ঘটনার ভিডিওতে দেখা গেছে, একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ ফ্লয়েডকে গ্রেপ্তার করছেন এবং তাকে মাটিতে শুইয়ে ফেলে বেশ কয়েক মিনিট ধরে তার হাঁটু দিয়ে ফ্লয়েডের ঘাড় চেপে ধরে আছেন। ফ্লয়েড বারবার ‘শ্বাস নিতে পারছি না’ বলার পরও তাকে ছাড়া হয়নি।
এ ভিডিও স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পরই যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে জ্বলে ওঠে বিক্ষোভের আগুন এবং দ্রুতই তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও।
ফ্লয়েডের মৃত্যুতে আর্থ-সামাজিক অসমতা এবং বৈষম্য নিয়ে মানুষের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে তাদের হতাশারই প্রতিফলন ঘটছে।
যুক্তরাষ্ট্রে কারফিউ ভঙ্গ করে বৃহস্পতিবারও বহু শহরে মানুষ বিক্ষোভ করেছে।