বেসরকারি মহাকাশযানে নাসার নভোচারীদের মহাশূন্য যাত্রা

প্রথমবারের মতো একটি বেসরকারি কোম্পানির রকেটযানে চড়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে যাত্রা করলেন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার দুই নভোচারী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2020, 08:25 AM
Updated : 31 May 2020, 10:45 AM

শনিবার ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক বেসরকারি রকেট নির্মাতা কোম্পানি স্পেসএক্সের মহাকাশযানে করে ওই দুই অভিজ্ঞ নভোচারী মহাশূন্যে যাত্রা করেন, এর মাধ্যমে মহাশূন্য ভ্রমণে এক নতুন যুগ সূচিত হল বলে জানিয়েছে বিবিসি।   

নয় বছর আগে মহাকাশে নাসা নিজেদের শাটল পাঠানো বন্ধ করার পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের মাটি থেকে মার্কিন নভোচারীরা পৃথিবীর কক্ষপথে গেলেন।

দেশটির উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের মালিকানাধীন কোম্পানি স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটটি ফ্লোরিডা থেকে যাত্রা করে।

হারলি ও বেনকেনকে নিয়ে স্পেসএক্সের ড্রাগন মহাকাশযানটি ফ্যালকন-৯ রকেটে চেপে শনিবার ফ্লোরিডার স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ২২মিনিটে মহাকাশের উদ্দেশ্যে ছুটে যায়।

ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের আশপাশের পরিবেশ পুরোপুরি অনুকূলে না থাকায় আবহাওয়াবিদরা প্রথমে মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণে ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা দেখেছিলেন।

পরে আবহাওয়ার সবুজ সংকেত মেলায় নির্ধারিত সময়েই ফ্যালকন রকেটটি উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে আটলান্টিক মহাসাগরের উপর দিয়ে উত্তরপূর্ব দিক বরাবর উড়ে যায়।

আড়াই মিনিট পর মহাকাশযানটির নিচের অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে সমুদ্রে অবস্থানরত একটি মানুষবিহীন জাহাজে ফিরে আসে। আরও ৬ মিনিট পর দুই নভোচারীকে নিয়ে স্পেসএক্সের যানটি নিরাপদে পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করে।

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তৃতির মধ্যেই এ ঐতিহাসিক মিশন যাত্রা শুরু করে। মহামারী পরিস্থিতির কারণে কেনেডি স্পেস সেন্টারের আশপাশে জনসাধারণের জড়ো হওয়াকে অনুৎসাহিত করা হয়। উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে অতিথির সংখ্যাও কাঁটছাঁট করেছিল নাসা।

উড্ডয়নের আগে দুই নভোচারীকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল। উৎক্ষেপণের দিন যারা তাদের সান্নিধ্যে এসেছিলেন, তাদেরকে মাস্ক পরে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

যে যানে চেপে হারলে ও বেনকেন কক্ষপথে যাচ্ছেন, তা মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার মালিকানাধীন নয়; নাসা এখানে কেবল স্পেসএক্সের মহাকাশে যাওয়া আসার ‘ট্যাক্সি’ সেবা কিনেছে।

মিশনটি সফল হলে তা কেবল মাস্কের কোম্পানির জন্যই ‘খুশির খবর’ হবে না, এর ফলে বেসরকারিভাবে মহাকাশে যাওয়া-আসার সংস্কৃতিও শুরু হবে।

মাস্ক জানিয়েছেন, তার মহাকাশযান যখন নভোচারীদের নিয়ে কক্ষপথে প্রবেশ করে তখন তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন।

নয় বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) নভোচারী পাঠাতে রাশিয়ার রকেট ও ক্যাপসুলের উপর নির্ভর করছিল নাসা। এখন স্পেসএক্সের মিশন সফল হলে নাসার রাশিয়া নির্ভরতা কাটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বেসরকারি মহাকাশযানে নাসার নভোচারী পাঠানো দেখতে ফ্লোরিডার উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে উপস্থিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও বিষয়টির উপরই জোর দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন,“আগের নেতারা কক্ষপথে নভোচারী পাঠানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর দয়াদাক্ষিণ্যের উপর ফেলে রেখেছিলেন। আর নয়। আজ থেকে ফের আমরা গর্বের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নভোচারীদের নিজেদের দেশের মাটি থেকে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে সেরা মার্কিন রকেটে করে মহাকাশে পাঠাচ্ছি।”

স্পেসএক্স কোম্পানির মতো একই ধরনের চুক্তি নাসা উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সঙ্গেও করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।