জনসনের উপদেষ্টার লকডাউন ভঙ্গ নিয়ে বিতর্কে মন্ত্রীর পদত্যাগ

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা ডমিনিক কামিংসের লকডাউন বিধি ভঙ্গের অভিযোগ নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে পদত্যাগ করেছেন স্কটল্যান্ড বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি ডগলাস রস।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2020, 03:28 PM
Updated : 26 May 2020, 03:28 PM

ডমিনিক কামিংস ‘ভুল কিছু করেননি’ বলে নিজের পক্ষে সাফাই দেওয়া এবং পদত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় ডগলাস রস এর প্রতিবাদে ইস্তফা দিলেন।

কামিংসের ঘটনা নিয়ে বিতর্কের জেরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন সরকারে রসই প্রথম পদত্যাগ করলেন। এতে কামিংসকে বরখাস্ত করার জন্য সরকারের ওপর চাপ বাড়ল।

রসের পথ অনুসরণ করে আরো অনেকেই এরপর পদত্যাগ করতে পারেন বলে স্কাই নিউজে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঊর্ধ্বতন এক কনজারভেটিভ রাজনীতিবিদ।

জনসনের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ডমিনিক কামিংস কোভিড-১৯ সংক্রমণের ভয়াবহ পরিস্থিতির সময়টিতে কঠোর লকডাউনের মধ্যে ২৬৪ মাইল পথ গাড়ি চালিয়ে সপরিবারে লন্ডন থেকে উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডের দারহামে তাদের স্বজনদের কাছে যান।

ওই সময় কামিংসের স্ত্রীর করোনাভাইরাসের লক্ষণও ছিল। এরপরও ওই ভ্রমণে যাওয়ার ব্যাখ্যায় কামিংস সোমবার যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, বিশেষ এ পরিস্থিতির কারণেই তাদেরকে স্বজনদের কাছে যেতে হয়েছে, যাতে এ সময়ে তাদের সন্তানদের দেখভালের ব্যবস্থা হয়।

কিন্তু সরকারের প্রচারিত লকডাউন বিধিতে পরিষ্কার করেই বলা হয়েছে, লোকজনকে ঘরে থাকতে হবে, বিশেষ করে কারো করোনাভাইরাসের লক্ষণ থাকলে তার বাইরে যাওয়া চলবে না।

যদিও কারো শিশুসন্তান থাকলে এবং জীবনের প্রচণ্ড ঝুঁকির ক্ষেত্রে বিধি শিথিলযোগ্য বলে নির্দেশনায় উল্লেখ আছে।

কিন্তু যুক্তরাজ্যের অনেক নাগরিকসহ জনসনের নিজের কনজারভেটিভ দলের এমপিরা, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা এমনকি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও বলছেন, কামিংস নিয়মমাফিক কাজ করেননি।

সব মানুষকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেখানে কামিংস স্পষ্টতই কিছু গাইডলাইন ভঙ্গ করেছেন, এমনকী ভ্রমণের আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী জনসনকেও তার এই সিদ্ধান্তের কথা জানান নি বলেও আভাস পাওয়া গেছে তার কথায়।

ফলে লকডাউনের মধ্যে কামিংসের ভ্রমণের সিদ্ধান্ত ব্রিটিশদের মধ্যে ক্ষোভ সঞ্চার করেছে এবং কনজারভেটিভ পার্টি থেকে তার পদত্যাগেরও দাবি তুলেছেন বেশ কয়েকজন এমপি।

কামিংস এ দাবি উপেক্ষা করেছেন, এমনকী তার কৃতকর্মের জন্য ব্রিটিশ জনগণের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতেও তিনি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ওদিকে, কামিংসকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন খোদ জনসনও।

এতে জনসন জনগণকে যে কাজ করতে নিষেধ করছেন, ঠিক সে কাজই তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের করতে বাধা দিচ্ছেন না- এমন অভিযোগ উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।

কামিংস এবং জনসনের এমন কর্মকাণ্ড মানুষজনকে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখার প্রচেষ্টা ব্যাহত করছে বলেও অভিমত সাবেক এক টোরি মন্ত্রীর।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানালেন স্কটল্যান্ড বিষয়ক জুনিয়র মন্ত্রী ডগলাস রস।

এর কারণ ব্যাখ্যায় রস বলেছেন, “কামিংস তার পরিবারের স্বার্থে যা সবচেয়ে ভাল মনে করেছেন সেটিই করেছেন তা তিনি বুঝেছেন, কিন্তু সরকারের নির্দেশ মেনে চলা অনেকেই হয়ত এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তাদের নেই বলেই বোধ করেছেন।”

রস বলেন, “অনেক মানুষই আছেন যারা তাদের প্রিয়জনকে শেষ বিদায় জানাতে পারেননি, শোকের সময় অনেক পরিবারই একত্রিত হতে পারেনি। সরকারের নির্দেশিকা মেনে চলার কারণে অসুস্থ স্বজনদেরকেও হয়ত অনেকে দেখতে যেতে পারেনি। আমি এসব মানুষ ভুল কাজ করেছেন তা বলতে পারি না। আর ওই উর্ধ্বতন উপদেষ্টা (কামিংস) ঠিক কাজ করেছেন সেটিও বলতে পারি না।”

রসের পদত্যাগের সিদ্ধান্তে ১০ ডাউনিং স্ট্রিট দুঃখ প্রকাশ করেছে। ওদিকে, রসের পদত্যাগের পর কামিংসকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়েছেন স্কটিশ পার্লামেন্টের সদস্য এডাম টমকিনস।