করোনাভাইরাস সারাতে রেমডেসিভিরের সক্ষমতার ‘সুস্পষ্ট’ প্রমাণ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

করোনভাইরাস থেকে মানুষকে সারাতে বহুল আলোচিত ওষুধ রেমডেসিভিরের সহায়ক ভূমিকার বিষয়ে ‘সুস্পষ্ট’ প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2020, 07:38 AM
Updated : 2 May 2020, 05:12 AM

বিশ্বজুড়ে হাসপাতালে রেমডেসিভিরের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের মাধ্যমে কোভিড-১৯ রোগীদের উপসর্গের স্থায়িত্ব ১৫ দিন থেকে ১১ দিনে নেমেছে বলে দেশটির কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

এবিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিশ্চিত হলে এটা একটা ‘দুর্দান্ত ফলাফল’ হবে, কিন্তু মনে রাখতে হবে এটা রোগ প্রতিরোধে ‘ম্যাজিক বুলেট’ নয়।

নতুন খবরে এই ওষুধের প্রস্তুতকারক যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি গিলিয়াডের শেয়ারের দামে উল্লম্ফন হয়েছে।

কোম্পানির শেয়ারের দাম বুধবার আগের দিনের চেয়ে ৫ শতাংশ বেড়ে ৪৩ দশমিক ১৪ ডলারে সর্বশেষ লেনদেন, যাতে একবছরে ২৭ শতাংশ দর বেড়েছে বলে রয়টার্সের তথ্য।

করোনাভাইরাস থেকে জীবন বাঁচাতে সম্ভাবনাময় কোনো ওষুধ বের হলে তা হাসপাতালের উপর চাপ কমাবে এবং আংশিকভাবে লকডাউনের উঠিয়ে দেওয়া সম্ভব করে তুলবে।

ইবোলার চিকিৎসার জন্য তৈরি হয়েছিল জীবাণুপ্রতিরোধী ওষুধ রেমডেসিভির মানুষের শরীরে কোষ প্রতিস্থাপনে ভাইরাসের জন্য দরকারি এনজাইমকে আক্রমণের মাধ্যমে কাজ করে। এর ফলে ভাইরাস তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (এনআইএআইডি) পরিচালিত এই পরীক্ষায় এক হাজার ৬৩ জন রোগী অংশ নেয়। এদের কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এই ওষুধ এবং অন্যদের প্লাসেবো (স্বান্ত্বনা ওষুধ) প্রয়োগ করা হয়।

এনআইএআইডি পরিচালক ডা. অ্যাণ্থনি ফাউচি বলেন, “প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষ করে দেখা যায়, রোগ সারানো সময় কমাতে রেমডিসিভিরের সুস্পষ্ট, উল্লেখযোগ্য ও ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।”

তিনি বলেন, পরীক্ষার ফল প্রমাণ করেছে  যে ‘একটি ওষুধ এই ভাইরাসটিকে আটকাতে পারে’ এবং ‘আমাদের রোগীদের চিকিত্সা করার ক্ষমতার দোয়ার খুলে দিচ্ছে’।

তবে মৃত্যুর ক্ষেত্রে ওষুধটির প্রভাব এখনও স্পষ্ট নয়। রেমডেসিভির পাওয়া রোগীদের মধ্যে মৃত্যুহার ছিল ৮ শতাংশ এবং প্লাসিবো রোগীদের মধ্যে মৃত্যুহার ছিল ১১ শতাংশ। তবে এই ফলাফল পরিসংখ্যানগত দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ নয়। এর অর্থ হলো- এই তফাৎ প্রকৃত কিনা তা বৈজ্ঞানিকরা বলতে পারেননি।

এছাড়া এই ওষুধে কারা উপকৃত হচ্ছে তাও স্পষ্ট নয়। যারা এমনিতেই সারতো এটি কি তাদের দ্রুত সারাতে সহায়তা করছে? বা এর ফলে রোগীদের কি আইসিইউতে যেতে হচ্ছে না? ওষুধটি অল্প বয়ষ্ক না প্রাপ্ত বয়স্কদের বেশি কাজ করে? বা আগে রোগাক্রান্ত বা রোগহীনদের মধ্যে কাদের শরীরে ভাল কাজ করে? রয়েছে বা নেই? নাকি ভাইরাস শরীরে জেঁকে বসার আগেই প্রাথমিকভাবে রোগীদের এই চিকিত্সা দিতে হবে?

বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হলে এগুলি হবে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কারণ কোনো ওষুধ মিললে তার দুই ধরনের প্রভাব পড়বে- জীবন বাঁচাবে এবং লকডাউন উঠাতে সহায়তা করবে।

এই ওষুধের ফলে যদি রোগীকে আইসিইউতে নিতে না হয়, তাহলে হাসপাতালে ভিড়ের ঝুঁকি আরও কমবে এবং সামাজিক দূরত্ব রক্ষার বিধিও কিছুটা শিথিল হবে।

মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, রেমডেসিভির নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষার ফল এমন সময় এলো, যখন চীনে একই ওষুধ পরীক্ষা করে অকার্যকর প্রমাণ হয়েছে।

তবে সেই পরীক্ষাটি অসম্পূর্ণ ছিল। কারণ উহানে লকডাউন সফল হওয়ায় চিকিৎসকরা এক পর্যায়ে রোগীই পাননি।

তবে কোভিড-১৯ চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই ওষুধ যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন বিভাগের অনুমোদন পাবে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়।

কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য পরীক্ষাধীনে থাকা অন্য ওষুধগুলির মধ্যে ম্যালেরিয়া ও এইচআইভির কিছু ওষুধ রয়েছে, যেগুলো ভাইরাসকে আক্রমণ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে স্থিতিশীল করতে পারে।

তবে ভাইরাসপ্রতিরোধী ওষুধগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে এবং রোগ প্রতিরোধক ওষুধ পরবর্তী পর্যায়ে ব্যবহার করা হয়।