করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ভিন্ন পথে তুরস্ক

নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশ যেখানে লকডাউন দিয়ে সব মানুষের চলাচল সীমিত করেছে, সেই বিধি-নিষেধে কিছুটা ভিন্নতা এনেছে তুরস্ক।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2020, 07:27 PM
Updated : 17 April 2020, 08:12 PM

তুরস্ক সরকার গেল সপ্তাহান্তে ৩১টি প্রদেশে ৪৮ ঘণ্টার কাউফিউ দেয়, যার আওতায় আসে দেশটির তিন চতুর্থাংশ মানুষ।

মাত্র দুই ঘণ্টা আগে ওই কারফিউয়ের ঘোষণা দেওয়ায় অনেক তুঘলকি কাণ্ড ঘটে যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে দোকানে ভিড় করেন বহু মানুষ, যেখানে ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রাখার কোনো বালাই ছিল না। সে সময়ের অনেক  হাস্যরসাত্মক ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা হয়।

কারফিউ লংঘনের দায়ে ধরা পড়ে এক ব্যক্তিকে তার স্ত্রী ও গাড়ি ফেলে সটকে যেতে দেখা যায়। জরিমানা এড়াতে একজন টার্কিশ জানেন না বললেও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ধরা পড়ে যান তিনি।

কারফিউ ঘিরে এই ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পর প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান জাতির উদ্দেশে ভাষণে জনগণকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে ফের সপ্তাহান্তে কারফিউয়ের ঘোষণা দেন।

সপ্তাহান্তের এই কারফিউ ছাড়াও অন্যান্য বিধি-নিষেধের ক্ষেত্রেও নিজেদের মতো করে চলছে তুরস্ক। কর্মদিবসগুলোতে ঘরে থাকার (স্টে হোম) নির্দেশনা শুধু ২০ বছরের কম বয়সী এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য প্রযোজ্য। অন্যরা সবাই বাইরে যেতে পারছেন।

তুরস্কে অনেক ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, রেস্তোরাঁ খোলা রাখা হলেও শুধু খাবার ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে, পার্কের মতো জনসমাগমস্থলগুলো বন্ধ রয়েছে, ব্যাংক খোলা শুধু কয়েক ঘণ্টার জন্য।

অপরদিকে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ পুরোদমে চলছে, খোলা রয়েছে কারখানা ও অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যেগুলো অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে চায় না।

বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, তুরস্কের মতো আংশিক বিধি-নিষেধও ভাইরাসের বিস্তার রোধে কাজে দিতে পারে যতক্ষণ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি নাজুক ব্যক্তিরা সুরক্ষিত থাকবে এবং যারা কাজ চালিয়ে যাবে তারা যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে তা করবে।

এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ল্যাংকেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলোজিস্ট মুহাম্মদ মুনীর বলেন, “এটা একটা বিকল্প পদ্ধতি।”

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, সুস্থ লোকজন কেনাকাটার জন্য বাইরে গেলেই তা ‘ক্ষতির কারণ হবে না’।

“আক্রান্তদের ৮০ শতাংশ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সুতরাং যদি সুস্থ ব্যক্তি হন যাদের আর কোনো শারীরিক সমস্যা নেই তখন এই পদ্ধতি অবশ্যই সহায়ক। লকডাউনের একমাত্র সুবিধা হল তা ভাইরাসের বিস্তার ধীরগতির করে, হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ কমায়।”

তবে ইউনিভার্সিটি অব কেন্ট-এর ভাইরোলোজির সিনিয়র লেকচারার ডা. জেরেমি রসম্যানের মতে, তুরস্ক প্রতিদিন যত সংখ্যক মানুষের সংক্রমণের তথ্য দিচ্ছে তাতে এই পদ্ধতি ঝুঁকিপূর্ণ।

তিনি বলেন, যখন কোনো দেশ ভাইরাস সংক্রমণের প্রাথমিক পর্বে থাকে এবং নতুন রোগীর সংখ্যা কম থাকে অথবা কোথাও সংক্রমণ চূড়ান্ত ধাপে উপনীত হলে এবং তারা লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসার পথে থাকলে তখন আংশিক লকডাউন ফলপ্রসূ হয়। তুরস্কের মতো অবস্থায় অধিকাংশ দেশ পুরো লকডাউন বাস্তবায়ন করছে।

এই ভাইরোরোজিস্ট বলেন, “আংশিক লকডাউনও ভালো হতে পারে, এটা কিছু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা ও প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য আনে। তবে এটা নির্ভর করে লোকজন কতটা নির্দেশনা মেনে চলছে এবং কর্মক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব ও হাত জীবাণুক্তকরণ কতটা করছে তার উপর। কিন্তু তুরস্কে এখন যে হারে সংক্রমণ ঘটছে তাতে এই পদ্ধতি পর্যাপ্ত হবে না বলে ঝুঁকি থেকে যায়।”

বিশ্বের যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তার শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় রয়েছে তুরস্ক। প্রতিদিন সেখানে চার হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তবে সেখানে এই ভাইরাসে মৃত্যু হার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।

তুরস্কের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (টিএমএ) বলছে, কোভিড-১৯ এর লক্ষণ থাকলেও পরীক্ষায় যাদের নেগেটিভ এসেছে তারা মারা গেলে করোনাভাইরাসে মৃতদের তালিকায় তাদের রাখা হয়নি।