জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যে টালি নিয়মিত প্রকাশ করছেন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রে এক দিনেই ১৮৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে নিউ ইয়র্ক শহরেও। সেখানে ২৪ ঘণ্টায় আটশর বেশি মানুষের প্রাণ গেছে বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাতে জানিয়েছে সিএনএন।
গত ১৪ মার্চ নিউ ইয়র্ক রাজ্যে কোভিড-১৯ এ প্রথম মৃত্যুর পর একদিনে এত মানুষের মৃত্যু আর ঘটেনি।
নিউ ইয়র্ক রাজ্যে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার।
শুধু নিউ ইয়র্ক শহরেই মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির হালনাগাদ পরিসংখ্যানে তথ্য মিলছে।
শুধু নিউ ইয়র্ক শহরে মৃত্যুর সংখ্যাও এখন পুরো চীনকে ছাড়িয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসের উৎস ভূমি চীনে মৃতের সংখ্যা এখনও সাড়ে ৩ হাজারের নিচে রয়েছে।
চার মাস আগে গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়।
তবে এখন চীনে পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণে; সোমবার দেশটির মূলভূখণ্ডে কোভিড-১৯ রোগে কারও মৃত্যু হয়নি এবং স্থানীয়ভাবে কেউ আক্রান্তও হয়নি বলে দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে।
চীনে সংক্রমণ ঘটার দুই মাস পর ইউরোপকে বিপর্যস্ত করে এখন করোনাভাইরাস মহামারীর নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র।
দুদিন আগে নিউ ইয়র্কে দিনে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির হার কমলে তাতে আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও।
তবে নিউ ইয়র্কের গভর্নর কুমো মনে করছেন, ভয়াবহ পরিস্থিতির চরম সীমা অতিক্রম করছেন তারা। অর্থাৎ সামনে পরিস্থিতির উন্নতি আশা করছেন তিনি।
পরিস্থিতি যেন অবনতির দিকে না যায়, সেজন্য সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এবং স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণের আহ্বান জানান কুমো।
তিনি জানান, হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত ৩ হাজার শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালে জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হালনাগাদ যে তথ্য দিয়েছে, তাতে বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ লাখ ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮২ হাজার পেরিয়ে গেছে।
এক দিনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ৬৫ হাজারের বেশি; মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ৬ হাজারের মতো।
আক্রান্তের সংখ্যায় এখনও শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র; দেশটিতে মোট সংক্রমণ ঘটেছে ৩ লাখ ৯৯ হাজার জনের মধ্যে। মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৩ হাজার ছুঁই ছুঁই।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিপর্যয়কর সময় পার করা ইউরোপের দেশ ফ্রান্সে এক দিনে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪১৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে, যা মৃতের সংখ্যাকে ১০ হাজার ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে।
মৃতের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পরই এখন ফ্রান্স। আক্রান্তের সংখ্যায় দেশটি এখন চতুর্থ। ফ্রান্সে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ১০ হাজার পেরিয়েছে।
ফ্রান্সের জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান জেরমি সলোমন আশঙ্কা করছেন সামনে আরও ভয়ানক দিন আসছে। তিনি বলেছেন, ফ্রান্স এখনও খারাপ অবস্থার চরম সীমায় এখনও পৌঁছেনি।
ফ্রান্সের মতো হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাজ্যও। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৮৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬ হাজার ১০০।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, তারা এ পর্যন্ত প্রায় ৫৬ হাজার মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত করেছেন।
এদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও রয়েছেন। অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে হাসপাতালে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তবে তার অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানানো হয়েছে।
জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়ালেও মৃতের সংখ্যা ২ হাজারের মত, যা বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসের চেয়েও কম।
ইউরোপে সবচেয়ে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাওয়া ইতালি ও স্পেনে পরিস্থিতির ক্রমেই উন্নতি ঘটছে। সেখানে মৃত কিংবা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে।
মৃতের সংখ্যায় শীর্ষে থাকা ইতালিতে মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৭ হাজার ১২৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে; আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫৮৬।
মৃতের সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা স্পেন আক্রান্তের সংখ্যাও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দেশটিতে আক্রান্ত ১ লাখ ৪১ হাজার ৯৪২ জনের মধ্যে ১৪ হাজার ৪৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে।
ইরানে মৃতের সংখ্যা শতাধিক বেড়ে ৩ হাজার ৮৭২ জনে দাঁড়িয়েছে। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ৬২ হাজারের বেশি মানুষ।
ইরানে পরিস্থতির খানিক উন্নতি ঘটলেও অবনতি ঘটেছে তুরস্কে; দেশটিতে আক্রান্ত বেড়ে ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে, মৃতের সংখ্যা হয়েছে ৭২৫।
দক্ষিণ এশিয়ার ভারতে রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৫ হাজার ৩৫১ জন হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজারের বেশি রোগী মহারাষ্ট্রের। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬০ জনে।
পাকিস্তানে এক দিনে দুই শতাধিক নতুন রোগী পাওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৪ হাজার ৩৫ জন। আক্রান্তের অর্ধেকই পাঞ্জাবের। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৭ জনে।
বাংলাদেশে এক দিনে এক দিনেই ৪১ জনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা একলাফে বেড়ে ১৬৪ হয়েছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭।