মোদীর কাছে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন চান ট্রাম্প, ভেবে দেখছে ভারত

করোনাভাইরাসের প্রকোপ মোকাবেলায় ভারতকে পাশে চেয়েই রোববার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ সরবরাহের অনুরোধ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ভারত একদিন আগেই এ ওষুধ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা কঠোর করলেও এখন ট্রাম্পের অনুরোধ বিবেচনা করে দেখছে বলে শোনা যাচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 April 2020, 05:33 PM
Updated : 6 April 2020, 06:12 PM

ট্রাম্পের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ভারত করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ওই ম্যালেরিয়ার ওষুধ রপ্তানিতে কড়াকড়ি শিথিল করবে কি-না তা নিয়ে জল্পনা চলার মধ্যেই এ খবর এল।

ট্রাম্পের সঙ্গে মোদীর সম্পর্ক খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ এবং উষ্ণ। সদ্যই ভারত সফর করে ট্রাম্প সে সম্পর্কের ভিত আরো মজবুত করেছেন।

তবে ট্রাম্প যা চেয়েছেন সে সাহায্য করার মতো অবস্থায় ভারত এখন আসলেই আছে কি-না সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ। তাছাড়া, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের কার্যকারিতা প্রমাণিত না হওয়ায় এ ওষুধ আসলেই কতটা কাজে আসে তা নিয়েও এখনো প্রশ্ন আছে।

করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসায় কিছুক্ষেত্রে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কাজে দেওয়ার পর ভারতের কাছ থেকে এ ওষুধ চেয়ে পাঠান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। মোদীর সাথে ফোনে কথা হওয়ার পর ওষুধ সরবরাহের বিষয়টি ভারত সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলেও ট্রাম্প দাবি করেন।

তবে ভারত সরকার যে যুক্তরাষ্ট্রকে ওষুধ পাঠাচ্ছেই তা এখনো নিশ্চিত করেনি। প্রধানমন্ত্রী মোদী কেবল মার্কিন প্রেসিডেন্টকে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় দু’দেশের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ে যাওয়ার প্রতিশ্রতি দিয়েছেন বলেই জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করতে পারবে ভারত?

ভারত সরকার নিজ দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্তের চিকিৎসায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন যাতে কম না-পড়ে, সেজন্য শনিবার থেকেই এ ওষুধ এবং এর উপাদান রপ্তানিতে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

তবে ভারত সরকার এখন ট্রাম্পের অনুরোধ বিবেচনা করে দেখার পথেই হাঁটছে- এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। ভারতের স্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যম সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, মঙ্গলবারের মধ্যেই এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত হতে পারে। আগামী দিনগুলোতে ভারতে এ ওষুধের অভ্যন্তরীন চাহিদা কতটুকু তা ভেবে-চিন্তেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে ভারতেই বিপুল পরিমাণে এ ওষুধ তৈরি হয়। কিন্তু তাই বলে অন্যান্য দেশকে এ ওষুধ সরবরাহ করার ক্ষমতা ভারতের আছে কিনা- প্রশ্ন সেটিই।

ভারতের ওষুধ উৎপাদনকারী এসোসিয়েশনের কর্মকর্তা অশোক কুমার মদন অবশ্য এ প্রশ্নে আস্থার সঙ্গে ‘হ্যাঁ’- ই বলছেন।

বিবিসি’কে তিনি বলেন, “ভারত স্থানীয় এবং বিশ্ব বাজার দু’জায়গাতেই এ ওষুধ সরবরাহ করতে সক্ষম। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর বিষয়টি অবশ্যই আগে বিবেচনা করা হবে। তবে আমাদের এটি সরবরাহের সক্ষমতা আছে।”

ভারত চীনের কাছ থেকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন তৈরির উপাদান অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) আমদানি করে। চীন এখন এই উপাদান রপ্তানি অনেকখানি সীমিত করে ফেলেছে বলে যে খবর বেরিয়েছে তা অস্বীকার করেছেন অশোক কুমার মদন।

ভারতের প্রয়োজনীয় এপিআই এর ৭০ শতাংশই চীন থেকে আসে বলে মদন স্বীকার করেছেন। তবে বলেছেন, চীন থেকে সাগর এবং আকাশপথে এ উপাদান সরবরাহ চলছে।

হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কি কার্যকর?

অনেক ভাইরাস বিশেষজ্ঞ এবং রোগ বিশেষজ্ঞই সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে এত বেশি উৎসাহিত হওয়ার সময় এখনো আসেনি।

বিবিসি’র স্বাস্থ্য বিষয়ক এক সংবাদদাতা বলছেন, “ক্লোরকুইন ল্যাবরাটরির গবেষণায় করোনাভাইরাস রুখতে পেরেছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি কাজে আসার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।”

কিন্তু ওষুধটি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কোনো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি। রোগীর ক্ষেত্রে আসলেই ওষুধটি কিভাবে সাড়া দেয় সেটি দেখার জন্য এরকম পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং স্পেনে ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে।

কিন্তু তারপরও এ ওষুধ আসলেই কতটা সফল প্রমাণিত হবে তা নিয়ে অনেকেই এখনো সন্দিহান। কয়েকটি ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ ঠেকাতে এ ওষুধ কাজ করেছে জানা গেলেও যত ক্ষণ না কনট্রোলড ক্লিনিকাল ট্রায়াল হচ্ছে ততক্ষণ নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব না যে এ ওষুধ কতটা কার্যকর।

হাইড্রো অক্সি-ক্লোরো-কুইন গ্রুপের ওষুধের ধরণ ম্যালেরিয়ার ওষুধের ধরণের সঙ্গে মেলে। এ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকার কারণেই ‘নিরাপদ’ হিসেবে তা বিশেষজ্ঞদের কাছে গণ্য নয়। এ ওষুধ কার্যকরী ভেবে মানুষ তা নিজে নিজে সেবন করতে গিয়ে মর্মান্তিক পরিণতি ডেকে আনার ঘটনাও এরই মধ্যে ঘটেছে।

নাইজেরিয়ায় এ ওষুধ সেবনে ওভারডোজের কারণে মানুষের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কয়েকটি ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। ট্রাম্প অত্যুৎসাহী হয়ে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ওষুধটির যে অনুমোদন দিয়েছেন তার প্রভাবেই এমন ঘটনা ঘটছে বলে শোনা যাচ্ছে।