ময়লা ফেলার ব্যাগ মাথায় পরে রোগী দেখছেন ব্রিটিশ স্বাস্থ্যকর্মীরা

করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাবে যুক্তরাজ্যজুড়ে হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার শোচনীয় অবস্থা উঠে এসেছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের এক চিকিৎসকের বক্তব্যে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2020, 01:19 PM
Updated : 5 April 2020, 01:30 PM

করোনাভাইরাসে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় যাদের অবস্থা সংকটাপন্ন তাদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা (আইসিইউ) শয্যা বাড়াতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে হাসপাতালগুলো। কিন্তু তাদের অভিযোগ যথাযথ সাপোর্ট বা সুরক্ষা সরঞ্জাম তারা পাচ্ছেন না।

এই অভাবের মধ্যে ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করে যাওয়ার বাস্তব পরিস্থিতিই বিবিসি’র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন ওই চিকিৎসক।

ইংল্যান্ডের আরো কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী তাদের হাসপাতালগুলোতে সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাব নিয়ে অভিযোগ করলেও বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে চাননি।

শেষ পর্যন্ত বিবিসি’তে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলতে রাজি হন মিডল্যান্ডসের একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের চিকিৎসক ড. রবার্টস।

খাদের কিনারায় পৌঁছে যাওয়া একটি হাসপাতালের কথা বলেন তিনি। তার কথায়,হাসপাতালটির আইসিইউ কোভিড-১৯ রোগীতে ভরে গেছে।গুরুতর নয় এমন সব অপারেশন বন্ধ করা হয়েছে,এমনকি ক্যান্সার ক্লিনিকের কাজও বন্ধ করা হয়েছে।কারণ হাসপাতালে কর্মীর অভাব,সংকটময় রোগীর জন্য বিছানার অভাব,এন্টিবায়োটিক ও ভেন্টিলেটরেরও অভাব আছে।

এতসব অভাবের মধ্যে করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তাও কেউ জানেনা। ১৪ থেকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে রোগীর সংখ্যা চরমে পৌঁছবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে বাড়তি রোগীর চাপ হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা পোহাচ্ছেন এখন থেকেই।

সঙ্কটাপন্ন রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসকদেরকে প্রতিদিন ১৩ ঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে। ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে,পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) এর প্রকট অভাবের কারণে চিকিৎসকরা এখন ক্লিনিকের ময়লা ফেলার পলিথিন ব্যাগ,প্লাস্টিকের অ্যাপ্রন আর স্কি গগলস পরে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মানুষজনকে যেখানে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় দুই মিটার দূরে থাকার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে আসা সন্দেহজনক রোগীদের পরীক্ষা করতে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) কর্মীদেরকে ২০ সেন্টিমিটার দূরত্বে থেকে কাজ করতে হচ্ছে।

চিকিৎসক রবার্টস বলছেন, পরিস্থিতির ভয়াবহতা এবং জীবনে এর মারাত্মক প্রভাবের আশঙ্কা সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। আগামী দিনে আরো কী ঘটতে চলেছে সে আশঙ্কায় তার হাসপাতালের কয়েকটি বিভাগ এখন এতটাই ভীত-সন্ত্রস্ত যে তারা এখন নিজেরাই নিজেদের পিপিই তৈরি করতে শুরু করেছে।

তিনি বলেন, “বাস্তব চিন্তা থেকেই তারা এটা করছে। ইনটেনসিভ ট্রিটমেন্ট ইউনিট (আইটিইউ)-এ যেসব নার্স কাজ করছেন তাদের এটি (পিপিই) এখনই প্রয়োজন। তারা যে প্রক্রিয়ায় কাজ করছেন তাতে ভাইরাস অ্যারোসলের মতো ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে। তাদের বলা হচ্ছে খুব সাধারণ থিয়েটার হ্যাট পরতে যেটায় ছিদ্র আছে। এতে তারা কোনো সুরক্ষাই পাচ্ছে না।”

“এটি ঝুঁকিপূর্ণ।তাই কর্মীরা বিন ব্যাগ ও অ্যাপ্রন মাথায় পরে কাজ করছেন।

যুক্তরাজ্যের সরকার সুরক্ষা সরঞ্জাম বিতরণ নিয়ে সমস্যার কথা স্বীকার করেছে। তবে এখন ন্যাশনাল সাপ্লাই টিমের সঙ্গে সশস্ত্রবাহিনী যোগ দিয়ে দিন-রাত এসব সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে বলে সরকার আশ্বাস্ত করেছে।

১ এপ্রিলে ১০ লাখের বেশি শ্বাসযন্ত্র রক্ষাকারী মাস্ক সরবরাহ হওয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা এনএইচএস । কিন্তু তার চেয়েও যেটি বেশি প্রয়োজন সেই মাথার সুরক্ষা উপকরণ ও গাউনের বিষয়টির কোনো উল্লেখ সেখানে নেই।

চিকিৎসক রবার্টস যেখানে কাজ করছেন সেই হাসপাতালে কোনো সরকারি সহায়তা পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।